ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া নিয়ে শুক্রবার রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ময়নাগুড়ি কলেজ। সেখানে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হাঁসুয়া, লাঠি, রড নিয়ে সংঘর্ষ হয়। কলেজ পড়ুয়া নন, এমন অনেকেই ওই সংঘর্ষের সময়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বলে অভিযোগ। পুলিশের সামনে পাথর বৃষ্টি শুরু হয়। সংঘর্ষের জেরে প্রায় আধ ঘণ্টা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। চলে ব্যাপক ভাঙচুর। ভাঙচুর করা হয় সাংবাদমাধ্যমের আলোকচিত্রীর মোটরবাইকও। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে কয়েক দফায় লাঠি চালাতে হয়। আনা হয় জল কামান ‘বজ্র’। প্রায় এক ঘণ্টার সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন জখম হন। তাঁদের মধ্যে ৪ জনকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকিদের স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরে তৃণমূল এবং বিজেপি পুলিশের কাছে একে অন্যের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ জানিয়েছে।
কলেজে গোলমালের রেশ এসে পড়ল জাতীয় সড়কে।
যুযুধান (বাঁ দিকে) এবিভিপি ও (ডান দিকে) টিএমসিপি সমর্থকেরা।
গণ্ডগোল থামাতে উদ্যোগী পুলিশ, র্যাফ।
জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর বলেন, “কলেজের ভিতরে গোলমাল হয়নি। বাইরে কিছু লোক ঝামেলা করার চেষ্টা করে। কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হয়। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।” আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডেভিড ইমন লেপচা অবশ্য পুরো ঘটনা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। ময়নাগুড়ি কলেজের টিচার ইনচার্জ সুস্মিতা পণ্ডিত বলেন, “কলেজের ভিতরে কোনও গোলমাল হয়নি। যে ছাত্ররা মনোনয়ন পত্র নিয়ে হাজির হয়েছে, তাঁদেরটা জমা নেওয়া হয়েছে। এদিন ১৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। কলেজের বাইরে কী হয়েছে বলতে পারব না।”
আগামী ২৮ জানুয়ারি জেলার ৭টি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন। গত বুধবার ওই নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র তোলা নিয়ে এসএফআই এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের সংঘর্ষে ধূপগুড়ি সুকান্ত মহাবিদ্যালয়ে এক পুলিশ কর্মী সহ ১৭ জন জখম হন। শুক্রবার থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও এবিভিপি সমর্থক ছাত্র এবং বহিরাগতদের তাণ্ডবে ময়নাগুড়ি কলেজ লাগোয়া এলাকা উত্তপ্ত হয়।
এদিনের ঘটনায় আতঙ্কিত ময়নাগুড়ি কলেজের কয়েকজন ছাত্র জানান, বেলা সাড়ে ১১টা থেকে মনোনয়ন পত্র জমা নেওয়ার কাজ শুরু হয়। শুরুতে এসএফআই-র সমর্থক ১৪ জন ছাত্র মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে চলে যান। এর পরে আরও কিছু এসএফআই এবং পিএসইউ সমর্থক মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গেলে তাঁদের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকরা তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ। বেলা সাড়ে ১২ টা নাগাদ বিদ্যার্থী পরিষদের সমর্থকরা কলেজের সামনে পৌঁছতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বেলা ১ টা থেকে উত্তেজনা চরমে ওঠে। কলেজের সামনে জাতীয় সড়ক রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। শুরু হয়ে যায় ভাঙচুর। হাঁসুয়া হাতে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায় দুই দলের সমর্থদের।
অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের অভিযোগ, তাঁদের সংগঠনের সমর্থক ছাত্ররা মনোনয়ন পত্র জমা দিতে এদিন একটি গাড়ি নিয়ে কলেজের সামনে যান। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকরা ঢিল ছুড়ে গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে ওঁদের তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ। সংগঠনের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির আহ্বায়ক দীপক দাস বলেন, কিছুক্ষণ বাদে প্রার্থীরা ফের কলেজের সামনে গেলে তাণ্ডব শুরু হয়। পাথর বৃষ্টি চলে। হাঁসুয়া, লাঠি, লোহার রড নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকরা ঝাঁপিয়ে পড়েন। বিদ্যার্থী পরিষদ এবং বিজেপি যুব মোর্চার ১৫ জন জখম হন। যুব নেতা সুব্রত সরকারের মাথা ফাটে। অমিত রায়ের হাত ভেঙে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তাঁদের জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ভাঙচুর হওয়া মোটরবাইক।
পুলিশের সামনেই দাপাল বহিরাগতরা
যদিও বিদ্যার্থী পরিষদের অভিযোগ অস্বীকার করেন জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতৃত্ব। তাঁদের অভিযোগ, চারটি পিকআপ ভ্যান বোঝাই করে যুব বিজেপি এবং বিদ্যার্থী পরিষদের সমর্থকরা কলেজের সামনে নেমে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের উপরে হামলা চালায়। ভেঙে চুরমার করা হয় অন্তত ২০টি বাইক। তৃণমূল নেতা হরিপদ রায়ের বাড়ি ও দোকানে ভাঙচুর চলে। সংগঠনের জেলা সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, “কালা রায় নামে এক তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মাথা ফাটে। ষষ্ঠী দাস নামে আরও একজনের কোমরে লেগেছে। তাঁদের জলপাইগুড়ি হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
এদিকে, কলেজ নির্বাচনে হলদিবাড়ি কলেজের ভোট বয়কট করল ছাত্রপরিষদ এবং ছাত্র ব্লক। কলেজ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র পেশের প্রথম দিন ছাত্রপরিষদ ও ছাত্রব্লক সমর্থিত প্রার্থীরা কোনও মনোনয়নপত্র জমা দেননি। অন্য ছাত্র সংগঠনের সমর্থিত প্রার্থীরা শান্তিপূর্ণ ভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। ছাত্র পরিষদের হলদিবাড়ি ব্লকের সভাপতি সঞ্জয় সাহা বলেন, “কলেজ নির্বাচনের নামে সমস্ত কলেজে সন্ত্রাস চলছে। আমরা আমাদের সমর্থকদের বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারি না। সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আমরা ভোট বয়কট করেছি।” ফরওয়ার্ড ব্লকের হলদিবাড়ি ব্লকের সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ সিংহ বলেন, “জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আমরা হলদিবাড়ি কলেজে কোনও প্রার্থী দিইনি।”
শুক্রবার দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy