ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের পরিচালন সমিতির ভোটে জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার হয়ে ভোট দেবেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি। রবিবার ‘জরুরি’ বৈঠক ডেকে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সমিতি। সপ্তাহখানেক আগেই সংস্থার কার্যকরী সমিতি বৈঠক করে সিএবিতে জেলা প্রতিনিধি হিসেবে অশোকপ্রসাদ রায়কে ভোটাধিকারের ক্ষমতা দেওয়া হয়। সেই প্রতিলিপি সিএবিতে পাঠিয়ে দেয় জেলা ক্রীড়া সংস্থা। রবিবার জরুরি বৈঠক করে সে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেছে সংস্থা। স্থির হয়, এপি রায় সিবিএবিতে জেলার প্রতিনিধি হিসেবে থাকলেও, তাঁর ভোটাধিকার থাকবে না। সিএবির নির্বাচনে জলপাইগুড়ির হয়ে ভোট দেবেন জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। এই সিদ্ধান্তের পরেই শুরু হয়েছে বির্তক। সৌরভবাবু জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যও নন, তাই তাকে কেন ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হবে তা উল্লেখ করে রবিবারের বৈঠকে এক ক্লাবের তরফে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া হয়েছে। সিএবিতে জেলার প্রতিনিধি থাকবেন এক জন আর ভোট দেবেন অন্য জনএমন সিদ্ধান্ত জেলা ক্রীড়া সংস্থায় নজিরবিহীন বলে বিভিন্ন ক্লাবের তরফে দাবি করা হয়েছে।
রবিবারের বৈঠকের কার্যবিবরণীতে ‘অনিবার্য কারণে’ এই সিদ্ধান্তের কথা নথিবদ্ধ করা হয়। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার বলেন, “সিএবিতে এপি রায় জেলার প্রতিনিধি হলেও, ভোট দেবেন সৌরভ চক্রবর্তী।” শাসক দলের চাপেই এই সিদ্ধান্ত বদল কিনা সে প্রসঙ্গে অবশ্য অঞ্জনবাবু মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কথায়, “বৈঠকে সকলের মত নেওয়া হয়েছে। সংস্থার সদস্য সব ক্লাবকেও জানানো হয়েছে। সংস্থার সিদ্ধান্ত নিয়ে এর বেশি মন্তব্য করা সম্ভব নয়।”
গত ১২ জুলাই জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সমিতির বৈঠকে এপি রায়কে সিএবির প্রতিনিধি এবং ভোটদাতা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। গত দেড় দশক ধরে তিনি-ই সংস্থার প্রতিনিধি রয়েছেন। হঠাত্ করে শনিবার সন্ধ্যা থেকে সদস্যদের উপর শাসক দলের চাপ শুরু হয় বলে অভিযোগ। সংস্থার পদাধিকারী থেকে সদস্যদের কাছে ক্রমাগত তৃণমূলের জেলা নেতাদের ফোন আসতে শুরু করে। জেলার এক জনপ্রতিনিধি প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা ক্রীড়া সংস্থার কর্তাদের ফোন করে সৌরভবাবুকে সিএবির প্রতিনিধি করার জন্য ‘অনুরোধ’ করেন বলে অভিযোগ। ক্রীড়া সংস্থার সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ফোনে কথা বলেন। তারপরেই রাত দশটা নাগাদ জরুরি বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রবিবারের বৈঠকে অবশ্য একাংশ সদস্য দাবি করেন, এ ভাবে পুরোপুরি ‘চাপ’ মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সে কারণেই এপি রায়কে প্রতিনিধি রেখে সৌরভবাবুকে ভোটাধিকার দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে। সৌরভবাব চাপ দেওয়া বা অনুরোধ করার অভিযোগ উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, “বরাবরই আমি খেলার সঙ্গে যুক্ত। জেলা ক্রিকেট দলে বেশ কয়েক বছর খেলেছি, জেলার প্রতিনিধিত্বও করেছি। সে কারণেই হয়ত ডিএসএ আমাকে প্রস্তাব দিয়েছে। দলের সঙ্গে আলোচনা করেই বক্তব্য জানাব।”
জেলা ক্রীড়া সংস্থার এক সদস্যের কথায়, “যে ভাবে তৃণমূলের চাপ শুরু হয়, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। শাসক দলের সেই চাপ সহ্য করার ক্ষমতা ছিল না। সিএবির প্রতিনিধিত্বের থেকে ভোটাধিকার নিয়েই ওরা বেশি আগ্রহী ছিলেন।” তৃণমূল সূত্রে দাবি করা হয়েছে, জেলা ক্রীড়া সংস্থার আগের বৈঠকের সিদ্ধান্তে আইনগত ত্রুটি ছিল। সে কারণেই সিদ্ধান্ত বদল। সৌরভবাবু নিজে জেলার ৫টি ক্লারের সম্পাদক ও ১৭টি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত। তাই তাঁকে প্রতিনিধি বাছা হয়েছে বলে তৃণমূলের দাবি। জলপাইগুড়ির প্রাক্তন সাংসদ তথা সিপিএমের সদর জোনাল কমিটির সম্পাদক জিতেন দাসের কথায়, “তৃণমূল নিজেদের জন্য পৃথক আইন বানিয়েছে। তাই সংস্থার সঙ্গে যুক্তই নন এমন কাউকে ভোটাধিকার দেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy