নেতাজি ইন্ডোরে আয়োজিত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র।
গত দু'বছরের মতো ৫০ হাজার টাকা? নাকি পরের বছর পঞ্চায়েত ভোটের দিকে তাকিয়ে তা বাড়ানো হবে? সোমবার বিকেলে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, এ বার ৪৩ হাজার পুজো কমিটিকে ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ বিলেও মিলবে ছাড়। কলকাতা এবং রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষৎকে অনুরোধ করা হয়েছে, পুজো কমিটিগুলির বিদ্যুৎ বিলে যেন ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়। মোট অনুদানের পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ২৫৮ কোটিতে। অথচ মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের গড়িমসি নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলি।
রাজ্য সরকার যে আবারও তাদের আর্থিক অনুদান দেবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিল পুজো কমিটিগুলি। কিন্তু তা যে ১০ হাজার করে বাড়তে চলেছে, তা টের পাননি কোনও প্রশাসনিক আধিকারিক। আর সোমবার নেতাজি ইন্ডোরের সভায় মুখ্যমন্ত্রী ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান ঘোষণা করতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলি। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ৩১ শতাংশ ডিএ বকেয়া পড়ে রয়েছে। এ কারণে আগে থেকেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল সরকারি কর্মচারী মহলে। আর সোমবারের ঘোষণা সেই ক্ষোভের আগুনে ঘি দিয়েছে।
সরকারি কর্মচারীদের বামপন্থী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটি আগামী ৩০ অগস্ট দুপুরে দু’ঘন্টা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করে প্রতিবাদ জানাবেন তাঁরা। কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিজয়শঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘সরকার তো উৎসব, মোচ্ছব, ফূর্তি আর কার্নিভাল করেই যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই সিদ্ধান্ত সরকারি কর্মচারী-বিরোধী সিদ্ধান্ত বলেই আমরা মনে করছি। আজ থেকেই আমরা বড়সড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’ তৃণমূল সমর্থিত সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা মনোজ চক্রবর্তীও সরকারি কর্মচারীদের দাবির পক্ষেই মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সরকা্রের প্রতিটি ইস্যুই সদর্থক। তবে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী হিসেবে সরকারের সিদ্ধান্ত বোধগম্য হচ্ছে না যে, কেন একটা গুরুত্বপূর্ণ দিককে সম্পূর্ণ ভাবে অনিচ্ছুকতায় মুড়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ মনোজ আরও বলেন, ‘‘যে সরকারি কর্মচারিদের হাত ধরে রাজ্যের উন্নয়ন হচ্ছে, তাঁদের বিষয়েও রাজ্য সরকারের ভাবা উচিত।’’
রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের ডিএ না দিয়ে পুজো কমিটিগুলিকে টাকা দেওয়া প্রসঙ্গে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘রোমান সাম্রাজ্য থেকে এখন পর্যন্ত স্বৈরতান্ত্রিকরা প্রজাদের আমোদ, নেশায় ডুবিয়ে রাখেন। এখানেও তাই হচ্ছে। এত লুঠ, এত বেকরি থেকে চোখ সরাতেই এই আয়োজন। সেই সঙ্গে ধর্মীয় উৎসবকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি। বাংলায় একটা ক্লাব সংস্কৃতি ছিল। সকলে স্বনির্ভর ছিল। সর্বজনীন পুজোকে সরকার-নির্ভর করে দেওয়ার চেষ্টা। এত খরচ করা হচ্ছে অথচ সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য ডিএ দেওয়া হচ্ছে না।’’ মহার্ঘ ভাতার প্রসঙ্গ টেনে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য ডিএ নেই, রাজ্যে উন্নয়ন নেই। হাসপাতালে ওষুধ কেনার টাকা নেই। এই পরিস্থিতিতে ক্লাবকর্তারা এই অনুদান নিয়ে উদ্বাহু নৃত্য করলে বাড়ির লোকেরাই নিন্দা করবে। আর কোনও ক্লাব তৃণমূল সরকারকে জনরোষ থেকে রক্ষা করতে পারবে না।’’
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে ৩৪ শতাংশ হাতে ডিএ পান। ডিএ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারি কর্মচারিরা ৩১ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছেন। এমন পরিসংখ্যান দিয়েই বিরোধী শিবির মুখ্যমন্ত্রীর অনুদানের সিদ্ধান্তকে কাঠগড়ায় তুলছে। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকার দেনায় জর্জরিত। ৬ লক্ষ কোটি টাকা দেনা। আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধিতে সরকারি কর্মচারীরা হাঁটু গেড়ে সরকারের কাছে নিজেদের দাবি জানাচ্ছেন। অন্য দিকে রাজ্য থেকে পুঁজির পলায়ন ঘটছে। যুবক-যুবতীরা পরিযায়ী শ্রমিকের মতো রাজ্য ছাড়ছেন কর্মসংস্থানের অভাবে। খেলা-মেলা-উৎসবের বিরুদ্ধে আমরা নই। কিন্তু এটা কি বাহুল্য নয়? সাড়ে পাঁচ লক্ষ সরকারি পদ শূন্য। ব্যথর্তা ও দুর্নীতির যে কালো ছায়া পশ্চিমবঙ্গকে ক্রমশ গ্রাস করছে, সেই সব দিক থেকে নজর ঘোরাতেই মুখ্যমন্ত্রী এ সব নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে বাঁচতে চাইছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy