Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

সালিশি-কাণ্ডে চাপ দিচ্ছেন পঞ্চায়েত সদস্যই, অভিযোগ

মাথা মুড়িয়ে গ্রাম ঘোরানোর ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরেও অভিযুক্তদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সিপিএমের গ্রাম পঞ্চায়েতের উপস্থিতিতে সালিশি সভা বসানো হয়েছিল, তার নাম কেন অভিযোগে পুলিশ উল্লেখ করেনি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। এমনকী, ওই পঞ্চায়েত সদস্যের আতে ওই যুবক-সহ তার দাদা, বৌদির পরিবারকে গ্রামে ফেরানো নিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মাদারিহাট শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২৮
Share: Save:

মাথা মুড়িয়ে গ্রাম ঘোরানোর ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরেও অভিযুক্তদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সিপিএমের গ্রাম পঞ্চায়েতের উপস্থিতিতে সালিশি সভা বসানো হয়েছিল, তার নাম কেন অভিযোগে পুলিশ উল্লেখ করেনি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। এমনকী, ওই পঞ্চায়েত সদস্যের আতে ওই যুবক-সহ তার দাদা, বৌদির পরিবারকে গ্রামে ফেরানো নিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গ্রামে ফিরে যাওয়ার পরে ৯ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ তোলার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য বুধবার কয়েক দফা চাপ দিয়েছেন বলে অভিযোগকারী জানিয়েছেন। ডুয়ার্সের মাদারিহাট থানার উত্তর রাঙ্গালিবাজনা গ্রামে সোমবার যুবকের মাথা ন্যাড়া করার ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার তাদের পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। থানায় বসে ওই যুবক গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সোমরা ওঁরাও-এর উপস্থিতিতে সালিশি সভা বসেছিল বলে পুলিশকে জানান। ওই সদস্যের নাম পুলিশ অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেনি বলে অভিযোগ।

বুধবার সন্ধ্যায় গ্রামে ফেরার পর থেকে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ওই পরিবারের লোকজন। অভিযুক্তদের হয়ে কয়েকজন থানায় দায়ের করা অভিযোগ তুলে দেওয়ার জন্য যুবককে হুমকিও দেন বলে অভিযোগ। এমনকী, গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ওই বাড়ি গিয়ে যুবককে অভিযোগ তোলার কথা বলেন। ঘটনার কথা স্বীকার করে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সোমরা বলেছেন, “সামান্য ঘটনার জন্য ৯ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করার ঘটনা মানা যায় না। আমি নিজে তাঁদের অভিযোগ তোলার জন্য বলি। তবে তাঁরা তা মানেননি।”

কেন ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যের নাম অভিযোগ পত্রে নথিভুক্ত করা হয়নি, সে বিষয়ে আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বেজে গিয়েছে। মাদারিহাট থানার ও সি টি এন লামা বলেছেন, “পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে সে অভিযোগ করেনি। আমরা তো জোর করে আর কারও নাম উল্লেখ করতে পারি না।”

তবে তিন দফায় গ্রামে তল্লাশি চালিয়েও কোন অভিযুক্তকে ধরা যায়নি বলে ওসি-র দাবি। তৃণমূলের আলিপুরদুয়ারের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেছেন, “সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্যের উপস্থিতিতে ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না জানি না। পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।”

ওই ঘটনায় সিপিএম নেতারাও অস্বস্তিতে পড়েছেন। জেলা সিপিএম সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “কারও মাথা মোড়ানোর পর গ্রাম ঘোরানোর মত ঘটনা মানা যায় না। বিষয়টি আমি নিজে খোঁজ নিচ্ছে।” ওই যুবক এদিন বলেছেন, “আমাদের একঘরে করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তার উপর যে ভাবে চাপ আসছে তাতে দিশাহারা আমরা।”

মঙ্গলবার বিকেলে আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট থানায় গ্রামবাসী অনিল রায় ও ধনঞ্জয় রায়-সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন উত্তর রাঙালিবাজনা গ্রামের ওই ক্ষুদ্র চাষি। তাঁর অভিযোগ, অনেক কষ্টে পাঁচ কাঠা জমি কিনেছিলেন। তার পরেই সেটি দখলের ছক কষে কয়েকজন। তারাই খুড়তুতো বৌদির সঙ্গে ওই যুবকের সম্পর্ক রয়েছে বলে রটিয়ে দেয়। রবিবার গ্রামে সালিশি সভা ডেকে বলা হয়। পুরোহিত ডেকে পুজো করে মাথা ন্যাড়া হয়ে গ্রামে না ঘুরলে ওই যুবক, তাঁর বৌদি ও পরিবারকে গ্রামছাড়া হতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

madarihat settlement meeting panchayat cpm
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE