জলপাইগুড়ি শহরে ক্রমশ বাড়ছে বহুতল ফ্ল্যাটবাড়ির সংখ্যা। করলা ব্রিজ এলাকায় সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
জলপাইগুড়ি শহরের হাল-হকিকত নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এখনও হচ্ছে। গবেষকদের একাংশের মত, ক্রমশ জনসংখ্যা এবং বসতি এলাকা বাড়ায় শহরের ফাঁকা জায়গা কমেছে। যেটুকু যা জমি পড়ে রয়েছে, তার উপরও নজর পড়েছে প্রমোটারদের। অপরিকল্পিতভাবে তৈরি হচ্ছে বহুতল।
পার্কিং জোন ছাড়া ব্যস্ততম রাস্তা ঘেঁষে তৈরি হয়েছে শপিং মলও। ফুটপাত দখল করে দোকান তৈরিও এখন নতুন কোনও ঘটনা নয়। ফলে, রাস্তায় বেরোলে চলাফেরা করতেই নানা সমস্যায় পড়ছেন শহরবাসী। দুর্ঘটনাও নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের মনোরোগ বিশেসজ্ঞ স্বস্তিশোভন চক্রবর্তী বলেন, “দুর্ঘটনা বেড়েছে। মানসিক অবসাদে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। নাগরিক জীবনে আতঙ্ক, নিরাপত্তাহীনতা, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা প্রকট হয়েছে।”
জলপাইগুড়ি বিএড কলেজের অধ্যক্ষ শুভেন্দু মোদকের মতে, যে ভাবে এলাকার সম্প্রসারণ এবং জনসংখ্যার চাপ বাড়লেও শহরের পরিকাঠামোর সেই আধুনিকীকরণ হয়নি। তাঁর কথায়, “বহুতল বাড়ি এবং শপিং মলের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সেখানে কতটা ফাঁকা জায়গা রাখা উচিত, সেটা কি দেখা হচ্ছে?”
এখানেই শেষ নয়। প্রশ্ন উঠছে, কোন শহরে কতটা রাস্তা রয়েছে? সেখানে ক’টা গাড়ি চলতে পারে, তার একটা আনুপাতিক হিসেব থাকা দরকার। সেটা জলপাইগুড়ি পুরসভায় আছে কি?
পুরকর্তাদের কাছে ওই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই তথ্য তাঁদের কাছে নেই। আইনজীবী জয়দীপ ভৌমিক বলেন, “এটা কোনও যুক্তি নয়। ৫০ বছর আগে যে রাস্তা তৈরি হয়েছে, তার উপর দিয়ে এখনও এত গাড়ি চলায়, শহরের যে দশা হওয়া উচিত, তাই হয়েছে।”
আপাতত এলাকা বাড়িয়ে পুরসভাকে কর্পোরেশনে উন্নীত করার মধ্যে যানজটের যন্ত্রণা থেকে মুক্তির পথ খুঁজছে জলপাইগুড়ি। মাঠ সংরক্ষণ করা, বিকল্প রাস্তা তৈরি, ফুটপাত উদ্ধার, ফ্লাইওভার তৈরির পাশাপাশি শহরের কিছু রাস্তাকে পথচারীদের জন্য নির্দিষ্ট করার দাবি জোরাল হচ্ছে ক্রমশ।
পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, শহরের এলাকা বাড়াতে পুরসভাকে কর্পোরেশনে উন্নীত করা জরুরি। ওই বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে।”
শহরের প্রাণকেন্দ্র দিনবাজার, স্টেশন মোড়, থানা মোড় ও কদমতলা সংলগ্ন এলাকা ও তার বাইরে কালেক্টরেটের আশপাশ প্রশাসনিক এলাকা। সেটিকে জড়িয়ে রয়েছে ডিবিসি রোড, টেম্পল স্ট্রিট, মার্চেন্ট রোড, স্টেশন রোড, শিরিষতলা থেকে কদমতলা হয়ে পাণ্ডাপাড়া রোড, পাহাড়পুর মোড় থেকে এক দিকে করলা সেতু হয়ে দিনবাজার। অন্য দিকে, পিডব্লুডি মোড় এবং কদমতলা থেকে ৭৩ মোড় পর্যন্ত পুরনো সড়ক।
জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সদর শহরে প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। পুরসভার লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিকশা রয়েছে পাঁচ হাজার। তার দ্বিগুণ রিকশা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে শহরে ঢুকছে। বেড়েছে অটো এবং টোটো রিকশা। তার উপরে আবার একই রাস্তায় বাস ও ট্রাক চলে। মোহনবাবু জানান, শহরের প্রতিটি রাস্তা চওড়া করার কাজ শুরু হয়েছে। ফুটপাত বের করে রেলিং দিয়ে ঘেরা হবে।
জলপাইগুড়ির ট্রাফিক পুলিশের ওসি সৈকত ভদ্র বলেন, “ট্রাফিক আইন অনেক কিছু রয়েছে। অনেক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পথচারী এবং যানবাহনের চাপে সড়কগুলি এত সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ছে যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা কল্যাণ চক্রবর্তীরও বক্তব্য, পুরসভা দিয়ে নাগরিক পরিষেবা দেওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না। এলাকা বাড়িয়ে কর্পোরেশন গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে। এটা হলে বিকল্প রাস্তার সন্ধান সহজ হবে।”
পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের প্রমোদ মণ্ডলের বক্তব্য, শহরের শান্তিপাড়া, বেগুনটারি, মাদ্রাসা, আইএমএ মাঠ সংলগ্ন এলাকায় পার্কিং জোন গড়া দরকার। রিকশা এবং যানবাহনের জন্য রাস্তাগুলি নির্দিষ্ট করতে হবে। রাস্তা দখল করে থাকা গুমটি তুলে দিনবাজার ও কদমতলার বাইরে শপিং কমপ্লেক্স তৈরি করে পুনর্বাসনের কথা ভাবা যেত পারে।
পুরসভার কর্তারা জানান, আপাতত দু’টি বিকল্প রাস্তার কথা ভাবা হয়েছে। একটি ৩ নম্বর গুমটি থেকে রেল লাইনের পাশ দিয়ে মোহিতনগরে চলে যাবে। বালাপাড়া থেকে টাউন ক্লাব স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে শহরের রাস্তায় মিলবে।
জলপাইগুড়ি চেম্বার অব কমার্সের সদস্য অভিজিৎ মিত্র জানান, সব্জি, মাছ এবং মণিহারির পাইকারি বাজার শহরের কেন্দ্রস্থলে ওই বাজারে দৈনিক গড়ে তিনশোটি পণ্য সামগ্রী নিয়ে যাতায়াত করছে। বাজারগুলি কর্পোরেশন গঠনের আগে শহরের বাইরে সরানো কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে চেম্বার অব কমার্স মনে করে, শহর বাড়লে শুধু যানজট কমবে না, ব্যবসা বাড়বে। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
(শেষ)
কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু
বলার থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-শহরের নাম’।
অথবা চিঠি পাঠান,
‘আমার শহর-শহরের নাম’,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,
শিলিগুড়ি ৭৩৪০০১।
প্রতিক্রিয়া জানান এই ফেসবুক পেজেও:
www.facebook.com/anandabazar.abp।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy