Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
teenage marriage

Teenage Marriage: এখন বিয়ে করব না! কোনও মতে বাড়ি থেকে পালিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল নাবালিকা

কিশোরীর এক দাদা বলেন, “ভাল পাত্রের সন্ধান পাওয়ায় বোনের বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক করা হচ্ছিল। তবে সবাই যখন নিষেধ করছেন, তখন ১৮ বছর বয়স হওয়ার পরে, ওর বিয়ের ব্যাপারে ভাবব।’’

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২২ ০৪:৫২
Share: Save:

স্কুল ইউনিফর্ম নয়, গায়ে ঘরে পরার চুড়িদার-কামিজ। কিশোরীর সঙ্গে নেই অ্যাডমিট কার্ড, পেন-পেন্সিল। তাই সে মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকতে চাওয়ায় বাধা দিয়েছিলেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। একটু দূরে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে মেয়েটি। পরে, সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশকর্মীদের কাছে ফিরে গিয়ে দাবি করে, বিয়ের দিন ঠিক হবে বলে বাড়ির লোকেরা তাকে ঘরে আটকানোর চেষ্টা করেছিল। পরীক্ষা দেবে বলে কোনও মতে পালিয়েছে সে।

অভুক্ত মেয়েটিকে খাবার খাইয়ে, তার বাড়ি থেকে অ্যাডমিট কার্ড এনে পরীক্ষা দেওয়ানোর ব্যবস্থা করেন পুলিশকর্মীরা। বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের ঘটনা।

জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, “মেয়েটির কাছে সব জানার পরেই পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা তাকে পরীক্ষায় বসানোর ব্যবস্থা করেন। নাবালিকা অবস্থায় যাতে জোর করে মেয়েটির বিয়ে না দেওয়া হয়, সে জন্য পরিবারকে সতর্ক করা হয়েছে।’’

বছর পনেরোর মেয়েটির বাবা দিনমজুর। দাদারা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মেয়েটি জানায়, টেস্টে ভাল ভাবে পাশ করেছিল। মাধ্যমিকের বাংলা এবং ইংরেজির পরীক্ষাও ভাল হয়েছে। কিন্তু এ দিন তার বিয়ের দিন ঠিক করতে গিয়েছিলেন বাবা ও এক দাদা। ছাত্রীটির দাবি, ‘‘মা ও বৌদিরা সে জন্য আমাকে ঘরে আটকে রাখার চেষ্টা করেছিল। সেটা বুঝেই ‘বাথরুমে যাব’ বলি। তার পরে, কোনও মতে সবাইকে এড়িয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের দিকে দৌড়ই।’’ দু’কিলোমিটার দূরের পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার পথে, কিশোরীর দেখা হয় এক বান্ধবীর সঙ্গে। বান্ধবীর সাইকেলে চেপে সে পৌঁছয় পরীক্ষাকেন্দ্রে। এ দিন ছিল ভূগোলের পরীক্ষা। পুলিশ ও বান্ধবীদের সাহায্যে জোগাড় হয় পেন-পেন্সিল-ইরেজ়ার-কম্পাস। পরীক্ষাকেন্দ্রের দ্বায়িত্বপ্রাপ্তেরা জানান, ওই ছাত্রী নির্বিঘ্নেই পরীক্ষা দিয়েছে।

কিশোরীর এক দাদা বলেন, “ভাল পাত্রের সন্ধান পাওয়ায় বোনের বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক করা হচ্ছিল। তবে সবাই যখন নিষেধ করছেন, তখন ১৮ বছর বয়স হওয়ার পরে, ওর বিয়ের ব্যাপারে ভাবব।’’ মেয়েটির এক বৌদি দাবি করেন, ‘‘ননদ পড়াশোনায় ভাল। ওকে আটকানো হয়নি।’’

মেয়েটি যে স্কুলের ছাত্রী, সেই স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা বলেন, ‘‘অতিমারির কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় কন্যাশ্রী ক্লাবের কর্মকাণ্ডে কিছুটা ভাটা পড়েছে। ক্লাব সচল থাকলে, সহজে এমন ঘটত না। ভবিষ্যতে যাতে এমন না হয়, দেখা হবে।’’

শিক্ষা দফতরের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানে ৫৫,৪৪৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাধ্যমিকে বসেনি ১,০৩১ জন। ওয়াকিবহালদের মতে, অতিমারির সময়ে অনেক পরীক্ষার্থী নানা কারণে পড়াশোনার মূল স্রোত থেকে সরে গিয়েছে। অনেক নাবালিকার ক্ষেত্রেই বিয়ে হয়ে যাওয়া, তার অন্যতম কারণ। বিডিও গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই ছাত্রীর সাহস আর পড়তে চাওয়ার ইচ্ছেকে কুর্নিশ। ওর পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয়, সে দিকে প্রশাসন নজর রাখবে।’’ তাঁর আশ্বাস, সংশ্লিষ্ট এলাকায় নাবালিকা বিয়ে ঠেকাতে আরও বেশি সচেতনতা শিবির করা হবে।

ছাত্রীটি বলে, ‘‘আরও পড়তে চাই। ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে আছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

teenage marriage Bardhaman Madhyamik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy