এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার প্রকল্প অধিগ্রহণ করার কথা অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার। বিবাদ সেই সিদ্ধান্তকে ঘিরেই।
পুরুলিয়ায় ডিভিসি-র রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অধিগ্রহণ করার ব্যাপারে অনেকটা এগিয়েছে এনটিপিসি। আর তা নিয়েই ডিভিসি-র কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। তবে, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবেই যে এই অধিগ্রহণের ব্যাপারে এনটিপিসি আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। সম্প্রতি দিল্লিতে এক আলোচনাসভায় বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেন, ‘‘ডিভিসি-র আর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ। প্রচুর দেনাও রয়েছে। তাই আমি রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অধিগ্রহণের ব্যাপারে এনটিপিসি-কে বলি। তারা রাজিও হয়েছে।’’
একই সঙ্গে রঘুনাথপুর প্রকল্পের আর্থিক ভিত মজবুত করতে সেখানকার ২৬ শতাংশ মালিকানা কেনার ব্যাপারে প্রস্তাব দেবেন ভারতীয় রেলকে তিনি প্রস্তাব দেবেন। তাঁর যুক্তি, রেল অন্য জায়গা থেকে চড়া দামে বিদ্যুৎ কেনে। রঘুনাথপুরে মালিকানা থাকলে, রেল তুলনামূলক ভাবে অনেকটা কম দামে বিদ্যুৎ কিনতে পারবে। বিষয়টি নিয়ে তিনি শীঘ্রই রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর সঙ্গে কথাও বলবেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী।
যদিও ঘটনা হল, প্রথম থেকেই রঘুনাথপুর প্রকল্প এনটিপিসি বা অন্য কোনও সংস্থাকে দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে এসেছে ডিভিসি-র বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মী-সংগঠনগুলি। সম্প্রতি এনটিপিসি-র চেয়ারম্যান অরূপ রায়চৌধুরী কলকাতায় এসে জানান, রঘুনাথপুর প্রকল্প অধিগ্রহণের ব্যাপারে তাঁরা অনেকটাই এগিয়েছেন। সমীক্ষা শেষ। শীঘ্রই তাঁরা পরিচালন পর্ষদের অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠাবেন। এই মন্তব্যের পর ডিভিসি-র কর্মী ইউনিয়নগুলি জোট বেঁধে বানায় ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’। সম্প্রতি ওই সংগঠনের সদস্যেরা রঘুনাথপুরের প্রকল্পস্থলে বিক্ষোভ দেখিয়ে স্লোগান তোলেন, ‘এই হস্তান্তর করতে গেলে ধোলাই হবে পেটাই হবে!’ এবং ‘গো ব্যাক এনটিপিসি’। দীর্ঘ আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তাঁরা। সম্প্রতি ডিভিসি-র চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু ল্যাংস্টি অবশ্য এনটিপিসি-র অধিগ্রহণের খবরটি ঠিক নয় বলে সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী কিন্তু মঙ্গলবার দিল্লিতে জানিয়েছেন, রঘুনাথপুর প্রকল্পটি এনটিপিসি অধিগ্রহণ করলে আখেরে ডিভিসি-রই লাভ। এতে উপকৃত হবে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড। এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান। কেন্দ্রীয় সরকার মনে করছে, ডিভিসি-র বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি যা, তাতে রঘুনাথপুর প্রকল্প তাদের রূপায়ণের দায়িত্ব তাদের উপরেই ছেড়ে রাখা মানে সংস্থার ঋণের বোঝা বাড়ানো। মন্ত্রকের এটাও ধারণা, রঘুনাথপুর প্রকল্প তৈরির ক্ষেত্রে বহু সময়ই ডিভিসি কর্তৃপক্ষ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে পারেনি।
এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ অবশ্য এ নিয়ে বিশদে বলতে চান না। অরূপবাবু শুধু বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রের প্রস্তাব মতো আমরা কাজ করে চলেছি।’’ অরূপবাবু যখন ডিভিসি-র চেয়ারম্যান ছিলেন, তখনই রঘুনাথপুর প্রকল্পটি বাঁচাতে এনটিপিসি-র সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। বিভিন্ন সূত্রে খবর, শুধু রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রই নয়, দেশের এ রকম বেশ কয়েকটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র অধিগ্রহণের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছে এনটিপিসি। এগুলির বেশির ভাগই সরকারি বিদ্যুৎ প্রকল্প। কোনও না কোনও কারণে সফল ভাবে প্রকল্পের রূপায়ণ সম্ভব হচ্ছে না। এনটিপিসি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘রঘুনাথপুরের মতো মধ্যপ্রদেশেও এই ধরনেরই একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র অধিগ্রহণ করা যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে।’’
ডিভিসি-র কর্মী ও কর্তাদের একাংশের ক্ষোভ, বিদ্যুৎ বিল বাবদ ঝাড়খণ্ডের কাছে সংস্থার পাওনা কয়েক হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্র সেই টাকা পাওয়ার কোনও বন্দোবস্ত করে দিলেই সংস্থা অনেকটা অক্সিজেন পাবে। কেন্দ্র সেটা না করে নানা যুক্তি দেখিয়ে রঘুনাথপুর প্রকল্প এনটিপিসি-র হাতে তুলে দিয়ে সেই সংস্থাকে শক্তিশালী করতে চাইছে।
ডিভিসি-র কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনে সামিল সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ তথা সিটু নেতা বাসুদেব আচারিয়া বলেন, ‘‘দুই জেলায় (বর্ধমানের কাটোয়া এবং পুরুলিয়ার আদ্রা) নিজেদের প্রকল্প রূপায়ণ করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এনটিপিসিকে। রঘুনাথপুর তাদের হাতে দিলে রাতারাতি সব সমস্যার সমাধান হবে, এটা অবাস্তব চিন্তা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy