ওমপ্রকাশ মিশ্র ও সোমেন মিত্র। ফাইল চিত্র।
প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে ঝাঁঝালো আক্রমণ করে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করলেন পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি ওমপ্রকাশ মিশ্র। লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ‘অত্যন্ত খারাপ ফলের’ দায় মাথায় নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি-সহ সব পদাধিকারীর পদত্যাগ করা উচিত— বুধবার এক বিবৃতি প্রকাশ করে এমনই জানিয়েছেন ওমপ্রকাশ। দলীয় বৈঠকে সে কথা তিনি বলেছিলেন, কিন্তু কেউ পদ ছাড়তে রাজি নন— এমনও অভিযোগ তাঁর। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র অবশ্য পাত্তাই দিচ্ছেন না ওমপ্রকাশের ঘোষণাকে। পদ যখন একটা রয়েছে, তখন পদত্যাগ করতেই পারেন— কটাক্ষ সোমেনের।
‘‘পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সমিতির বৈঠকে ১৫ জুন ২০১৯ আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম যে, নির্বাচনে অত্যন্ত খারাপ ও চূড়ান্ত হতাশাজনক ফলাফলের দায় নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের সব পদাধিকারীর উচিত পদত্যাগ করা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র, এআইসিসি ইনচার্জ গৌরব গগৈ-সহ সব সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতেই আমি এই প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় কেটে গেলেও এখনও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।’’ লিখেছেন ওমপ্রকাশ মিশ্র। কেউ পদত্যাগ করুন বা না করুন, বৃহস্পতিবার তিনি নিজে সহ-সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেবেন বলেও ওমপ্রকাশ লিখেছেন।
আনন্দবাজারকে ওমপ্রকাশ আরও বলেন, ‘‘এ বারের লোকসভা নির্বাচনে গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই কংগ্রেসের ফলাফল সবচেয়ে খারাপ। প্রদেশ কংগ্রেসের কোনও পদাধিকারীই এর দায় এড়াতে পারেন না। এআইসিসির পাঠানো পর্যবেক্ষক গৌরব গগৈ সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্যরা ব্যর্থ। তিন জন কার্যনির্বাহী সভাপতি দীপা দাশমুন্সি, নেপাল মাহাতো এবং শঙ্কর মালাকার ভোটে দাঁড়িয়ে নিজেদের আসনে গোহারা হেরেছেন। কেউ ১০ শতাংশ ভোট পাননি, কেউ চতুর্থ হয়েছেন। অধীর চৌধুরী শুধুমাত্র বহরমপুর বিধানসভা এলাকার জোরে নিজের আসনটা ধরে রাখতে পেরেছেন। অধীরের জেলার বাকি দুটো আসনে তৃণমূল বিপুল জয় পেয়েছে। অধীরও দায় এড়াতে পারেন না। সবার উচিত পদত্যাগ করা।’’
আরও পড়ুন: ‘জাভেদের নাম করে ভয় দেখালে, ফিরহাদ হাকিমের নাম করুন’
ওমপ্রকাশ নিজে পদত্যাগ করছেন বলে জানিয়েছেন ঠিকই। তবে তিনি পরাজয়ের দায় নিজের ঘাড়ে নিচ্ছেন না। তিনি বলেছেন, ‘‘নির্বাচনে আমার কোনও ভূমিকা ছিল না। আমাকে নির্বাচন কমিটিতে নেওয়া হয়নি। যে পথে চলার কথা আমি বলেছিলাম, প্রদেশ কংগ্রেস তার উল্টো পথেই চলেছে। সুতরাং সব পদাধিকারীকে এর দায় নিতে হবে এবং পদত্যাগ করতে হবে।’’
কোন পথে চলার কথা ওমপ্রকাশ বলেছিলেন? বামেদের সঙ্গে জোটের কথা। সেই জোট না হওয়াতেই এত খারাপ ফলাফল বলে ওমপ্রকাশের দাবি। উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে প্রদেশ কংগ্রেসের নেতৃত্ব জোট ভেঙে দিয়েছেন এবং বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছেন— এ দিন এমন ইঙ্গিতও ওমপ্রকাশ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাহুল গাঁধী এবং সীতারাম ইয়েচুরির মধ্যে কথা হয়ে গেল। রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ আসন আমরা বামেদের ছেড়ে দেব, ঠিক হয়ে গেল। তার পরেও প্রদেশ কংগ্রেসের নির্বাচন কমিটি বৈঠক ডেকে সব ভেস্তে দিল।’’ ওমপ্রকাশের প্রশ্ন, ‘‘জেদ করে ভোটে লড়ে কত শতাংশ ভোট দীপা দাশমুন্সি পেয়েছেন?’’
আরও পড়ুন: ‘বাংলা’ নয়, ‘পশ্চিমবঙ্গ’ই ভাল: অধীর-বাবুল একসুর, তৃণমূল এখনও নীরব
তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়ার পক্ষেও এ দিন সওয়াল করেছেন ওমপ্রকাশ। পদত্যাগের কথা ঘোষণা করে দেওয়া সহ-সভাপতির মতে, ‘‘এখন আবার বলা হচ্ছে যে, সমমনস্ক দলগুলোর সঙ্গে জোট গড়তে হবে। কিন্তু সমমনস্ক দল মানে শুধু সিপিএম বা বামেরা নয়। তৃণমূলের কথাও মাথায় রাখতে হবে। তৃণমূলের সঙ্গে আমাদের সংগঠনগত বা রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে, কিন্তু আদর্শগত বিরোধ নেই। বিজেপির সঙ্গে আমাদের আদর্শগত বিরোধ রয়েছে। সে কথা মাথায় রাখতে হবে।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র অবশ্য ওমপ্রকাশের কোনও কথাই মাথায় রাখছেন না। আনন্দবাজারকে সোমেন মিত্র বলেছেন, ‘‘প্রদেশ কংগ্রেসের বৈঠকে যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে ওমপ্রকাশ মিশ্র দাবি করছেন, তেমন কোনও প্রস্তাবই তিনি দেননি। উনি মিথ্যা বলছেন। অথবা উনি বৈঠকে বসে কথাগুলো মনে মনে বলেছিলেন। তাই বৈঠকের মিনিটসে সে সবের উল্লেখ নেই।’’ ওমপ্রকাশের পদত্যাগের ঘোষণাকে কোনও গুরুত্বই দিতে রাজি নন সোমেন। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘পদ যখন একটা রয়েছেন, তখন পদত্যাগ করতেই পারেন। তাতে কারও কোনও অসুবিধা নেই।’’
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবরআমাদের রাজ্য বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy