তৃণমূলের সুরও চড়া হয়ে গিয়েছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এক মাসও কাটেনি। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর ডাকা বৈঠকে মধ্যমণি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং বেশ কয়েকটি বিজেপি বিরোধী দলের শীর্ষনেতৃত্বকে নিয়ে আয়োজিত সে বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিদ্ধান্তও মসৃণ ভাবেই গৃহীত হয়েছিল। আচমকাই ছন্দপতন। তৃণমূলের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার জিএসটি ইস্যুতে সংসদ চত্বরে বিক্ষোভ দেখাল ৮টি বিরোধী দল। কিন্তু সে কর্মসূচিতে কংগ্রেসকে ডাকা হল না। উল্টে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র সঙ্গে কংগ্রেস হাত মিলিয়ে চলছে বলে দাবি করলেন তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র তথা সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। আর লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পাল্টা তোপ দাগলেন, ‘‘ভারতে বিজেপির সবচেয়ে বড় দালাল তৃণমূল!’’
সোমেন মিত্রের প্রয়াণের পর পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদে অধীরকেই বসিয়েছেন সনিয়া। তাঁর সেই সিদ্ধান্তই তৃণমূল এবং কংগ্রেসের দূরত্ব অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে উভয় শিবিরেরই একাংশের দাবি।
মমতা-অধীর তিক্ততার ইতিহাস প্রাচীন। মমতা কংগ্রেসে থাকাকালীনই তার শুরু। তৃণমূল গঠিত হওয়ার পরে তা আরও বাড়ে। ক্রমশ বঙ্গ কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় তৃণমূল-বিরোধী মুখ এবং মমতার কট্টর সমালোচক হিসেবে অধীর পরিচিতি পেয়ে যান। অধীরের জেলা মুর্শিদাবাদে তাঁকে এবং কংগ্রেসকে কোণঠাসা করতে তৃণমূলও সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। সেই অধীরেরই নেতৃত্বে আগামী বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের ভূমিকা কেমন হতে চলেছে, তা তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে সহজেই অনুমেয়। ঘটনাচক্রে, এ সবের মধ্যেই তৃণমূলের সুরও চড়া হয়ে গিয়েছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। শুধু বাংলায় নয়, দিল্লির রাজনীতিতেও তিক্ততা বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে এদিন।
তৃণমূলের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার জিএসটি ইস্যুতে সংসদ চত্বরে বিক্ষোভ ৮টি বিরোধী দলের। —নিজস্ব চিত্র।
জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্যগুলির প্রাপ্য টাকা আটকে থাকার প্রতিবাদে মূলত তৃণমূলেরই উদ্যোগে এদিন সংসদ চত্বরে গাঁধীমূর্তির পাদদেশে ধর্না দিয়েছে এসপি, টিআরএস, ডিএমকে, শিবসেনা, আরজেডি, এনসিপি। পোস্টার এবং খালি থালা হাতে নিয়ে ওই বিক্ষোভে কিন্তু কংগ্রেসকে ডাকা হয়নি। রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক প্রথমে জানান, কংগ্রেসকে নিয়ে বিভিন্ন দলের কিছু সমস্যা রয়েছে। তাই তাদের ডাকা হয়নি। উদাহরণ হিসেবে তিনি মনে করিয়ে দেন, গত ২৬ অগস্ট সনিয়ার ডাকা বৈঠকে বিভিন্ন অ-বিজেপি দলকে ডাকা হয়নি। পাশাপাশিই মন্তব্য করেন, কংগ্রেস ‘বড়দা’র মতো আচরণ করবে। আর অন্যান্য দল সেগুলো দিনের পর দিন মেনে নেবে, সেটা সম্ভব নয়! তার পরে ডেরেক আরও স্পষ্ট ভাবে জানান, কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে লড়তে তাঁদেরও যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে।
আরও পড়ুন: ভাবনার রং গেরুয়া করতে ‘বাঁকা’ পথ?
আপত্তি কোথায়? ডেরেক বলেন, ‘‘কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করবে, বিজেপি-র সুবিধা করে দেবে আর আশা করবে সংসদে আমরা কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব? এটা হতে পারে না।’’ শুধু এ দিনের কর্মসূচিতে নয়, আগামী দিনেও জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে চলার ইচ্ছা যে তৃণমূলের নেই, সে ইঙ্গিতও ডেরেক দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সংসদ চলাকালীন কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল নিরাপদ দূরত্ব বহাল রেখে চলবে।’’ অর্থাৎ, কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও রকম কক্ষ সমণ্বয়ও থাকবে না। ডেরেক জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত তৃণমূলের সংসদীয় দলের নয়। সর্বোচ্চ নেতৃত্বের।
আরও পড়ুন: ছটপুজো নয় সরোবরে, ফিরহাদের গলায় ধর্মীয় আবেগের সুর, তোপ বিরোধীদের
প্রত্যাশিত ভাবেই কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে কংগ্রেসের তরফে। অধীর এ দিন আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেছেন, ‘‘বিজেপি-র দালালিটা তৃণমূল করছে। রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন হল। কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল সে নির্বাচনে বিজেপি-র মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই করল। তখন তৃণমূল বলল, আমরা নির্বাচনে নেই।’’ অধীর আরও মনে করিয়ে দিয়েছেন, নাগরিকত্ব আইন সংসদে পাশ হওয়ার সময়েও তৃণমূল ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি। ডেরেকের নামোচ্চারণ না করলেও অধীর বলেছেন, ‘‘যে পণ্ডিত ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে বিজেপি-র সঙ্গে হাত মেলানোর অভিযোগ তুলছেন, তাঁকে বলব আত্মসমীক্ষা করতে। যে বিজেপি-কে তৃণমূল আজ বাংলায় ভয় পাচ্ছে, যে বিজেপি-র জন্য তৃণমূলের দুঃস্বপ্ন বেড়ে যাচ্ছে, সেই বিজেপি-কে বাংলার মাটিতে আনল কে? কংগ্রেস? না তৃণমূল?’’
বস্তুত, জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়ার পরিকল্পনাকে এ দিন ‘অবাস্তব’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন অধীর। সে প্রসঙ্গে সরাসরি মমতাকেও আক্রমণ করে তিনি বলেছেন, ‘‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আপনি জিএসটি-কে কেন্দ্র করে কয়েকটা রাজ্যের আঞ্চলিক দলকে নিয়ে একটা প্রতিবাদ করলেন। তার মানে এটা নয় যে, তারা আপনাকে সর্বভারতীয় নেত্রী হিসেবে মেনে নিল। ভারতের সব আঞ্চলিক দল জানে, কংগ্রেসকে ছাড়া বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা দুঃস্বপ্ন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy