নিবার্চনকে ঘিরে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা।
এঁরা বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন। কেউ আবার এক সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও বহু বছর আগে সেই পাট চুকিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে এঁরা রাজ্যে শাসক দলে নেতা। মঙ্গলবার অবশ্য এই পরিচয়েই বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে দিনভর তাঁরা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বলে বিরোধী সংগঠনগুলির অভিযোগ। ছাত্র সংসদের নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র তোলা এবং জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হাজির থাকতে দেখা গিয়েছে পাহাড়ের তৃণমূল নেতা বিন্নি শর্মা, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি নির্ণয় রায়-সহ আরও কয়েকজনকে। কলা ভবনের কাছে একটি ক্যান্টিনে বসে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নিয়ে ঘাঁটি গেড়ে অবিরাম ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। কাউকে নির্দেশ দিয়েছেন, কাউকে বুঝিয়েছেন প্রার্থী হওয়ার জন্য, কাউকে ডেকে চা মিষ্টি খাইয়েছেন। যা দেখে এসএফআই, ছাত্র পরিষদের নেতাদের একাংশের অভিযোগ নরমে গরমে কাজ হাসিল করতেই ‘বহিরাগতদের’ আসরে নামিয়েছে শাসক দল। যদিও তৃণমূলের তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিন্নি শর্মা। তিনি বলেন, “দাদাগিরির ব্যাপার কোথায়? পাহাড়ের ভাইবোনেরা পড়ে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। এমন তো এসেই থাকি। এ দিন তেমনই গিয়েছিলাম। অন্য প্রশ্ন উঠছে কেন?”
অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ বিভাগে এ দিন মনোনয়ন পত্র তোলার দিন ছিল। সেই কাজও তদ্বির করেন তাঁরা। যা নিয়ে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি দাদাগিরির অভিযোগ তুলেছে। কেন না ল’ বিভাগে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ছাড়া অন্যান্য কোনও বিরোধী ছাত্র সংগঠন মনোনয়ন পত্র তুলতেই পারেনি। মনোনয়ন পত্র যে দেওয়া হচ্ছে সোমবার সাড়ে চারটে নাগাদ সেই নোটিশ দেওয়া হয়। শীতের সময় তখন সন্ধ্যা। রাতে কয়েকজন জানতে পারলেও মঙ্গলবার বেলা ১২ টার মধ্যে মনোনয়ন পত্র তোলার ব্যবস্থা তাঁরা করে উঠতে পারেনি। অথচ তৃণমূলের ওই নেতারা মূল ক্যাম্পাসে ঘাঁটি গেড়ে বসে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতাদের দিয়ে নির্বিঘ্নে সমস্ত মনোনয়ন পত্র তুলিয়েছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে ‘রিমোট কন্ট্রোল’ ওই নেতারাই পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। কাউকে মনোনয়ন পত্র তুলতেই দেননি। ক্যাম্পাসে থেকে একাধিক মোবাইলে ঘন ঘন কথা বলতে দেখা গিয়েছে।
ভোট চলাকালীন ক্যাম্পাসে তৃণমূল নেতা বিন্নি শর্মা।
যদিও তৃণমূলের অন্দরের খবর বিশ্ববিদ্যালয়ের তাঁদের সংগঠনের সমর্থকদের একাংশ প্রার্থী হতে বেঁকে বসেছিলেন। বিশেষ করে পাহাড়ের পড়ুয়ারা। তাতেই প্রমাদ গোনেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি। পরে পাহাড়ের তৃণমূল নেতা বিন্নি শর্মার হস্তক্ষেপে পাহাড়ি পড়ুয়াদের ক্ষোভ মেটাতে প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই সময় তৃণমূলের সভাপতি কয়েক জনের কাছে অনুনয় বিনয় করেন বলেও দলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি বলেছেন, “আমরা কাউকে জোর করি না। অনুরোধ করি। কেউ রাজি হলে হবেন। দাদাগিরির ব্যাপার নেই।”
বিকেলে তৃণমূলের ওই নেতারা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান। এত সবের পর সন্ধ্যা নামতেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফের উত্তেজনা দেখা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হস্টেলে নিয়ন্ত্রণ আনতে রাতে তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের লোকজন গিয়ে হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ। তা নিয়ে রাতে তুমুল গোলমাল বাঁধে। হস্টেলের ছাত্ররা বেরিয়ে পড়েন। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ যায়।
মঙ্গলবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy