—প্রতীকী ছবি।
‘ভূতুড়ে ভোটার’ বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না পঞ্চায়েত ভোটের। এ বারে কেশপুর।
পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকা থেকে অভিযোগ উঠেছে, কোথাও যত জন ভোট দিয়েছেন, গণনার সময় ব্যালট বাক্সে ততগুলি ব্যালট পেপারই মেলেনি। আবার কোথাও যত ভোট পড়েছে, সেই বুথে প্রার্থীদের মোট প্রাপ্ত ভোট তার চেয়ে বেশি! বিরোধীদের নালিশ, পঞ্চায়েত ভোটে বুথে বুথে যে ‘ভূতে’ ভোট দিয়েছে, গণনাতেও নজিরবিহীন কারচুপি হয়েছে, এ সব তারই প্রমাণ। বিরোধীদের দাবি, নানা সূত্রে পাওয়া পঞ্চায়েত ভোটের গণনার খুঁটিনাটি তথ্য কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে স্পষ্ট হয়েছে যে, শুধু বুথে নয়, ‘ভূতে’র তাণ্ডব হয়েছে গণনাকেন্দ্রেও। যেমন, গ্রাম পঞ্চায়েতে একটি আসনে ২১ ভোটে জিতেছে তৃণমূল। তারা পেয়েছে ২৩০টি ভোট, কংগ্রেস ২০৯টি ভোট। ওই বুথে ভোটার ছিলেন ১,০১৭ জন। ভোট দেন ৮০৭ জন। গণনার সময়ে বাতিল হয় ৩৪২টি ভোট। অর্থাৎ প্রদত্ত ভোটের প্রায় ৪২ শতাংশ বাতিল হয়েছে। দুই প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট এবং বাতিল ভোট মিলিয়ে হচ্ছে ৭৮১। বাকি ২৬টি ব্যালটের হদিসই মেলেনি। আর একটি বুথে আবার গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূল পেয়েছে ৬৪৪টি ভোট। প্রতিপক্ষ নির্দল পেয়েছেন ৩৩০টি ভোট। এখানে বাতিল হয়েছে ৬৭টি ভোট। ভোট দিয়েছিলেন ১,০৬৪ জন। এখানেও ২৬টি ব্যালট পাওয়া যায়নি।
সূত্রের দাবি, অন্য একটি বুথে আবার প্রদত্ত ভোটের থেকে গোনা ভোটের সংখ্যা বেশি। এখানে তৃণমূল পেয়েছে ৯৬৩টি ভোট। সিপিএম ১০৪টি। বাতিল হয়েছে ৩৩টি ভোট। এখানে ভোট দিয়েছিলেন ১,০৯৭ জন। অথচ, বাতিল হওয়া আর দুই প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট মিলিয়ে সংখ্যাটা ১,১০০। অর্থাৎ, তিনটি ভোট বেশি। আর একটি বুথেও ভোট দিয়েছিলেন ১,০৩৪ জন। বাতিল হয় ৪৪টি ভোট। এখানে গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল পেয়েছে ৬০০টি। দুই নির্দলের এক জন পেয়েছে ২১টি, আর এক জন ৩৭০টি। বাতিল ভোট আর প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট মেলালে হচ্ছে ১,০৩৫। অর্থাৎ, একটি ভোট বেশি।
কেশপুরের সিপিএম নেতা নিয়ামত হোসেনের নালিশ, ‘‘গণনায় কার্যত চুরি-ডাকাতি হয়েছে।’’ বিজেপি নেতা তন্ময় ঘোষও বলছেন, ‘‘প্রদত্ত ভোটের চেয়ে প্রার্থীদের মোট প্রাপ্ত ভোট বেশি! ভাবা যায়!’’ কেশপুরের তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদে নবনির্বাচিত মহম্মদ রফিকের অবশ্য দাবি, ‘‘অবাধ, নির্বাচন হয়েছে। গণনাও খুব সুন্দর ভাবে হয়েছে।’’
এই গরমিলের ব্যাখ্যা কী?
কেশপুরের এক প্রশাসনিক আধিকারিকের মতে, এমনটা হতেই পারে, কেউ ব্যালট পেপার নিয়ে, ছাপ মেরে আর ব্যালট বাক্সে ঢোকাননি। জামা বা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে নিয়েছেন। আবার এমনটাও হতে পারে, গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্যালট পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা জেলা পরিষদ আসনের জন্য নির্দিষ্ট ব্যালট বাক্সে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
গরমিলের ছবি কাঁথিতেও। কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের আউরাই গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫৫ নম্বর বুথে (কলাগাছিয়া) ৪০৭ জন এবং ১৫৬ নম্বর বুথে (উমাপতিবাড় শিশুশিক্ষা কেন্দ্র) ৭১৮ জন ভোটার রয়েছেন। সব মিলিয়ে ভোটার ১১২২ জন। তবে, কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির তরফে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য তুলে জানানো হয়েছে, ওই দুই বুথে তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছেন ১,৫০২টি ভোট। আর বিজেপি পেয়েছে ১৭৪টি ভোট। অর্থাৎ ভোট পড়েছে ১,৬৭৬টি, যা মোট ভোটারের তুলনায় ৫৫৪টি বেশি। মামলার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যদিও প্রশাসনের দাবি, কিছু ভুল হয়েছিল। পরে ওয়েবসাইটে সেটা সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে।
(সহ-প্রতিবেদন: কেশব মান্না)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy