শেষ পর্যন্ত থানায় অভিযোগ দায়ের করা হল কোচবিহারের পরিচিত একটি অর্থলগ্নি সংস্থার কর্ণধারের বিরুদ্ধে। ‘রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল’ নামে ওই সংস্থার চেয়ারম্যান অর্চনা সরকার-সহ ২২ জনের বিরুদ্ধে বুধবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন কোচবিহারের মহকুমাশাসক বিকাশ সাহা। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “ওই সংস্থার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মহকুমাশাসকের অভিযোগ ওই মামলার সঙ্গেই যুক্ত করা হয়েছে।” আমানতকারীদের একাংশ বছর খানেক ধরেই কোচবিহার মহকুমা প্রশাসনের কাছে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করছিলেন। কিন্তু সে সব অভিযোগ আর পুলিশের দোরগোড়া পর্যন্ত পৌঁছয়নি। তা নিয়ে জলঘোলাও হয়েছিল বিস্তর। রাজনৈতিক দলগুলি প্রশ্নও তুলেছিল। এই অবস্থায় বুধবার রাতে মহকুমাশাসক ওই অভিযোগ দায়ের করেন।
প্রায় এক বছর আগে থেকে টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কোচবিহারের রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল সংস্থার বিরুদ্ধে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই অভিযোগে কোচবিহারের বাসিন্দা একাধিক ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের সঙ্গে শিলিগুড়ির বাসিন্দা জীবন পুরকায়স্থ ও জয়ন্ত সেনগুপ্ত, হাসিমারার অশোক তেওয়ারি, কলকাতার শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায়, কৃষ্ণনগরের আদিত্য জানার নাম রয়েছে। আমানতকারীদের অভিযোগ পেয়ে প্রশাসনের তরফে তা খতিয়ে দেখে যে তথ্য মিলেছে তারও উল্লেখ রয়েছে। প্রশাসনের সন্দেহ, অল্প সময়ে আমানতের টাকা দ্বিগুণ করার প্রলোভন দিয়ে বাজার থেকে ৪০০ কোটির বেশি টাকা তুলে নিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থার চিফ ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সহ শীর্ষ কর্তাদের নামে বেনামে আরও প্রায় ৫০ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হদিশ পেয়েছেন তারা। রয়্যাল ইন্টার ন্যাশনাল শেয়ারর্স অ্যান্ড ট্রেডিং প্রাইভেট লিমিটেড , রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডকম প্রাইভেট লিমিটেড সহ ৭ টি সংস্থা খুলে আমানতকারীদের থেকে তোলা ওই বিপুল অঙ্কের টাকার প্রতারণা করা হয়েছে অভিযোগ করা হয়েছে। মোট ১৬ পৃষ্ঠার এফআইআরে ওই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন মহকুমা শাসক।
এতদিন বাদে মহকুমা শাসক পুলিশে অভিযোগ দায়ের করলেন কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলের কোচবিহারের নেতাদের অনেকেই। যেমন, ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক- উদয়ন গুহ বলেছেন, “এতদিন নীরব থাকার কারণটা কি তা নিয়ে আমানতকারীরা প্রশ্ন তুলতেই পারেন।” তাঁর সন্দেহ, সিবিআই তদন্তে নামলে অনেকের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে বলেই নানা মহলে তৎপরতা দেখানো হচ্ছে। সিতাইয়ের কংগ্রেস বিধায়ক কেশব রায় বলেন, “বহুদিনের অভিযোগ। প্রশাসন আগে তৎপর হলে কেউ গা ঢাকা দিতে পারতেন না। তাই দেরিতে ওই অভিযোগ কেন করা হল সেটাও সিবিআইয়ের খতিয়ে দেখুক।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে জানান, সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারদের কাছে সব সন্দেহের কথাই জানানো হবে। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “একে অভিযোগ দেরিতে জমা পড়েছে। তার ওপর তথ্য জোগাড়ে সময় লেগেছে। বিরোধীরা ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে।”
এই ব্যাপারে কোচবিহারের সদর মহকুমাশাসকের যুক্তি, “রয়্যালের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার প্রথম অভিযোগ গত ডিসেম্বরে আমাদের কাছে এসেছে। ওই ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করার পরে আমানতকারীদের অনেকে টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় সময় নিয়ে পদক্ষেপ করার আর্জি জানান। এ ছাড়াও সংস্থাটির কাজকর্ম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে কিছুটা সময় লেগেছে। ১৬ পাতার তথ্য সহ পুলিশে এফআইকরা হয়েছে। ওই সব তথ্য সেবি, শ্যামল সেন কমিশন ও রেজিস্টার অফ কোম্পানিজ কর্তৃপক্ষের হাতেও দেওয়া হবে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১০ সাল থেকে রয়্যাল গ্রুপের যাত্রা শুরু। কোচবিহারে চান্দামারির বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় সরকার ওই সংস্থা গড়ে তোলেন। গত বছর সংস্থার তরফে মৃত্যুঞ্জয় সরকারের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এর পরে মৃত্যুঞ্জয়বাবুর স্ত্রী অর্চনাদেবী কর্ণধার হয়ে ওঠেন। গত বছরের এপ্রিল থেকে আমানতকারীদের টাকা ফেরানো বন্ধ হয়। পুলিশের কাছে অন্তত ১০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে গা ঢাকা দিয়ে থাকা অর্চনা সরকারের সন্ধান মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy