শুরু হচ্ছে। কিন্তু তার শেষটা ঠিকমতো হচ্ছে না। শুরুতে ‘জঙ্গি মনোভাব’ দেখালেও পরে তা ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে। একটা শেষ না করেই ঝাঁপিয়ে পড়তে হচ্ছে অন্যটায়। এ হেন পরিস্থিতিতে সিপিএম রাজ্য সম্মেলনে অধিকাংশ প্রতিনিধিই জোর দিলেন ‘নাছোড়বান্দা’ আন্দোলনের উপর, যা খোলাখুলি বলে দিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও।
সোমবার মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগেই সেলিমের পেশ করা প্রতিবেদনের উপর জেলার প্রতিনিধিদের আলোচনা শেষ হয়। সেলিম সেই আলোচনার নির্যাস সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘প্রতিনিধিদের আলোচনায় নাছোড়বান্দা মনোভাবের কথা উঠে এসেছে।’’ এ প্রসঙ্গে কোনও আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেননি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। তবে দলের নেতারা একান্ত আলোচনায় মানছেন, গত কয়েক বছরে বেশ কিছু ঘটনায় তাঁদের গণসংগঠনগুলি আন্দোলনের তেজ দেখালেও তা ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত হয়নি। সেই আন্দোলন শুরু হলেও যে শেষ হয়নি, তা-ও মানছেন সিপিএম নেতারা।
আরও পড়ুন:
হাওড়ার আমতার ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যুর তদন্তের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল সিপিএমের ছাত্র-যুব সংগঠন। পাঁচলার ধুন্ধুমার কর্মসূচির পরে গ্রেফতার হয়ে বেশ কয়েক দিন জেল খাটতে হয়েছিল সিপিএমের যুবনেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে। কিন্তু সেই আন্দোলন সেই অর্থে ‘পূর্ণতা’ পায়নি। আবার আরজি কর আন্দোলনেও কখনও ঝান্ডা নিয়ে, কখনও ঝান্ডা ছেড়ে যুক্ত ছিল বামেরা। সেই আন্দোলনও এখন স্তিমিত। যদিও সম্মেলনে স্থানীয় সমস্যা নিয়ে দাবি-আদায়যোগ্য আন্দোলনের উল্লেখ করেছেন প্রতিনিধিরা।
সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সেলিম বলেছেন, ‘‘আমরা ঠিক করেছি প্রোজেক্ট বেস্ড মিশন মোডে আন্দোলনকে নিয়ে যাব।’’ প্রসঙ্গত, ‘মিশন মোড’-এর অর্থ, কোনও কিছু শুরু করলে তার শেষ পর্যন্ত যাওয়া। সেই প্রশ্নেই ‘দুর্বলতা’ কাটানোর কথা প্রকারান্তরে উল্লেখ করেছেন সেলিম। দলের কোন স্তর কী কাজ করবে, তা-ও রাজ্য সম্মেলনের বিশেষ অধিবেশন থেকে চূড়ান্ত করবে সিপিএম।
এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে, গত কয়েক বছর ধরেই বঙ্গ রাজনীতি ধর্মীয় মেরুকরণের চক্রব্যূহে ঢুকে পড়েছে। যে ব্যূহের কারণে সিপিএমের ভোটেও ধারাবাহিক খরা চলছে। বামেরা অনেক দিন ধরেই চাইছে, রুটি-রুজির লড়াই দিয়ে মেরুকরণ ভাঙতে। কিন্তু তা যে সম্ভব হচ্ছে না, গত কয়েকটি ভোটের ফলাফলে তা-ও স্পষ্ট। সোমবার সেলিম বলেন, ‘‘আমরা বিভাজনের রাজনীতি রুখতে নতুন পথে এগোব। আগে কোথাও হিংসা হলে আমরা শান্তিমিছিল করতাম। কিন্তু এ বার থেকে হিংসা তৈরির পরিস্থিতি হলেই রাস্তায় নামার কর্মসূচি রূপায়িত হবে।’’ পাশাপাশি, সংগঠনকে ‘আন্দোলনমুখী’ করাও যে রাজ্য সিপিএমের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ, তা-ও মেনে নিচ্ছেন সেলিম।