তৃণমূলের প্রবীণ মন্ত্রী ও প্রাক্তন ছাত্রনেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় বুধবারেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের উপরে পুলিশি পীড়নের তীব্র নিন্দা করেছিলেন। বৃহস্পতিবার যাদবপুরে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেন রাজ্য মহিলা কমিশনের দুই তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ সদস্যা লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং জুন মালিয়া। আর এই সূত্রেই অবশেষে ওই কমিশনের তিন নতুন সদস্যার দু’জনকে সঙ্গে পেয়ে গেলেন চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়।
শুধু শাসক দল নয়, লকেট আর জুন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ঘনিষ্ঠ। দু’জনেই এ দিন সুনন্দাদেবীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে যাদবপুর কাণ্ডের সমালোচনা করেন। তবে মহিলা কমিশনের অন্য নতুন সদস্যা, তৃণমূল নেত্রী দোলা সেন এ দিনও রাজ্য সরকার ও পুলিশের ভূমিকার সমর্থনেই মুখ খুলেছেন।
যাদবপুরের ঘটনার ব্যাপারে বুধবার সুনন্দাদেবীর মতামত চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি অন্য সদস্যাদের সমর্থন পাবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল চেয়ারপার্সনের। তাঁর মন্তব্য ছিল, “অনেক ব্যাপারে আমি একা ইতিমধ্যে অনেকটা বেশি এগিয়ে গিয়েছি। কমিশনে অন্যেরাও আছেন। তাঁরা একমত না-হলে আমার একার পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব নয়।”
তবে তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূল তথা মমতার কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত জুন ও লকেট জানিয়ে দেন, যাদবপুরে ছাত্রছাত্রীদের উপরে যা হয়েছে, সেটা তাঁরা কোনও ভাবেই সমর্থন করতে পারছেন না। আর বৃহস্পতিবার সারা দিনে দোলাদেবীকে যখনই ফোন করা হয়েছে তিনি বলেছেন, “আমি জরুরি বৈঠকে রয়েছি, বিরক্ত করবেন না।” দোলাদেবী সাংবাদিকদের এড়িয়ে গেলেও লকেট এ দিন সুনন্দাদেবীর সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে যাদবপুর বিষয়ে কথা বলেন। আর জুন বলেন, “কমিশন কোনও পদক্ষেপ করবে কি না, সেটা ঠিক হবে সর্বসম্মতির ভিত্তিতে। তবে ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি, আমি টিভিতে ওই ঘটনার যে-ছবি দেখেছি, তা কিছুতেই সমর্থন করা যায় না। সেখানে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, শুধু ছাত্রেরা ননস ছাত্রীরাও নিগৃহীতা হয়েছেন।” লকেটও বলেন, “শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সম্পর্ক এই জায়গায় পৌঁছেছে, ভাবা যায় না! শিক্ষকেরাই হলেন ফ্রেন্ড-ফিলোজফার-গাইড। তাঁরা সুষ্ঠু আলোচনার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের বোঝাতে পারলে এই দুঃখজনক ঘটনা ঘটতে পারত না।”
জুন মালিয়া
লকেট চট্টোপাধ্যায়
শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবুর সঙ্গে এ দিন দেখা করতে যান সুনন্দাদেবী, লকেট এবং মহিলা কমিশনের অন্য সদস্যা শিখা আদিত্য। সুনন্দাদেবীর কথায়, “শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছি, যাদবপুরের যে-মেয়েটির উপরে যৌন হেনস্থার অভিযোগকে কেন্দ্র করে গোলমালের সূত্রপাত, সেই ঘটনার মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকে সক্রিয় হলে জল এত দূর গড়াতই না। কবেই সব মিটে যেত!” আর লকেটের কথায়, “আমাদের মনে হয়েছে, শিক্ষামন্ত্রীকে যাদবপুরের ওই ছাত্রী-নিগ্রহের তদন্ত নিয়ে অনেক কথা জানানোই হয়নি। আমরা সব বলে এসেছি। নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য এটা দরকার ছিল।” এ দিন তাঁরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছ প্রস্তাব দেন, মহিলা কমিশনের কয়েক জন সদস্যা, কিছু আইনজীবী এবং নারীবাদী আন্দোলনের কর্মীদের নিয়ে একটি কমিটি গড়া হোক। সেই কমিটিই যাদবপুরে ছাত্রীর যৌন হেনস্থার অভিযোগের তদন্ত করবে। পার্থবাবু এ দিন বলেন, “মহিলা কমিশনের সদস্যারা আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। সেগুলি খতিয়ে দেখব।”
যাদবপুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা করে উপাচার্য ‘মানসিক স্থিরতাহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন সুনন্দাদেবী। এ দিন তিনি বলেন, “অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা চিরকাল এই রকম ঘেরাও করে থাকে। এক জন উপাচার্যের পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা না-থাকলে তিনি সেই পদের যোগ্যই নন। বুঝতে হবে, তাঁর মানসিক স্থিরতার অভাব ঘটেছে।”
শুধু কমিশনের প্রধান হিসেবে নয়, মা হিসেবেও শঙ্কিত সুনন্দাদেবী। জানালেন, তিনি নিজে দুই মেয়ের মা। মঙ্গলবার রাতে ছাত্রছাত্রী নির্বিশেষে পুলিশের মারধরের দৃশ্য টেলিভিশনে দেখে তিনি শিহরিত, শঙ্কিত। তাঁর কথায়, “আমার ৬০ বছরের জীবনে এমন ঘটনা কখনও দেখিনি। এই ভাবে পুলিশ ডেকে এনে কোনও উপাচার্য যদি ছাত্রছাত্রীদের মারার ব্যবস্থা করে দেন, তা হলে সেই উপাচার্যকে ‘সভ্যতার শত্রু’ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।”
সুনন্দাদেবীর বক্তব্যের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “কেউ অশালীন, অভদ্র হতে পারেন। তাঁর ওই মন্তব্যের কোনও জবাব দেব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy