এ যেন ভুয়ো চিকিৎসকের আঁতুড়ঘর!
কেউ বিকম পাশ করে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট হিসেবে দীর্ঘদিন রোগী দেখেছেন কলকাতার নামী প্রতিষ্ঠানে। কেউ ইউনানির জাল সার্টিফিকেট নিয়ে কলকাতারই একটি বেসরকারি হাসপাতালে অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ হিসেবে মোটা ভিজিট নিয়েছেন। কেউ কেউ নিজের পরিচয় দিয়েছেন এমডি হিসেবে।
এক-দু’জন নয়। গত পনেরো দিনে ধরা পড়েছেন অন্তত ছ’জন ভুয়ো চিকিৎসক। গত তিন দিনে হাওড়াতেই ধরা পড়েছেন দু’জন। সোমবার হাওড়ার বাউরিয়ায় সিআইডি-র জালে পড়েছেন রমাশঙ্কর সিংহ নামে এক ভুয়ো চিকিৎসক।
সিআইডি-র অফিসার বলছেন, ‘‘রোজই নতুন অভিযোগ পাচ্ছি। সংখ্যাটা কত হবে এখনই বলা যাবে না।’’ নবান্নে জমা দেওয়া প্রাথমিক রিপোর্টে সিআইডি এগারো জন ভুয়ো চিকিৎসকের নাম জানিয়েছে। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি নির্মল মাজির আশঙ্কা, সংখ্যাটা সাড়ে পাঁচশো ছাড়াবে। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘সাতটি সংস্থা বিভিন্ন পেশার লোকজনকে জাল শংসাপত্র দিচ্ছে।’’ এঁদের কেউ কেউ নামী প্রতিষ্ঠানে কুড়ি বছর ধরে রোগী দেখেছেন। এন্ডোস্কোপিও করেছেন বলে কাউন্সিল সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: সরকারি ডাক্তারও জাল!
কিন্তু কোনও প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা করার সময়ে ও প্রেসক্রিপশন লেখার সময়ে তো চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিতে হয়। সেটা কোথা থেকে পাওয়া যাচ্ছে? কাউন্সিল সূত্রের খবর, ওই রেজিস্ট্রেশন নম্বরও ভুয়ো। কেউ কেউ মৃত চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করেছেন।
নির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে সিআইডি মাস দুই আগে উত্তরবঙ্গের চোপড়া থেকে এক ভুয়ো চিকিৎসককে ধরে। তাকে জেরা করে বেরোয় আরও নাম। কাউন্সিল এত দিন কী করছিল? নির্মলবাবুর দাবি়, ‘‘অভিযোগ পাচ্ছিলাম। ২০১৬ সালের নভেম্বরে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিঠি দিয়ে ডাক্তারদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর, ডিগ্রি, ডিপ্লোমা যাচাই করার আর্জি জানিয়েছিলাম। কিন্তু বেশ কিছু হাসপাতাল জবাবই দেয়নি।’’ বেলভিউ হাসপাতালের নাম উল্লেখ করে নির্মলবাবুর অভিযোগ, ‘‘তিন বার ওদের চিঠি দিয়েছি।’’ ওখানেই কর্মরত ছিলেন ধরা পড়া ভুয়ো চিকিৎসক নরেন পাণ্ডে। বেলভিউ-এর সিইও প্রদীপ টন্ডনের অবশ্য দাবি, ‘‘কোনও চিঠিই পাইনি।’’
কাউন্সিলের এক প্রাক্তন কর্তার অভিযোগ, চিকিৎসকদের জীবনপঞ্জী তলব করলেই সত্যিটা বেরোত। সিআইডি তদন্ত শুরু হতেই অনেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন। কাউন্সিল নিজে উদ্যোগী হলে এমনটা হতো না।
নির্মলবাবুর দাবি, তাঁরা হিসেব করে দেখেছেন এ রাজ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচশো ‘ভুয়ো’ চিকিৎসক রয়েছে। কাউন্সিলের তরফে সেই তালিকা সিআইডি-র সদর দফতর ভবানী ভবনে পাঠানো হয়েছে। তিনটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বিধাননগর পূর্ব এবং দক্ষিণ থানাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy