এমন শিল পড়েই বিপত্তি ঘটে। —নিজস্ব চিত্র।
প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে চলা শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হল বোরো ধানের। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার বাড়ির টালির ছাদ। ঝড়ে তালগাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হল এক মহিলারও।
মঙ্গলবার বিকেলে মালদহের দুটি ব্লকে ওই ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়। গাজলের ময়না এলাকায় ঝড়ের পাশাপাশি সামান্য বৃষ্টি হলেও রতুয়া-২ ব্লকে শিলাবৃষ্টিতে ব্লকের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মৃতার নাম নুরসেবা খাতুন (২০)। তাঁর বাড়ি গাজলের ময়না পাইকপাড়ায়। ঝড় দেখে তিনি মাঠে গবাদি পশু নিয়ে আসতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় একটি তালগাছ উল্টে পড়লে তার তলায় চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এ ছাড়া গাজলের ময়না, অহোড়া এলাকায় ঝড়ের দাপট এতটাই ছিল যে ঝড়ের দাপটে বোরোধান ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সব্জি চাষেরও। তছনছ হয়ে গিয়েছে ঢেঁড়শ ও পটল খেতেরও। গাজলে ঝড়ের পাশাপাশি এ দিন একই সঙ্গে রতুয়া-২ ব্লকে ঝড় না হলেও ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়। ঝড়ে কয়েকহাজার বিঘা বোরো ধানের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য টালির বাড়ির ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পাঁচ হাজারেরও বেশি বাড়ির টালির ছাদ ভেঙেছে বলে পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে।
চাঁচলের মহকুমাশাসক সঞ্জীব দে বলেন, “বিডিও এলাকায় গিয়েছেন। তাঁর কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। ত্রাণের ত্রিপল মজুত রয়েছে। রিপোর্ট পেলেই দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিলি করা হবে।” রতুয়া-২ ব্লকের বিডিও সুনীল ভাসাল বলেন, “আজ, বুধবার দুপুরের আগে তালিকা তৈরি করা সম্ভব হবে না। শিলাবৃষ্টিতে টালির ছাদ ভাঙার পাশাপাশি বোরো ধান চাষের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে।” এলাকা বিশেষ আম চাষ না হওয়ায় আমের তেমন ক্ষতি হয়নি জানিয়েছেন মালদহ জেলার উদ্যান পালন বিভাগের সহ অধিকর্তা রাহুল চক্রবর্তী।
প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যায়, এ দিন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ গাজল ও রতুয়া-২ ব্লকে ওই ঝড় ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। রতুয়ার শ্রীপুর-১, শ্রীপুর-২, সম্বলপুর ও মহারাজপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকায় ওই শিলাবৃষ্টি হয় বলে পঞ্চায়েত ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। রতুয়ায় একেকটি শিলার ওজন ছিল প্রায় ১০০-২৫০ গ্রাম ওজনের ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। চাষিরা জানান, এখন বোরো ধান প্রায় পাকার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে গাছ বেশ ভার হয়েছে। ভারী শিলার দাপটে তাই বিঘার পর বিঘা বোরো ধানের খেত মাঠেই নুইয়ে পড়েছে। বোরো ধানের খেতের প্রায় অর্ধেক শিলার দাপটে পড়ে যাওয়ায় মাথায় হাত চাষিদের।
রতুয়া-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তজিবুর রহমান বলেন, “চারটি পঞ্চায়েতে মাটির বাড়ির বাড়ির টালির ছাদ উড়ে গিয়েছে। চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে।” শ্রীপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য নুরুল ইসলাম ১৮ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন।” তিনি জানান, খেতের ৫০ শতাংশ ধান শিলার দাপটে মাটিতে ঝড়ে পড়েছে। একই অবস্থা বরাইলের আবদুল মাতিন রাণীনগরের সলিমুদ্দিন আহমেদের। তাঁদের কথায়, “ধান পাকার মুখে যে এভাবে পথে বসতে হবে ভাবতে পারিনি। প্রশাসন পাশে না দাঁড়ালে কী করব জানি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy