Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
WB Panchayat Election 2023

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নড়েচড়ে বসল কমিশন, বিরোধীরা জয় দেখলেও পরাজয় দেখছে না তৃণমূল

পঞ্চায়েত নির্বাচনে সর্বত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। মঙ্গলবার সেই রায়ই বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলি।

Opponents simultaneously attack TMC and Election Commission over deployment of central forces in panchayat polls instruction bt court

(বাঁ দিক থেকে) শুভেন্দু অধিকারী, সুজন চক্রবর্তী, প্রদীপ ভট্টাচার্য, শান্তনু সেন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৩ ১৬:১২
Share: Save:

রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানিতে হাই কোর্টের নির্দেশই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। অর্থাৎ, সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেই ভোট করতে হবে। খারিজ হয়ে গেল রাজ্য এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আর্জি। আর তাতেই নিজেদের জয় দেখছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।

তবে আদালতের এমন রায়ে চিন্তিত নয় শাসকদল তৃণমূল। তেমনটাই দাবি করেছেন রাজ্যসভার সাংসদ তথা তৃণমূলের মুখপাত্র শান্তনু সেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দলগত অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। যে ছাত্র সারা বছর পড়াশুনো করে তার পরীক্ষার সময় কোনও চিন্তা হয় না। পরীক্ষক যিনিই হোন, বা পরীক্ষার হলে যত কড়া প্রহরাই থাকুক। সব পরিস্থিতিতেই সেই ছাত্র ভাল ফল করে। তাই রাজ্য পুলিশ থাকুক, ভিন্‌রাজ্যের পুলিশ থাকুক, আর কেন্দ্রীয় বাহিনীই থাকুক। কোনও অবস্থাতেই আমরা ভাবিত নই। কারণ রাজ্যের মানুষ বার বার প্রমাণ করে দিয়েছেন, তৃণমূলের সঙ্গে তাঁরা আছেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই হয়েছিল। তার পর আসানসোল লোকসভার উপনির্বাচন ছাড়াও, রাজ্যের সব বিধানসভার উপনির্বাচনেও আমরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যবহার দেখেছি। সবক’টিতেই তৃণমূল জয় পেয়েছিল। তাই পঞ্চায়েত ভোটে যে বাহিনীই আসুক না কেন, তাতে আমাদের ভাবনার কোনও কারণ নেই। জয় আমাদের নিশ্চিত।’’

সুপ্রিম কোর্টে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তথা বিজেপির হয়ে সওয়াল করেছিলেন আইনজীবী হরিশ সালভে ও তাঁর দল। জয়ের পর আইনজীবী সালভেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শুভেন্দু। রাজ্য সরকার ও কমিশনকে আক্রমণ করে নন্দীগ্রাম বিধায়ক বলেন, ‘‘আইনজীবী হরিশ সালভের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে, হাজারও ব্যস্ততার মধ্যে তিনি আমাদের কেস নিয়েছেন। আইনজীবী মনিন্দর সিংহকেও আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। আইনের থাপ্পড় খেয়েছে কমিশন। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় প্রমাণ করে দিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র নেই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রধান বিচারপতি চেয়েছিলেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হোক। এখন পর্যন্ত রাজ্যে আট জন খুন হয়েছেন। সাত জন মারা গিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা সংক্রান্ত আদালতের নির্দেশের পর। যদি দ্রুততার সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে কলকাতা হাই কোর্টের রায়ের মর্যাদা দিত রাজ্য নির্বাচন কমিশন, তা হলে এত মানুষের প্রাণ যেত না। রাজ্য সরকার নিয়োগ দুর্নীতি থেকে চোরেদের বাঁচাতে সুপ্রিম কোর্টে যান। বিরোধী দলনেতাকে জেলে পুরতে সুপ্রিম কোর্টে যান। চটি পরা পুলিশ দাঁড় করিয়ে পঞ্চায়েত ভোট লুট করার জন্য কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির নির্দেশকে রোখার জন্য সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। আমি সুপ্রিম কোর্টের অবসরকালীন বেঞ্চকে কৃতজ্ঞতা জানাব। মমতা ব্যানার্জিকে আমি চিনি। তিনি শেষ পর্যন্ত যাবেন আমি জানতাম।’’

আবার প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমি মনে করি এই রায়ের ফলে গ্রামীণ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ নিশ্চিত হল যে তাঁরা ভোট দিতে যেতে পারবে। পুলিশ ও প্রশাসন সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে কাজ করছে। সরকার যা বলে আইন অমান্য করে সরকারের নির্দেশকে অনুসরণ করছে, তা আমরা বার বার দেখেছি। মূলত তিনটি বিষয় মনে রাখতে হবে। প্রথমত, রাজ্য পুলিশ দিয়ে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া রাজ্যের মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন না। তৃতীয়ত, রাজ্য সরকারের গালে জোর থাপ্পড় পড়েছে। বাংলা কোনও দেশ নয়, ভারতের অংশ। মুখ্যমন্ত্রী যা চাইবেন, তা করতে পারেন না।’’ এ প্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। আমি আগে বলেছিলাম এক গালে থাপ্পড় খেয়েছে, এখন বলব দু’গালেই কষে দুটো থাপ্পড় খেল রাজ্যের সরকার আর নির্বাচন কমিশন। এত কিছুর পরও নির্বাচন কমিশনার পদ আগলে বসে থাকেন কোন লজ্জায়! তবে আবারও বলব পঞ্চায়েত ভোটে যাতে মানুষ ভাল ভাবে ভোট দিতে পারেন, তার জন্য সঠিক পথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা করা হোক।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE