বেপরোয়া: শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের মণ্ডপের বাইরে। শুক্রবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় হাই কোর্ট থেকে রাজ্য সরকার বিধিনিষেধের বর্ম বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু তাতে কে কতটুকু কর্ণপাত করছে, শুক্রবার, দ্বিতীয়ার সন্ধ্যাতেই রাজপথে মানুষের ঢল সেই বিষয়ে সংশয় জাগিয়ে দিয়েছে। মণ্ডপে ঢুকতে না-পারলেও বাইরে থেকে দর্শন সারতেই ভিড় বেড়েছে কলকাতার রাস্তায় রাস্তায়। আর তাতেই বঙ্গের আকাশে পুজোর মরসুমে সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকেরা। তাঁদের আশঙ্কা, ১৪২৮ বঙ্গাব্দের পুজোই করোনার ‘সুপার স্প্রেডার’ হয়ে উঠবে না তো!
মানুষকে সংযত আচরণের পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি এ-হেন ভিড়ের জন্য পুজোর উদ্যোক্তাদেরই দায়ী করছেন চিকিৎসকেরা। কারণ, মণ্ডপে প্রবেশ করতে না-পারলেও রাস্তার বাহারি আলো, থিম-প্যান্ডেলের আকর্ষণে জনতাকে টেনে আনার পথ তো উদ্যোক্তারাই দেখিয়েছেন। যদিও রাস্তায় বেরোনো অনেকেরই যুক্তি, তাঁদের তো করোনা প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় হয়ে গিয়েছে!
বিপদ এড়াতে স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শ: উৎসবে জমায়েত-শোভাযাত্রা এড়িয়ে এ বারের পুজো পরিবারেই সীমাবদ্ধ রাখা দরকার। দল বেঁধে সিঁদুরখেলা না-হয় এ বার না-ই হল। ভিড় থেকে বিশেষত শিশু, বৃদ্ধ, অন্তঃসত্ত্বা ও অসুস্থদের দূরে রাখুন। টিকার জোড়া ডোজ়ই রক্ষাকবচ, এক শ্রেণির মানুষের এই ধারণা মারাত্মক ভুল, জানান ডাক্তাররা। কারণ টিকার পরেও করোনার কোপে পড়া মানুষের সংখ্যা কম নয়। শল্যচিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের বক্তব্য, তৃতীয় ঢেউ কিন্তু চলছে। টিকা নেওয়া জনগণের মধ্যে কোভিডের উপসর্গ এত কম থাকছে যে বোঝা যাচ্ছে না। এক বা দু’দিনের জ্বরে আরটিপিসিআর পরীক্ষাও করাচ্ছেন না কেউ।
দীপ্তেন্দ্রবাবু বলেন, “এক বা দু’দিনের জ্বর কমে গেলেও অনেকে কিন্তু কোভিড পজ়িটিভ হয়েই থেকে যাচ্ছেন। সেই ব্যক্তি মণ্ডপে ঘুরলে অন্যদের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়াবেন। গত বছর বলেছিলাম, বয়স্কদের রক্ষার পুজো এটা। এ বার বার বার বলছি, এটা শিশুদের রক্ষার পুজো।” তাঁর বক্তব্য, যাঁরা দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবে সন্তানকে নিয়ে মণ্ডপে ভিড় করছেন, তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন, নিজেদের টিকা হলেও সন্তানের কিন্তু সেটা হয়নি।
পুজোর ভিড়ের সংমিশ্রণে নতুন কোনও স্ট্রেন প্রকট হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায়। তাঁর কথায়, “মানুষের মধ্যে করোনা পরীক্ষার ব্যাপারে অনীহা তৈরি হয়েছে। এটা ঠিক নয়। কেউ তো নতুন স্ট্রেনে আক্রান্ত হয়ে থাকতেই পারেন। ভিড়ে মিশে সেটা আরও মারাত্মক ভাবে ছড়াতে পারে। তাই পুজোটা নিজের পাড়ায় কাটিয়ে, আগামী দিনে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ তৈরি এবং শিশুদের স্কুলে যাওয়ার পথ সুগম রাখার কথাটাই ভাবা উচিত সকলের।”
রাজ্যের কোথায় কোথায় করোনা ঘাপটি মেরে রয়েছে, তা জানতে সেন্টিনেল সার্ভে শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। সম্প্রতি ষষ্ঠ দফার সেই সমীক্ষার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, দু’টি জেলায় পজ়িটিভিটি রেট আবার চারের উপরে, দু’টি জেলায় তা তিনের বেশি। হিসেব অনুযায়ী পজ়িটিভিটি রেট বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য-জেলায় ৪.২, হুগলিতে ৪.৩, দার্জিলিঙে (৩.৭) এবং কালিম্পঙে ৩.৮। দীপ্তেন্দ্রবাবুর ব্যাখ্যা, করোনা সংক্রমণের রেখচিত্র নিম্নমুখী হয়নি। বরং সেটি একই জায়গায়, ৭০০-র ঘরে রয়েছে। অর্থাৎ ‘আর ভ্যালু’ একের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। যদি সংক্রমণ কমত, তা হলে ‘আর ভ্যালু’ একের নীচে নেমে যেত। সামগ্রিক পজ়িটিভিটি রেট ১.৬ থেকে ১.৮-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।
তাই চিকিৎসকেরা বলছেন, “পুজোর উচ্ছ্বাস যেন আগামী দিনের অন্ধকার ডেকে না-আনে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy