ভিনরাজ্যের পথে, লরি থেকে মালগাড়িতে। ছবি তুলেছেন রাজকুমার মোদক।
গতবারের মত হিমঘরে আর আলু মজুত করছেন না স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ভিন রাজ্যে আলুর ফলন এ বার ভাল হয়নি। তার উপর আলুর বাজার দরও চড়া। যে ভাবে খুচরো ও পাইকারি বাজারে আলুর দর বেড়ে চলেছে তাতে নির্বাচনের পর ফের গতবারের মত এ বারও রাজ্য সরকার ভিন রাজ্যে আলু পাচারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। তাই এবার কৃষকদের থেকে আলু কিনে রাজ্যের হিমঘরে সে আলু মজুত না করে ভিন রাজ্যে আলু মজুত করা শুরু করেছেন আলু ব্যবসায়ীরা।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি হলে এ বার সেই কোপ সরাসরি কৃষকদের ঘাড়ে পড়বে বলে মনে করে ব্যবসায়ীর একাংশ। রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “আমরা সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে গেলে নির্বাচনী বিধি নিষেধ লঙ্ঘন করার বিষয়টি চলে আসবে। আলুর দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সে জন্য দফতরের কর্তাদের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। নির্বাচনের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে স্থানীয় হিমঘরগুলিতে ব্যবসায়ী না কৃষকেরা আলু রেখেছেন তা দেখা হবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত বার উত্তরবঙ্গের কৃষকেরা ১০ টন আলু ৫৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। কয়েক মাস বাদে সেই আলুর দাম তিনগুণ বেড়ে যায়। এবার খেত থেকে আলু তোলার পর গোড়াতেই ১০ টন আলুর দাম মিলেছে ৮৫ হাজার টাকা। গত এক দেড় মাসের মধ্যে ওই আলুর দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এতে আলুর দাম আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরখণ্ড এবং উত্তর প্রদেশে আলু চাষে মার খেয়েছে। রাজ্যের আলুর চাহিদা বাড়বেই বলে ব্যবসায়ীরা জানান। খুচরো বাজারে ইতিমধ্যে সাদা ও লাল আলুর দাম ২০-২৫ টাকা করে কিলো। চাষিরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ ব্যবসায়ী স্থানীয় হিমঘরের বদলে এ বার কৃষকদের থেকে কেনা আলু অসম, বিহারের হিমঘরে মজুত রাখা শুরু করে দিচ্ছে।
ধূপগুড়ি থেকে ইতিমধ্যে ৪৩টি মালগাড়ি বোঝাই করে ৭৫ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন আলু পার্শ্ববর্তী রাজ্যের হিমঘরে মজুত করা হয়েছে। তার মধ্যে অসমে ৩৪টি এবং বিহারে ৫টি মালগাড়ি বোঝাই করে আলু গিয়েছে। উত্তরবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির ধূপগুড়ির সাধারণ সম্পাদক স্বপন দত্ত বলেন, “আমরা সাধারণ কৃষকদের থেকে আলু কিনে সামান্য লাভে ভিন রাজ্যে বিক্রি করি। হিমঘরে আলু রেখে গতবার সরকারি নিষেধাঞ্জার কারণে বহু ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার তাই আগেই বহু ব্যবসায়ী আলু কিনে ভিন রাজ্যে বিক্রি করেছেন। আবার কেউ কেউ সে রাজ্যের হিমঘরে মজুত রেখেছেন।”
গতবার ব্যবসায়ীরা উত্তরবঙ্গের ৪৭ টি হিমঘরে ৭ লক্ষ ৫০ মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন হিমঘরে ৭০ শতাংশ আলু মজুত রাখলেও কৃষকরা বাকি ৩০ শতাংশ আলু মজুত করতেন। সে চিত্রও এবার বদলে গিয়েছে। এবার উত্তরবঙ্গের হিমঘরগুলি পূর্ণ হলেও মোট আলুর মাত্র ১০-১৫ শতাংশ মজুত রেখেছে ব্যবসায়ীরা। ভবিষ্যতে আলুর দাম ভাল মিলবে এই আশায় কৃষকরা খোলা বাজারে আলু না বিক্রি করে হিমঘরে তা মজুত রেখেছেন। এতে চাহিদা অনুযায়ী যোগান না থাকায় দাম ক্রমশ বাড়ছে। পরবর্তীতে সরকার ভিন রাজ্যে আলু রফতানিতে কোনও রকম নিষেধাজ্ঞা জারি করলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
জলপাইগুড়ি হিমঘর মালিক সংগঠন সম্পাদক প্রদীপ প্রসাদ বলেন, “স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এ বার খুবই কম পরিমাণ আলু হিমঘরে রেখেছেন। তাঁরা বাইরের হিমঘরে এ বার আলু মজুত করেছেন বলে শুনেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy