অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় —ফাইল চিত্র।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রীকে কিসের ভিত্তিতে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, সোমবারই সেই প্রশ্ন তুলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। জানিয়েছিল, গা-ঢাকা দেওয়ার আশঙ্কা না থাকলে, বিদেশে যাওয়ার অধিকার অভিযুক্তের আছে। বিশেষত চিকিৎসাজনিত কারণে। কিন্তু তা বলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বিদেশযাত্রা নিয়ে কোনও চূড়ান্ত নির্দেশ দেয়নি সর্বোচ্চ আদালত। নিষ্পত্তি হয়নি ওই সংক্রান্ত আবেদনের। এই পরিস্থিতিতে বুধবার রাতে অভিষেক সস্ত্রীক বিদেশ রওনা হওয়ায় বিভিন্ন মহলে উঠতে শুরু করা প্রশ্নের উত্তরে তাঁর আইনজীবীর দাবি, প্রয়োজন না থাকলেও সংশ্লিষ্ট সমস্ত কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছেন অভিষেক। যদিও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি।
কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত ও মামলা চলাকালীন অভিষেকের বিদেশ চলে যাওয়া প্রসঙ্গে অভিষেকের আইনজীবী ব্যাখ্যা দিলেও, রাজনীতির তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। এই ঘটনায় কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দলের ‘বোঝাপড়া’ বা ‘সেটিং’-এর তত্ত্ব ফের সামনে এনেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। বিজেপির পাল্টা দাবি, কেউ পালিয়ে বাঁচতে পারবে না। তদন্ত হচ্ছে আইন মেনে। আর তৃণমূলের বক্তব্য, আইনে বাধা নেই বলেই দেশ ছাড়তে পেরেছেন অভিষেক। তা সত্ত্বেও এই কুরুচিকর প্রচার চালাচ্ছেন বিরোধীরা।
বৃহস্পতিবার অভিষেকের আইনজীবী সঞ্জয় বসুর বক্তব্য, ‘‘অভিষেক চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছেন। এটি তাঁর মৌলিক অধিকার। এ ক্ষেত্রে কোনও বাধা থাকতে পারে না। প্রয়োজন না থাকলেও তিনি বিদেশযাত্রার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে গিয়েছেন। তিনি আগেও চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছেন। বিদেশযাত্রার বিষয়ে তাঁর অধিকার সুপ্রিম কোর্ট এবং কলকাতা হাই কোর্টে স্বীকৃতি পেয়েছে।’’ সিপিএমের আইনজীবী-সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নিশ্চয় ইডির থেকে অনুমতি নিয়েই বিদেশে গিয়েছেন। এত দিন অনুমতি পাচ্ছিলেন না বলেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। অনুমতি পেয়ে গিয়েছেন বলেই বিদেশে যেতে পেরেছেন।’’
মামলা চলাকালীন তদন্তকারী সংস্থা কী ভাবে ওই ‘অনুমতি দিল’, সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই খোঁচা দিতে শুরু করেছে এ রাজ্যের কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতারা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘আদালতে ওঁর (অভিষেকের) আবেদনের এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। এর মধ্যেই গোপনে দুবাই রওনা হয়ে গেলেন? ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থা হয় কিছু টের পেল না, নয়তো তারা সম্মতি দিয়ে দিল। তার মানে, আদালতের রক্ষাকবচ ‘ভাইপো’ পান বা না-পান, মোদীর রক্ষাকবচ তিনি পেয়েছেন। এর থেকে স্পষ্ট যে, সেটিং রয়েছে। ইডি, সিবিআই, অভিবাসন সবাই চুপ!’’ প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানেরও অভিযোগ, ‘‘আমরা বহু দিন ধরেই বলছি, বিজেপি ও তৃণমূলের নকল যুদ্ধ চলছে। আদালত তাদের মতো করে চেষ্টা করছে, কেলেঙ্কারির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু তদন্তকারীরা সক্রিয় না হলে কী হবে? আদালতে যেমন মামলা চলছে চলুক, ভাইপো তাঁর নির্ধারিত দিনে বিদেশে চলে গেলেন। নতুন করে আর সেটিং বোঝানোর কী আছে!’’
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য বলছেন, ‘‘কেউ পালিয়ে বাঁচতে পারবে না। কেন্দ্রের সরকার প্রতিহিংসা পরায়ণ নয়। আইনের মধ্যে থেকেই তারা কাজ করবে।’’ শমীকের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বিমান বসুকে মিছিল করতে হচ্ছে!... এঁদের মুখে আর সেটিং-এর কথা মানায় না।’’ রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সম্পূর্ণ আইন মেনে তিনি (অভিষেক) বাইরে গিয়েছেন। আর না যাওয়ার কোনও পর্যবেক্ষণ বা আদেশ আদালতের তরফে দেওয়া নেই। তবু বুধবার সন্ধ্যা থেকে এই কুরুচিকর প্রচার চালানো হচ্ছে।’’
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টে অভিষেক ও তাঁর স্ত্রীর আইনজীবীদের বক্তব্য ছিল, জুনে বিদেশ যাওয়ার আগে তাঁরা ইডি-কে ই-মেল করে জানিয়েছিলেন। কিন্তু উত্তর পাননি। অভিষেক অতীতেও চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছেন। তাঁকে আটকানো হয়নি। তবে তাঁর স্ত্রী রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে কলকাতা বিমানবন্দরে আটকেছিল অভিবাসন দফতর। বলা হয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধে লুক-আউট নোটিস আছে। এ বার তাই সস্ত্রীক অভিষেকের বিদেশযাত্রা নিয়ে বিষয়টি সুুপ্রিম কোর্টে গড়িয়েছিল। অভিষেকের বিরুদ্ধে লুক-আউট সার্কুলার আছে কি না, তা ইডি-র কাছে জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি, কলকাতা হাই কোর্টেও প্রাক্তন তৃণমূল যুব নেতা কুন্তল ঘোষের চিঠির সূত্রে অভিষেকের একটি মামলা বিচারাধীন। সোমবার তার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা। ওই দিন পর্যন্ত অভিষেকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করার কথাও জানিয়ে রেখেছে ইডি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy