পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন ঘিরে বাড়ছে অশান্তি এবং নানা অভিযোগ। প্রতীকী ছবি।
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন ঘিরে অশান্তি এবং নানা অভিযোগ বাড়ছে। আদালতে মামলা চলছে মনোনয়নের সময়সীমা বাড়ানোর আর্জির প্রেক্ষিতে। তারই পাশাপাশি রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারির সুর চড়াচ্ছে বিরোধীরা। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য পাল্টা বলছে, পঞ্চায়েতে সর্বত্র প্রার্থী দেওয়ার মতো সাংগঠনিক শক্তি বিরোধীদের নেই। সেই ‘দুর্বলতা’ আড়াল করতেই নানা কথা বলে তারা জলঘোলা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মনোনয়ন ঘিরে বাধা দেওয়া এবং অশান্তির অভিযোগ মোকাবিলা করতে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সেই সব সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। যেমন, মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে গেলে নির্দিষ্ট কারণ লিখিত ভাবে জানানোর কথা বলেছে কমিশন। তাদের যুক্তি, জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহার ঠেকাতেই এমন পদক্ষেপ। কিন্তু বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সোমবার বলেছেন, ‘‘আগে তো মনোনয়ন জমা পড়বে, তার পরে প্রত্যাহার! বাড়ি বাড়ি গিয়ে মনোনয়ন যাতে জমা না পড়ে, বা প্রত্যাহার করা হয়, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে পুলিশ-কর্তাদের নির্দেশে।’’ তাঁর অভিযোগ, ডায়মন্ড হারবার এবং বসিরহাট পুলিশ জেলার এসপি-রা শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের বলে দিচ্ছেন, কী ভাবে এই কাজ করতে হবে। বলে দেওয়া হচ্ছে, বিরোধীদের রাতে মারতে হবে। সেই জন্যই সন্দেশখালির ন্যাজাটে রাতের অন্ধকারে বিজেপির কার্যালয় পোড়ানো হয়েছে বলে বিরোধী দলনেতার অভিযোগ। উত্তর ২৪ পরগনার একই অঞ্চলে মিনাখাঁয় এ দিন মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে সিপিএম নেতা-নেত্রীরা আক্রান্ত হয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেছেন, ‘‘প্রার্থী নেই। ভোটের ফল কী হবে বুঝতে পেরে গিয়েছেন শুভেন্দু। তাই এখন মিথ্যা অভিযোগ করে, ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করে অফিসারদের ভয় দেখাতে চাইছেন! তাতে খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না।’’ শুভেন্দু যদিও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘‘প্রধান বিচারপতির নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। আমরা ছাড়ব না! গণতন্ত্র রক্ষা করার লড়াই এটা।’’
বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন-পর্বে শাসক দলের ‘সন্ত্রাস’কে হাতিয়ার করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। টুইটারে তাঁর মন্তব্য, ‘‘বাংলা জ্বলছে। বাংলার অস্মিতা, বাংলার পরিচয়, বাংলার গর্ব, বাংলার নামকে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাংলায় হিংসা, নৈরাজ্য, দুর্নীতি এটাই এখন নতুন সময়ের স্বাভাবিক ঘটনা।’’ বাংলায় বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়ও প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘সুষ্ঠু নির্বাচন করতে মুখ্যমন্ত্রীর এত ভয় কেন?’’ মনোনয়নে বাধা, শাসক দলের সন্ত্রাস-সহ একাধিক অভিযোগে এ দিন কমিশনের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিজেপির উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার যুব মোর্চা। পাশাপাশি, বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়া ও দলের আইনজীবী শাখার আহ্বায়ক লোকনাথ চট্টোপাধ্যায় কমিশনে গিয়ে আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’ প্রকল্প বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
সুষ্ঠু ভোট এবং মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে না পারলে কমিশনের দফতরে প্রবল বিক্ষোভ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সিপিএমও। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল ভেবেছিল, একটু হইচই করলেই বিরোধীরা পালিয়া যাবে। কিন্তু সেটা এ বার পারবে না, বাধা দিলে বাধবে লড়াই। শাসক দলের নির্দেশে প্রশাসনিক দফতরে যদি মনোনয়ন তোলার ব্যবস্থা করা না হয়, তা হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অত আসন জয়ও হবে না। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মী, প্রার্থী এবং মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব কমিশনকে নিতে হবে। সেটা না হলে কমিশনের দফতরকেও ছেড়ে দেওয়া হবে না!’’
গোলমাল এড়াতে বিডিও দফতরের এক কিলোমিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করার কথা বলেছে কমিশন। কিন্তু বহরমপুরে এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর প্রশ্ন, ‘‘এক কিলোমিটারের বাইরে কী হবে? এগুলো ছেলের হাতে মোয়া দিয়ে ভোলানোর মতো ব্যাপার! প্রশাসন নিরপেক্ষ হলে ১৪৪ ধারা লাগবে না। আর প্রশাসন যদি মনে করে শাসক দলের দালালি করবে, তা হলে এক হাজার ৪৪ ধারা করেও লাভ হবে না!’’
তৃণমূলের নেতা তাপস রায় অবশ্য ফের দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেছেন, কেউ বাধা পেলে তাঁদের জানাতে পারেন। কিন্তু কেন বিরোধীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য শাসক দলকে জানাতে হবে? তাপসের বক্তব্য, ‘‘গণতন্ত্র রক্ষায় শাসক দলের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া, যাঁরা মনোনয়নে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন, তাঁদের এই ৬০-৬৫ হাজার আসনে প্রার্থী দেওয়ার মতো সমর্থন বা সাংগঠনিক শক্তি নেই। তাই বাধা দেওয়ার অভিযোগ করে অজুহাত খাড়া করতে চাইছেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy