এক মহিলাকে নিয়ে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে হোটেলে উঠে অসুস্থ হয়ে নার্সিংহোমে মারা গেলেন এক যুবক। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। অসুস্থ যুবককে প্রথমে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ও পরে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে রবিবার ভোরে তিনি মারা যান। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম অমিত ঘোষ (৩২)। যে মহিলাকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে অমিতবাবু হোটেলে উঠেছিলেন ঘটনার পরে তিনি উধাও হয়ে যান বলে অভিযোগ। পুলিশ ওই মহিলার খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। যে ঘরে অমিত এবং ওই মহিলা ছিলেন, সেখান থেকে উত্তেজনা বর্ধক চারটি ক্যাপসুলের খোল মিলেছে। পুলিশ ঘরটি সিল করে দিয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর বলেন, “কি কারণে যুবক মারা গেল সেটা ময়না তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়। তাঁর সঙ্গে এক মহিলা ছিল বলে জানা গিয়েছে। মহিলার খোঁজ করা হচ্ছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত অমিতবাবু আনন্দচন্দ্র কলেজের অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। শুধু ওই মহিলাকে স্ত্রী বলে ভুয়ো পরিচয় দেওয়া নয় তিনি নিজেকে শিলিগুড়ির বাসিন্দা জানিয়ে হোটেলে ঘর ভাড়া নেন বলে অভিযোগ। ঘটনার পর প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, অমিতবাবু অবিবাহিত ও জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া ডাঙাপাড়ার বাসিন্দা। রবিবার দুপুরের পরে তাঁর মা সীমা ঘোষ কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বলেন, “অমিত আমার একমাত্র ছেলে, অবিবাহিত। গত শনিবার কলকাতা যাওয়ার নাম করে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বার হয়। রবিবার সকালে খবর পাই ছেলে শিলিগুড়ির এক নার্সিংহোমে মারা গিয়েছে। শহরের একটি হোটেলে ছিল ওর সঙ্গে একজন মহিলা ছিল। পুরোটাই সন্দেহজনক ঘটনা। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি।” পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে।
জলপাইগুড়ি শহরে কদমতলার কাছে একটি হোটেলে অমিতবাবু ওই মহিলাকে নিয়ে ওঠেন। ওই হোটেল মালিক মানিক মণ্ডল বলেন, “শনিবার সন্ধ্যা সওয়া ৭টা নাগাদ ওই যুবক এক রাতের জন্য ঘরের খোঁজে হোটেলে আসেন। তাঁর সঙ্গে শাঁখা সিদূর পরা এক মহিলা ছিলেন। তাঁকে স্ত্রী বলে পরিচয় দেন। নাম জানান বৃষ্টি ঘোষ। হোটেল রেজিস্ট্রারে সেটা লেখা হয়। পরিচয়পত্র হিসাবে অমিতবাবু ভোটের এপিক কার্ডের জেরক্স জমা দেন। মানিকবাবু বলেন, “এপিক কার্ডে ঠিকানা জলপাইগুড়ি ডাঙাপাড়া দেখে ম্যানেজার ঠিকানা সম্পর্কে জানতে চান। অমিত বলেন ক’মাস আগেও জলপাইগুড়িতে ছিলেন। বিয়ের পরে শিলিগুড়িতে চলে গিয়েছেন। বিশেষ কাজে জলপাইগুড়িতে এসেছিলেন। রাত হয়েছে দেখে হোটেলে থাকবেন ভাবছেন।” পুলিশ জানায়, শুধুমাত্র অমিতবাবুর পরিচয়পত্র জমা নিয়ে ২০৭ নম্বর ঘর দেন হোটেল কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ ও হোটেল সূত্রে জানা যায়, ঘরে ঢোকার পরে ওই দুজনের কাউকে বাইরে দেখা যায়নি। রাত নটা নাগাদ হোটেলের এক কর্মী খাবারের অর্ডার নিতে ঘরের দরজায় ধাক্কা দেন। দরজা খুলে নাইটি পরা অবস্থায় ওই মহিলা জানান, স্বামী অসুস্থ বোধ করছেন। ওঁকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে? মানিকবাবু জানান, কর্মীর মুখে ওই কথা শোনার পরে ম্যানেজার অ্যাম্বুল্যান্সে ফোন করেন। পুলিশেও খবর দেওয়া হয়। তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে সদর হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করানো হয়। হোটেল থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় মহিলা পিছনে রিকশা নিয়ে যাচ্ছেন বলে উধাও হয়ে যান। তাঁকে আর হাসপাতালে দেখা যায়নি। ওই ব্যক্তিকে নামানোর সময় মহিলা পোশাকও বদলে নিয়েছিলেন।
হোটেল মালিকের দাবি, “বিবাহিত দেখলে স্বামীর পরিচয়পত্র দেখে ঘর দিয়ে থাকি। এখন থেকে স্বামী ও স্ত্রী দুই জনের পরিচয়পত্রই দেখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy