বাদামতামে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে দার্জিলিং পাহাড়ে আরও বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি করলেন খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। শুক্রবার দার্জিলিঙের বাদামতামে দলের এক আক্রান্ত সমর্থকের বাড়ি সরেজমিনে দেখার পরে ওই আর্জি জানান মন্ত্রী। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “দলের তরফ থেকে দার্জিলিঙে বেশি করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের মোতায়েন করার দাবি জানানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকলে হামলার ঘটনা রোখা সম্ভব হবে। পাহাড়ে গণতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক এটাই চাই।” এই মুহূর্তে পাহাড়ে তিন কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
যদিও, পাহাড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের তৃণমূলের দাবির বিরোধিতা করেছে পাহাড়ের অনান্য দল। মোর্চার সহ সম্পাদক বিনয় তামাঙ্গ এ দিন মন্ত্রীর পাহাড়ে যাওয়াকে কটাক্ষ করেছেন। মোর্চার সহ সম্পাদকের দাবি, “লোকসভা ভোটে শিলিগুড়ি সমতলে খারাপ ফল করেছে তৃণমূল। তা আড়াল করে নজর অন্যদিকে ঘোরাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী পাহাড়ে ঘোরাফেরা করছেন বলে মনে হচ্ছে।” সিপিআরএমের তরফে অবশ্য দার্জিলিং জেলার সমতল এলাকাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাল্টা দাবি করা হয়েছে। শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য শাসক দলের পাহাড়ে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা কী রাজ্যের পুলিশের উপর অনাস্থা প্রকাশ করা নয়? এ প্রশ্নও তুলেছে সিপিআরএম-সহ অনেক দলই।
এদিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সার্কিট হাউসে সাংবাদিক বৈঠক করে দাবি করেন, “বাদামতামে ধন বাহাদুর তামাঙ্গের বাড়ির আগুন নিয়ন্ত্রণে না এলে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে বড় ধরনের বিপদ ঘটে যেত। শুধু ধনবাহাদুরবাবুর বাড়ি নয়, প্রায় দিনই জগৎ ছেত্রী নামে এক সমর্থকের বাড়িতে মোর্চা হামলা চালাচ্ছে। কালিম্পঙের সিঙ্গে এবং কাগেতেও দলীয় কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। মংপুতেও হামলা হয়েছে। সব ঘটনা নিয়েই পুলিশে অভিযোগ হয়েছে। অভিযুক্তরা দ্রুত ধরা পড়বে।”
মোর্চার সহ সম্পাদক বিনয় তামাঙ্গ পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “বাদামতামের বা অন্যনা ঘটনায় মোর্চার কেউ জড়িত নয়। উল্টে তৃণমূল সমর্থকরাই হামলা চালাচ্ছে। ঘটনা হল গৌতমবাবু নতুন করে প্ররোচনা দিতেই পাহাড়ে এসেছেন।” কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রসঙ্গে মোর্চার সহ সম্পাদক বলেন, “এখন পাহাড়ে বিপুল সংখ্যায় পর্যটক রয়েছেন। অশান্তি থাকলে কী পর্যটকরা থাকতেন? কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করলে উল্টে আতঙ্ক ছড়াবে। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে সাধারণ বাসিন্দাদের আতঙ্কিত করে পাহাড়ে সংগঠন বানাতে চাইছে তৃণমূল।”
একই সুরে তৃণমূলের বিরোধিতা করেছে অনান্য দলগুলিও। পাহাড়ের সিপিএম নেতা তথা দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কে বি ওয়াটার বলেন, “রাজনীতি করার জন্যই তৃণমূল পাহাড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনতে চাইছে। এখন পাহাড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন নেই।” কংগ্রেস নেতা লরেন্স পিটি লামাও পাহাড়ে শান্তি রয়েছে বলে দাবি করেছেন। সিপিআরএমের মুখপাত্র গোবিন্দ ছেত্রী পাল্টা দাবি করে বলেন, “পাহাড়ে শান্তি রয়েছে। কিন্তু সমতলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নানা হামলা দখলের অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। তাই সমতলেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা প্রয়োজন।”
এ দিন পাহাড়ে এসে মোর্চার সভাপতি তথা জিটিএ-এর সভাপতি বিমল গুরুঙ্গকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। বিভিন্ন এলাকায় মোর্চার হামলার অভিযোগ তুলে তাঁর প্রশ্ন, “পাহাড়ের গরিব মানুষদের আক্রমণ করে কী বিমল গুরুঙ্গ গোর্খাল্যান্ড আদায় করতে পারবেন?” তৃণমূলের অভিযোগের তালিকা অনুযায়ী, ভোটের ফল প্রকাশের দিন সিঙ্গেতে প্রণয় থাপা, অর্পণ শেরপা মোর্চা সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হন। তারপরে কাগেতে রামকৃষ্ণ বারাইলে, আক্কান্ত হয়েছেন। মংপুতে তৃণমূলের দলীয় পতাকা পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মংপুতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার অভিযোগ তুলেছে মোর্চাও। পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখার জন্য বিমল গুরুঙ্গ প্রতিদিন আর্জি জানাচ্ছেন বলে বিনয় তামাঙ্গ দাবি করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy