পুরাতন মালদহের মঙ্গলবাড়ি এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে যানজট।
বাম পরিচালিত পুরবোর্ড থেকে শুরু করে তৃণমূল। দুই জমানাতেই যানজট মেটাতে বৈঠক হয়েছে একাধিক বার। জারি করা হয়েছে নানা নির্দেশিকা। তবে নজরদারির অভাবে পুরাতন মালদহ পুরসভায় যানজট চলছেই। যার ফলে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যানজটের জন্য নাজেহাল হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এর জন্য তাঁরা পুরসভা ও প্রশাসনের ভূমিকাকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, রাস্তার উপরেই গাড়ি পার্কিং থেকে শুরু করে চলছে ব্যবসা। ফলে রাস্তা সরু গলির রূপ নিচ্ছে। দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে চলাফেরা করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পুরসভা ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার জন্য শহরে বাড়ছে যানযট। এ দিকে, যানজট সমস্যা নিয়ে শুরু হয়েছে বাম ও তৃণমূলের রাজনৈতিক তরজা।
পুরাতন মালদহ পুরসভার সিপিএমের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ শুকুল বলেন, ‘‘যানজট মেটাতে আমরা তৎপর হয়েছিলাম। কোথায় গাড়ি পার্কিং হবে তা ঠিক করা হয়েছিল। তবে তৃণমূল ক্ষমতায় আসতেই নজরদারি না চলায় সমস্যা বেড়ে গিয়েছে। রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’’ যদিও সিপিএমের এমন অভিযোগ মানতে নারাজ পুরাতন মালদহ পুরসভার তৃণমূলের চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘বামেরা ন’বছর ধরে পুরসভায় ক্ষমতায় ছিল। তবে যানযট মেটাতে কোনও কাজই করেনি। আমরা ক্ষমতায় এসে তড়িঘড়ি পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। খুব শীঘ্রই শহরের যানযট সমস্যা মেটানো হবে।’’ পুরাতন মালদহ পুরসভায় যানযট সমস্যা নিত্য দিনের। বিগত বাম পরিচালিত পুরবোর্ড বছর তিনেক আগে সমস্যা মেটাতে তৎপর হয়। তৎকালীন পুরসভা কর্তৃপক্ষ মালদহ থানার পুলিশ ও প্রশাসনকে নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। রাস্তার উপরে গাড়ি পার্কিং থেকে শুরু করে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রেখে ব্যবসা বন্ধের উপরে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। তবে তা কার্যকর হয়নি। কারণ বৈঠক হওয়ার পরেই বদল হয় পুর বোর্ডের। দল ভাঙিয়ে পুর বোর্ডের দখল নিয়েছিল তৃণমূল।
সেই আমলেই যানজট মেটাতে হয়েছিল বৈঠক। সম্প্রতি ফের তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড যানজট সমস্যা মেটাতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠক হওয়ার পর পাঁচ মাস কেটে গেলেও সমাধান হয়নি। পুরাতন মালদহ পুরসভার উপর দিয়ে গিয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। জাতীয় সড়কের উপরে পুরসভার মঙ্গলবাড়ির বুলবুলি মোড়, চৌরঙ্গী মোড় ও কলেজ মোড়ে যানযট সমস্যা নিত্য দিনের হয়ে উঠেছে। জাতীয় সড়কের দু’পাশেই বেআইনি ভাবে ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের গাড়ি পার্ক করে রাখা হয়। সেই সঙ্গে জাতীয় সড়কের পাশেই অটো স্ট্যান্ড, রিকশা স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। রাস্তার একাংশ দখল করে বেআইনি ভাবে চলছে ব্যবসা। ফলে জাতীয় সড়ক সংকীর্ণ হয়ে যানজট লেগেই থাকে। জাতীয় সড়কের পাশাপাশি পুরাতন মালদহ পুরসভার নবাবগঞ্জ রুটেও একই সমস্যা। এই রুটের রাস্তাটি সাড়ে তিন মিটার চওড়া। রাস্তার দু’পাশে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রেখে ব্যবসায়ীদের একাংশ ব্যবসা করছেন। ফলে ফুটপাথ দিয়ে চলার পরিস্থিতি নেই। তার উপরে রাস্তার উপরে অটো, টোটো, রিকশা পার্ক করা হচ্ছে। দাঁড় করিয়ে রাখা হয় বড় গাড়িও। যার জন্য পথ দুর্ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে পুরাতন মালদহ পুরসভার মির্জাপুর মোড়ে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল এক স্কুল ছাত্রের। একটি ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। সেই সময় স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। এর পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি বৈঠক করেছিল পুরসভা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহ-নবাবগঞ্জ রুটের রাস্তা চওড়া করা হবে। এর জন্য ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া পুরসভার তরফ থেকে নো পার্কিং জোন করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা মানিক সরকার, দেবদুলাল দাস প্রমুখেরা বলেন, ‘‘যানযট সমস্যা মেটাতে বছর পর বছর বৈঠক হয়। সমস্যার একচুলও পরিবর্তন হয় না। এখন থেকেই পুরসভা ও প্রশাসন গুরুত্ব দিয়ে না দেখলে আগামী দিলে রাস্তাই থাকবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy