(বাঁ দিক থেকে) শুভেন্দু অধিকারী, সিভি আনন্দ বোস, কুণাল ঘোষ। — ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করেই রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করলেন রাজ্যপাল। মঙ্গলবার সকালে রাজভবনে সিভি আনন্দ বোসের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান পালিত হল। অথচ, এর এক দিন আগেই ফোন করে রাজ্যপালকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন না করতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফোনের পাশাপাশি, রাতে নবান্ন থেকে রাজভবনে চিঠি পাঠিয়ে নিজের অনুরোধের পুনরাবৃত্তি করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি মতোই ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করে রাজ্যপাল।
রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের খবরে খুশি বিজেপি। সমালোচনায় মুখর শাসকদল তৃণমূল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে রাজ্যপালের ‘দূরত্ব’ এখন রাজ্য রাজনীতিতে সর্বজনবিদিত। নানা সময়ে রাজ্যপালের ভূমিকার সমালোচনাও করেছেন তিনি। সেই শুভেন্দুও রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের পর আনন্দ বোসের প্রশংসা করেন। মঙ্গলবার বিজেপি পরিষদীয় দলের বেশ কিছু সদস্যকে নিয়ে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ উপলক্ষে মিছিল করেন নন্দীগ্রাম বিধায়ক। মিছিল শেষে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমরা খুশি। নিশ্চিত ভাবে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন হওয়া উচিত।’’ এর পরেই তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘রাজ্যপাল এক জন শিক্ষিত মানুষ। তিনি অনেক বই প্রকাশ করেছেন। তিনি ইতিহাসকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এটা স্বাগত জানানোর মতো বিষয়। রাজভবনের এই অনুষ্ঠানের বিল আদৌ রাজ্য সরকার ছাড়বে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এই অনুষ্ঠানের বিল হয়তো রাজ্যপালকে নিজের বেতন থেকেই দিতে হবে।’’
পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্যপাল যে ভাবে বাংলার ঐতিহ্য ধ্বংস করে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করেছেন, তা মানি না। বিরোধিতা করছি। বাংলার ইতিহাস এবং মানুষকে অপমান করার পর এখানে রাজ্যপাল হিসাবে থাকার কোনও নৈতিক অধিকার আনন্দ বোসের নেই।’’ প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে চিঠি পাঠিয়ে কেন বাংলায় ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করা উচিত নয়, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।
রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালিত হলে তাতে যে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা এবং রাজ্য মন্ত্রিসভার সম্মতি থাকবে না, চিঠিতে তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের জন্য যদি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক কোনও নির্দেশ দিয়ে থাকে, তা যে অসাংবিধানিক এবং একতরফা সিদ্ধান্ত হবে, তা-ও রাজ্যপালকে নিজের চিঠিতে সাফ জানিয়েছেন মমতা।
মমতা লিখেছিলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের জন্ম কোনও বিশেষ দিনে হয়নি। আমরা বাংলায় জন্মেছি, বড় হয়েছি। কখনও এখানে কোনও দিন ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’-এর মতো কোনও অনুষ্ঠানে হতে দেখিনি। এই ধরনের অনুষ্ঠান কোনও রাজনৈতিক দল নিজেদের প্রতিহিংসার রাজনীতির জন্য করতেই পারে, কিন্তু এই ধরনের কোনও অনুষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের কোনও যোগাযোগ নেই।’’ রাজ্যপালের সঙ্গে ফোনালাপের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছিলেন, ‘‘আপনার সঙ্গে কথোপকথনের সময় আপনি সম্মত হয়েছেন যে, একতরফা ভাবে এবং কোনও রকম আলোচনা ছাড়া ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’-এর ঘোষণা করা ঠিক নয়। আপনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, এই ধরনের কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন আপনি করবেন না।’’ কারণ প্রসঙ্গে মমতা রাজ্যপালকে আরও লিখেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে কখনও বাংলায় ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’-এর মতো কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়নি। দেশ বিভাজনের এই ঘটনাকে বাংলা সদাই মনে রেখেছে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান হিসাবে।
মমতা লিখেছিলেন, ‘‘বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতি অত্যন্ত উচ্চমানের, যা নিয়ে অনেক দিনের ইতিহাস রয়েছে। বাংলা থেকে স্বাধীনতার আন্দোলন হয়েছে, রেনেসাঁস হয়েছে, হয়েছে সমাজ সংস্কার। তাই আপনার দ্বারা এমন কিছু অনুষ্ঠিত হলে মানুষের মধ্যে সংশয়, অবিশ্বাস এবং রাজনৈতিক বিরূপতা তৈরি করতে পারে।’’ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যুক্তিতে কান না দিয়ে নিজের মতো করেই রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করেছেন আনন্দ বোস। এমনিতেই পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বার বার তৃণমূলের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে রাজভবন। রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাসের অভিযোগ পেয়ে ভাঙড় এবং ক্যানিংয়ে উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। যা নিয়ে একেবারেই খুশি নয় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। তাতে রাজ্যপাল দমে না গিয়ে রাজভবনেই ‘শান্তি কক্ষ’ খুলে পঞ্চায়েতে আক্রান্তদের ফোন করে তাঁদের পরিস্থিতি জানানোর বন্দোবস্ত করেছেন। এই নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই সংঘাতে জড়িয়েছে তৃণমূল-রাজ্যপাল। ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করে রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে সেই সংঘাত আরও বৃদ্ধি পেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy