প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা এবং প্রত্যাহার পর্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও অশান্তি অব্যাহত রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। মনোনয়নের শুরুতেই গুলি এবং বোমাবাজির প্রথম অভিযোগ উঠেছিল মুর্শিদাবাদে। শনিবার সেই জেলাতে আবারও বোমা বিস্ফোরণ! এক জনের প্রাণও গিয়েছে। কংগ্রেস অভিযোগ করেছে, যাঁর মৃত্যু হয়েছে, তিনি তৃণমূলের কর্মী। বোমা বাঁধতে গিয়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। শাসকদল যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অন্য দিকে, বীরভূমের মাড়গ্রামে বোমা বাঁধতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন জোট প্রার্থী-সহ পাঁচ জন। গোপন সূত্র মারফত খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে ২০টি বোমা এবং বোমা বাধার প্রচুর সরঞ্জামও উদ্ধার করেছে পুলিশ। কোচবিহারের সিতাইয়েও বোমা তৈরির সরঞ্জাম-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভোটের আবহে পুরুলিয়ার আদ্রায় এক তৃণমূল নেতাকে গুলি করে খুনের ঘটনা নিয়েও শোরগোল পড়েছিল রাজ্যে। নিহত সেই ধনঞ্জয় চৌবের পরিবারের সঙ্গে শনিবার কথা বলেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজভবন সূত্রে খবর, ধনঞ্জয়ের পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কে রাজ্যপাল খোঁজখবর নেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধনঞ্জয় খুনের তদন্তে রাজনৈতিক দলাদলি এবং ব্যবসায়িক বিবাদ দুইয়েরই যোগসূত্র মিলেছে। ওই খুনের ঘটনার সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের সত্যিই কোনও সম্পর্ক আছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ধনঞ্জয় খুনে কাশীপুর ব্লকের বেতো গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রার্থী আরশাদ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া অন্য জন মহম্মদ জামাল অবশ্য ‘দাগি’ অপরাধী।
গত সপ্তাহে মনোনয়ন পর্বে অশান্তির অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাজ্যপাল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় এবং ক্যানিংয়ে যেখানে গন্ডগোল হয়েছিল, সেখানকার পরিস্থিতিও সরেজমিনে খতিয়ে দেখে এসেছিলেন তিনি। ঘটনাস্থল থেকেই দুষ্কৃতীদের উদ্দেশে কড়া আইনি পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। রাজ্যপাল যে সব এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, সেখানে মূলত শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধেই অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। তৃণমূলের বক্তব্য ছিল, রাজ্যপাল বিরোধীদের পক্ষপাতিত্ব করছেন! রাজ্যপালের ওই সব সফর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধুবাদ জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি, রাজ্যপাল কেন নিহত তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে যান না, ডায়মন্ড হারবারের দলীয় সভা থেকে সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তার প্রেক্ষিতে আদ্রার নিহত তৃণমূল নেতার পরিবারের সঙ্গে রাজ্যপালের ফোনে কথা বিশেষ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন অনেকে। যদিও রাজভবন সূত্রে খবর, ধনঞ্জয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ঘটনার তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও জানতে চেয়েছেন রাজ্যপাল বোস। ঘটনাচক্রে, রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পার্টি অফিসের ভিতরে খুন হন আদ্রা শহর তৃণমূলের সভাপতি ধনঞ্জয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যায় পার্টি অফিসের বারান্দায় দলীয় কর্মীদের নিয়ে বসেছিলেন শাসকদলের ওই নেতা। তাঁর সঙ্গে দেহরক্ষী শেখর দাসও ছিলেন। সেই সময় আচমকাই দু’জন বাইকে করে পার্টি অফিসে এসে গুলি ছুড়তে শুরু করেন। অন্তত ছয় রাউন্ড গুলি চলে। এর পর ঘটনাস্থলে মোটরবাইক ফেলে রেখেই সেখান থেকে পালান আততায়ীরা। স্থানীয়েরাই দু’জনকে রঘুনাথপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই ধনঞ্জয়কে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। পরে শেখরকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, শেখরের অবস্থা এখন স্থিতিশীল। এই ঘটনায় দলীয় প্রার্থী গ্রেফতার হওয়ার পরেই নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছে কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, নিরপেক্ষ তদন্ত একমাত্র সিবিআই-ই করতে পারে। যা নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করেছে তৃণমূল।
মুর্শিদাবাদে বোমা বিস্ফোরণ
রাজ্যে আবারও বোমা ফেটে মৃত্যুর অভিযোগ। শনিবার মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার এই ঘটনায় যিনি মারা গিয়েছেন তাঁর নাম আলিম শেখ। কংগ্রেসের অভিযোগ, এলাকায় পাটক্ষেতের পাশে একটি আমবাগানে চলছিল বোমা বাঁধার কাজ। তা থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। তাদের অভিযোগ, তৃণমূলের হয়েই বোমা বাঁধার কাজ করছিলেন আলিম। তৃণমূল সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকাল থেকে বেলডাঙার কাপাসডাঙা এলাকায় একটি আমবাগানে জনা দশেক দুষ্কৃতী বোমা বাঁধছিলেন। সেই সময় বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে তিন জন আহত হন বলে জানা গিয়েছে স্থানীয় সূত্রে। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় আলিমকে বেলডাঙা ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। আহত বাকি দুই যুবকের এখনও কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, আইনি ঝামেলা থেকে বাঁচতে তাঁদের অন্য কোথাও লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত আলিম শেখ বেলডাঙার নতুনপাড়া এলাকার বাসিন্দা। এই ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাসের অভিযোগ, ‘‘যিনি মারা গিয়েছেন, তিনি বোমা বাঁধার শ্রমিক। তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হয়ে কাজ করছিলেন। পাড়ায় পাড়ায় বোমা মজুত করা হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ নিষ্ক্রিয়।’’ যদিও তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলার চেয়ারম্যান অপূর্ব সরকারের দাবি, ‘‘কোনও অপরাধমূলক ঘটনা ঘটলেই তৃণমূলকে যুক্ত করে দেওয়ার প্রবণতা আসলে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা। দোষীদের বিরুদ্ধে পুলিশ অবিলম্বের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।’’ অন্য দিকে, শুক্রবার রাতে বোমাবাজি ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদেরই রানিনগরের গোধনপাড়া।
জোট প্রার্থী গ্রেফতার মাড়গ্রামে
বীরভূমের মাড়গ্রামে বোমা বাঁধার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে জোটের এক প্রার্থী-সহ পাঁচ জনকে। পুলিশের দাবি, উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কিছু বোমা এবং বোমা তৈরির উপকরণও। কংগ্রেস যদিও দাবি করেছে, তাদের প্রার্থীকে ফাঁসানো হয়েছে। পাল্টা তৃণমূলের দাবি, আইন আইনের পথে চলবে। ধৃত জোট প্রার্থীর নাম চমৎকার শেখ। অন্য চার জন টম শেখ, গিয়াসউদ্দিন শেখ এবং ডিউক শেখ। তাঁদের মধ্যে চমৎকার বীরভূমের হাঁসন-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাম এবং কংগ্রেস জোটের প্রার্থী। এ নিয়ে কংগ্রেসের বীরভূম জেলার সভাপতি মিল্টন রশিদ অভিযোগ করেছেন, ‘‘পুলিশ এখন শাসক দলের হয়ে কাজ করছে। তার প্রমাণ আমরা পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই পেয়েছি। এলাকায় এলাকায় আমাদের কংগ্রেস কর্মীদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে এই ঘটনা কতটা সত্য, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’’ বীরভূমের জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, ‘‘বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এখন সব এক হয়েছে। সেই কারণেই তারা ভোটে বোমা বারুদের ব্যবহার করে জেতার চেষ্টা করছে। এই ঘটনা তার প্রমাণ।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে বাহিরগোড়া গ্রামে অভিযান চালায় পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, ওই গ্রামে একটি বাড়ির মধ্যে বোমা বাঁধার কাজ চলছিল। সেই সময় অভিযান চালিয়ে বাড়ির মালিক-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ২০টি বোমা এবং বোমা বাঁধার উপকরণ-সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাড়িটি সিল করে দেওয়া হয়েছে। বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা খবর পেয়ে গ্রেফতার করেছি আসামিদের। ওই এলাকায় আরও কোথাও বোমা মজুত করা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছি। পাশাপাশি, জেলা জুড়ে আমাদের তল্লাশি অভিযান চলছে।’’
সিতাইয়ে বিস্ফোরক উদ্ধার
কোচবিহারের সিতাইয়ের মোড়ভাঙা-আদাবারি এলাকায় বোমা তৈরির প্রচুর সরঞ্জাম-সহ শনিবার দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মোড়ভাঙা-আদাবারি এলাকায় সন্তোষ দাস নামে এক জনের বাড়িতে বোমা তৈরি করার জন্য সরঞ্জাম মজুত করা হয়েছিল। কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুমার সানি রাজ জানিয়েছেন, শনিবার বেলা ১২টা ৪৫ মিনিট নাগাদ ওই বাড়িটিতে অভিযান চালানো হয়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালায় সিতাই থানার পুলিশ। সেখান থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া গিয়েছে বলে তাঁর দাবি। তার মধ্যে ছিল ৭০টি জর্দার কৌটো, তিন কিলোগ্রাম আয়রন স্প্লিন্টার, তিন কিলোগ্রাম লোহার বল, দুই কিলোগ্রাম মার্বেল, ১৫টি চকোলেট বোমা, পাঁচশো গ্রাম লোহার পিন এবং প্রচুর সুতুলি দড়ি। সানিরাজ আরও জানিয়েছেন, বোমা তৈরির সরঞ্জামের পাশাপাশি তিনটি তাজা বোমাও উদ্ধার হয়েছে ওই বাড়ি থেকে। বাড়ির মালিক সন্তোষ দাস এবং সুরত দাস নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় রুজু করা হয়েছে মামলা।
ধনঞ্জয়ের পরিবারকে বোসের ফোন
পুরুলিয়ার নিহত তৃণমূল নেতা ধনঞ্জয় চৌবের পরিবারের সঙ্গে কথা বললেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শনিবার ধনঞ্জয়ের দাদা আনন্দ চৌবেকে ফোন করেন তিনি। ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে বেশ কিছু ক্ষণ তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। মৃতের পরিবারের দাবি, রাজ্যপাল তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। ধনঞ্জয় আদ্রা শহর তৃণমূলের সভাপতি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দলীয় পার্টি অফিসের মধ্যেই গুলি করে তাঁকে খুন করা হয়। আততায়ীদের গুলিতে জখম হয়েছেন ধনঞ্জয়ের দেহরক্ষী রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল শেখর দাসও। ধনঞ্জয়কে উদ্ধার করে রঘুনাথপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁর গায়ে পাঁচটি গুলি লেগেছিল বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। ওই ঘটনায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের এক কংগ্রেস প্রার্থী-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজভবন সূত্রের খবর, রাজ্যপাল ধনঞ্জয়ের দাদাকে ফোন করে তাঁদের পারিবারিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। বাড়িতে কে কে আছেন, পরিবারের আর কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কি না ইত্যাদি জানতে চেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, খোঁজ নিয়েছেন পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। পুলিশ প্রশাসনের তরফে পদক্ষেপ করা হচ্ছে কি না, ধনঞ্জয়ের দাদার কাছে তা জানতে চেয়েছেন রাজ্যপাল। রাজভবনের তরফে নিহত তৃণমূল নেতার পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা অর্থসাহায্যও করা হয়েছে। পাশাপাশি, নির্বাচন কমিশনকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, অভিযুক্তেরা যাতে কোনও ভাবেই ছাড় না পায়। কমিশনের কাছে একটি রিপোর্টও চেয়ে পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল। পঞ্চায়েত ভোটের আবহে অশান্তির জেরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়। অশান্তি ছড়ায় ক্যানিংয়েও। ভাঙড়ে গিয়ে রাজ্যপাল নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তার পরেই শাসকদলের তরফে অভিযোগ উঠতে শুরু করে, রাজ্যপাল কেবল বিরোধীদের প্রতিই সহানুভূতিশীল। শনিবার পুরুলিয়ার নিহত তৃণমূল নেতার পরিবারকে ফোন করে বিরোধীদের তোলা সেই অভিযোগ রাজ্যপাল ‘স্তিমিত’ করতে চাইলেন বলেই অনেকে মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy