Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
nabaneeta dev sen

নবনীতাদির এই শূন্যতাও যাওয়ার নয়: জয় গোস্বামী

‘ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী ও অন্যান্য’ নামে যে বইটি তিনি লিখেছেন তা একটি প্রবন্ধ সাহিত্য গ্রন্থ। তিনি যে তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন, তা এই বইটি পড়লে বোঝা যায়। নবনীতাদির ‘আমি অনুপম’ উপন্যাসটিও অত্যন্ত ভাল। রসরচনাতেও তিনি অনন্যা।

নবনীতা দেব সেন (১৯৩৮-২০১৯)

নবনীতা দেব সেন (১৯৩৮-২০১৯)

জয় গোস্বামী
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯ ২৩:৪৪
Share: Save:

যাঁরা পরে লেখালেখি করতে এসেছেন, তাঁদের প্রতি নবনীতা দেবসেনের ছিল উদার স্নেহ। তিনি এমনই এক জন মানুষ। কবিতার পাশাপাশি উপন্যাস ছাড়া তিনি খুব ভাল ভ্রমণকাহিনিও লিখেছেন। আবার ‘ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী ও অন্যান্য’ নামে যে বইটি তিনি লিখেছেন তা একটি প্রবন্ধ সাহিত্য গ্রন্থ। তিনি যে তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন, তা এই বইটি পড়লে বোঝা যায়। নবনীতাদির ‘আমি অনুপম’ উপন্যাসটিও অত্যন্ত ভাল। রসরচনাতেও তিনি অনন্যা।

আসলে তাঁর লেখায় প্রসন্নতা ছড়িয়ে থাকত। তাঁর চরিত্রের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় তাঁর জার্নাল জাতীয় লেখায়। উপলব্ধি করা যায়, মানুষকে কী ভাবে তিনি পর্যবেক্ষণ করতেন, গভীর বিশ্লেষণও থাকত তাঁর। নানা ধরনের লেখার ক্ষমতা এখন বিরল। তিনি সেই ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। অল্পবয়সী নারী লেখকদের নিয়ে তিনি ‘সই’ নামে একটি সংগঠনও করেছিলেন। সেটিও এক ব্যতিক্রমী সংগঠন।

আমি তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনতাম। আমার যখন মাত্র ২৪ বছর বয়স, সে সময় আমাকে আকাশবাণীতে কবিতা পড়তে ডেকেছিলেন কবিতা সিংহ। ওই অনুষ্ঠানটি নবনীতাদি সঞ্চালনা করেছিলেন। সেই যে পরিচয় হল, তার পর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি অত্যন্ত সস্নেহ ব্যবহার করেছেন। লেখা পড়ে ফোন করতেন।

তাঁর হাপানির জন্য খুবই কষ্ট পেয়েছেন দীর্ঘ দিন। আরও একটা জিনিস দেখেছি, তিনি ছাত্রপ্রিয় এক অধ্যাপক ছিলেন। তাঁর ‘ভালবাসার বারান্দা’ কলমটি কমবয়সি থেকে বয়স্ক মানুষজন, সকলেই পছন্দ করতেন। আমাকেও বহু লোক বলেছেন এই কলমের কথা, সাধুবাদ দিয়েছেন। অনেকেই বলেছেন, তাঁদের ভাল লাগার কথাটা আমি যেন নবনীতাদির কাছে পৌঁছে দিই। যখনই তাঁর সঙ্গে কথা হত আমি সে সব কথা তাঁকে বলতামও।

মাস তিনেক আগে কাবেরী আর বুকুনকে নিয়ে ওঁর বাড়িতে দেখা করতে যাই। দেখা হতেই আমাকে বললেন, ‘‘তোরা কি আমার ক্যানসার হয়েছে বলে দেখা করতে এসেছিস? ধুস্স, ওতে ভয় পাওয়ার কী আছে?’’

নবনীতাদি সাহিত্য অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, বাংলা অকাদেমির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তরুণ লেখকদের লেখার খবর রাখতেন ও সে সব পড়তেন। উৎসাহ দিতেন। আসলে, লেখকেরা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে অনেকেই আর নতুন লেখকদের লেখার খবর রাখেন না। কিন্তু নবনীতাদি একেবারেই সে রকম ছিলেন না।

শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাঁর কবিতায় বলেছিলেন, ‘শূন্যতা যাওয়ার নয়’।

নবনীতাদি চলে গেলেন। তাঁর এই শূন্যতাও যাওয়ার নয়।

আরও পড়ুন: ৮১ বছরে প্রয়াত সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেন, শোকস্তব্ধ সাহিত্য জগৎ

আরও পড়ুন: নবনীতা পাশে বসলে মনে হত ডায়ানামোর কাছে আছি: শীর্ষেন্দু

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy