দার্জিলিঙে ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
সমতলে যাই-ই হোক না কেন, ‘দার্জিলিং পাহাড়ের বাসিন্দাদের আবেগ-অনুভূতিকে মর্যাদা দিয়ে’ পৃথক নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করল সিপিএম। শুক্রবার দার্জিলিঙের গোর্খা দুখ নিবারক সমিতি হলে দলের নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করেন রাজ্যের প্রাক্তন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। ওই ইস্তাহারে পাহাড়ে ষষ্ঠ তফসিলের চেয়েও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলা হয়েছে। সিপিএমের দার্জিলিং জেলা কমিটি মনে করে, পাহাড়বাসীর আবেগ-অনুভূতিকে মর্যাদা দিতে সংবিধান সংশোধন করে ষষ্ঠ তফসিলের চেয়েও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা করা দরকার। যাতে রাজ্যের মধ্যে থেকেই দার্জিলিং স্বায়ত্তশাসিত হতে পারে। পাহাড়ে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা, পৃথক কলেজ সার্ভিস কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন তৈরির দাবিও দলের ইস্তেহারে রয়েছে। পাহাড়ে কর সংগ্রহ ব্যবস্থা স্বচ্ছ করার দাবিও জানিয়েছে সিপিএম। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কমিশনে পাহাড়ের প্রতিনিধি রাখা, নেপালি ভাষাভাষীদের ভাষাগত সংখ্যালঘু হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিও রয়েছে ইস্তেহারে।
ওই ইস্তাহার প্রকাশের পরে দার্জিলিঙের লোকসভা প্রার্থী সমন পাঠককে পাশে নিয়ে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু বলেন, “পৃথক রাজ্য গঠনের জন্য পাহাড়ের বাসিন্দাদের দাবি এবং প্রত্যাশাকে মর্যাদা জানিয়েই বলছি, আমরা মনে করি, পাহাড় সমস্যা সমাধানের একমাত্র বিকল্প রাজ্যের মধ্যে থেকেই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন। রাজ্যের মধ্যেই থেকেই আরেকটি রাজ্যের মতো শক্তিশালী করতে হবে জিটিএকে। তবেই রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ এড়িয়ে পূর্ণ মাত্রায় স্বায়ত্তশাসন আসবে।” জিটিএ নিয়ে বর্তমান রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করে অশোকবাবু বলেন, “রাজ্য সরকার ক্রমাগত হস্তক্ষেপ করে চললে কোনও স্বায়ত্তশাসন শক্তিশালী হতে পারে না। যে বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে, সেগুলি নিয়ে রাজ্যের কোনও হস্তক্ষেপ বাঞ্ছনীয় নয়।” তৃণমূলের নাম করে অশোকবাবুর অভিযোগ, “ওঁরা পাহাড় সমস্যাকে শুধু আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হিসেবেই দেখেছে। পাহাড়ে রাজনৈতিক সমস্যা রয়েছে। সেটি আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব। এর জন্য পাহাড়ের ঐতিহ্য, সংস্কৃতিও বুঝতে হবে।” দার্জিলিঙের সিপিএম প্রার্থী সমন পাঠক বলেন, “আমরা যে ষষ্ঠ তফশিলের দাবি তুলেছি, তাতে যারা আদিবাসী নন, তাঁদের অধিকার রক্ষার ব্যবস্থাও থাকবে। ভূমি আইন থাকবে। শুধু বিচারব্যবস্থা ও স্বরাষ্ট্র দফতর রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত থাকবে।”
দার্জিলিঙকে ষষ্ঠ তফশিলের আওতায় আনার জন্য ২০০৫ সালের ৬ ডিসেম্বর জিএনএলএফের সঙ্গে রাজ্যের তৎকালীন বাম সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি সই হয়। যদিও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরোধিতায় সে সময়ে সেই প্রস্তাব পাশ হয়নি। ষষ্ঠ তফশিলের দাবি নিয়ে জিএনএলএফের কাছে লোকসভা ভোটে সমর্থন চাওয়া হবে কি না সে প্রশ্নের উত্তরে অশোকবাবু বলেন, “আমরা সব আঞ্চলিক দলের কাছেই সমর্থন চাইব। আমরা কারও ভোট ব্যাঙ্কে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর জন্য এই দাবি তুলিনি, মনে রাখতে হবে আশির দশকে আমরাই প্রথম ষষ্ঠ তফশিলের দাবি তুলেছিলাম।”
এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে মোর্চাকেও আক্রমণ করেছে সিপিএম। অশোকবাবুর অভিযোগ, “বিজেপি এবং তৃণমূল উভয়েই মোর্চার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাই পাহাড়ের বাসিন্দাদেরও মোর্চার উপর আর ভরসা নেই। এটা লোকসভা ভোটেই প্রমাণ হয়ে যাবে। একতরফা আবেগে এবার আর ভোট হবে না।” যদিও মোর্চার সহ সম্পাদক বিনয় তামাঙ্গ বলেন, “ষষ্ঠ তফশিলের দাবি ইতিমধ্যেই পাহাড়ের বাসিন্দারা প্রত্যাখ্যান করেছেন। সিপিএম যদি সেই দাবিকে আঁকড়ে থাকে তা হলে কিছু বলার নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy