পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে দেদার টাকা খরচ করা নিয়ে বিধানসভায় বিরোধীদের তোপের মুখে পড়ল রাজ্য । উত্তর এড়িয়ে গেলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
বুধবার বিধানসভায় ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন বিল ২০১৫’ পেশ করেন অমিতবাবু। এই বিল নিয়ে আলোচনার সময়েই মেলা-খেলা-উৎসবের মতো বিভিন্ন কাজে কী ভাবে দেদার খরচ করেছে সরকার, তা নিয়ে সরব হন বিরোধী দলের বিধায়কেরা। অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন বিলটি ‘গোঁজামিলে ভরা’ বলে দাবি করে কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা বলেন, ‘‘সরকার পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দ টাকা খরচ করতে পারছে না। অন্য দিকে পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতের খরচ বাড়িয়েই চলেছে। মেলা, উৎসব আর ক্লাবকে অনুদান দেওয়ার টাকা বেড়ে যাচ্ছে।’’ সুখবিলাসবাবুর প্রশ্ন, সরকারি হিসেবই বলছে, চলতি আর্থিক বছরে আয় হবে খরচের অর্ধেক। কিন্তু যেখানে নতুন শিল্পের দেখা নেই, অন্য কোনও আয়ের উৎসও নেই, সেখানে এই টাকাটাই বা আসবে কোথা থেকে? তিনি বলেন, ‘‘ক্লাবকে টাকা দিলে খেলার উন্নয়ন হবে বলে দাবি করা হলেও বাস্তবে তা হয়নি। শুধু দুর্গাপুজো আর মদ খাওয়ার জন্য ক্লাবগুলিকে টাকা দেওয়া হয়েছে।’’ প্রায় একই সুরে সরকারকে বিঁধছে অন্য বিরোধীরাও।
বিলের সমর্থনে বলতে উঠে বিরোধীদের তোলা সেই সব অভিযোগের কোনও জবাবই দেননি অর্থমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘আমরা ঋণের পাপচক্রে পড়ে রয়েছি। তা সত্ত্বেও এগিয়ে চলেছি।’’ অর্থমন্ত্রীর হয়ে ব্যাট ধরে তৃণমূল বিধায়ক পরশ দত্ত দাবি করেন, ‘‘মেলা-খেলারও প্রয়োজন আছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য এ সবের প্রয়োজন। বাম আমলে সরকারকে এ সব বোঝানো যায়নি।’’ পরশ দত্তের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে সিপিএমের আনিসুর রহমান আবার বলেন, ‘‘আমাদের সময়েও মেলা হত। বিপণন হত। কিন্তু তার একটা নিয়ম ছিল। এখন তো যথেচ্ছ টাকা খরচ হচ্ছে। তার কোনও নিয়মনীতি নেই।’’
আনিসুর অভিযোগ করেন, ‘‘কেন্দ্রের বাজেটের আগেই রাজ্যের অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করেছিলেন। তখন তিনি কেন্দ্রের কাছ থেকে কত টাকা আসবে, তা ধরে নিয়ে বাজেট পেশ করেন। কিন্তু কেন্দ্রের বাজেট পেশ হওয়ার পরে পরিসংখ্যান কী দাঁড়াল, তা নিয়ে বিলে কিছু বলা নেই।’’ পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রাক্তন মন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘‘বাজেটে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ১৬ লক্ষ কর্মসংস্থানের দাবি করেছিলেন। কিন্তু সেই কর্মসংস্থান কোথা থেকে হবে, তার কোনও উল্লেখ নেই।’’ অমিতবাবুর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘জঙ্গলমহল, বিআরজিএফের মতো যে সব খাতে কেন্দ্র টাকা বরাদ্দ করেনি, সেখানে রাজ্য সরকার নিজে টাকা দিয়ে প্রকল্প চালু রাখবে।’’
চার বছরে নতুন সরকারের টাকা ধার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের প্রশ্ন ছিল, ‘‘বামফ্রন্ট ৩৪ বছরে প্রায় দু’লক্ষ কোটি টাকা ঋণ করেছিল। কিন্তু এই সরকার চার বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা ঋণ করেছে। তা হলে এই অর্থমন্ত্রীর কৃতিত্ব কোথায়?’’ জবাবে অমিতবাবুর দাবি, ‘‘বাম আমলের ঋণ শোধ করার জন্যই আমাকে এত টাকা ধার করতে হয়েছে।’’ তাঁর বক্তব্য, সামাজিক পরিকাঠামো থেকে গ্রামীণ উন্নয়ন— সব ক্ষেত্রেই বাম আমলের থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার খরচ বাড়িয়েছে ৩০০ থেকে ৬০০ শতাংশ পর্যন্ত। আগের থেকে সরকারের আয়ও কয়েক গুণ বেড়েছে বলে দাবি করেন অমিতবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy