বন্ধ ঢেকলাপাড়া চা বাগানের একটি বুথে ভোটারদের লাইন। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।
ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে বাড়িতে আসেননি কোনও দলের প্রার্থী ও নেতারা। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় বীরপাড়া-সহ লাগোয়া এলাকা থেকে নেতা কর্মীরা এসে চা বাগানের ফুটবল মাঠে সভা করে গিয়েছিলেন। এ বারে অবশ্য দলমোড় চা বাগানের ফুটবল মাঠে একটিও সভা হয়নি। একটি করে মিছিল করে, বাগানে নামমাত্র প্রচার সেরেছে শাসক-বিরোধী সব দলই। বন্ধ চা বাগানে প্রচার হোক না কেন, ভোট নিয়ে বাগানের শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাগানে ফুটবল মাঠ লাগোয়া ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে লম্বা লাইন দেখা দিয়েছে। জেলা নির্বাচন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্ধ বাগানে ৮৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। প্রচার তেমন না জমলেও, বন্ধ বাগানে ভোটের হার আশি শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় প্রশাসনের তরফে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও, বাগানের বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, ভোট না দিলে তালিকা থেকে নাম কাটা যেতে পারে, এ আশঙ্কাতেই চড়া রোদে লাইনে দাঁড়ান শ্রমিকেরা।
বন্ধ দলমোড় চা বাগানে ভোটার সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি। এ দিন দুপুরে ভোট কেন্দ্রের বাইরে গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা জনাকয়েক মহিলা জানালেন, মাসখানেক ধরে বাগান বন্ধ থাকায় রোজগারও বন্ধ। প্রশাসন থেকে পাওয়া সরকার থেকে সপ্তাহে দু’টাকা কেজি দরে এক কিলো করে যে চাল-গম মেলে তা দিয়ে দু’দিনের বেশি চলে না। পানীয় জল সরবরাহ নিয়েও নানা সমস্যা রয়েছে। পাশের চা বাগান থেকে জল আনতে হয় শ্রমিকদের। চা বাগানেরই শ্রমিক গরিতা ওঁরাওয়ের কথায়, “বাগানে সপ্তাহে এক দিন চিকিৎসার সুযোগ মেলে। অর্ধাহারে দিন কাটে। ভোট দিলে দিন বদলাবে কি না জানি না, তবে নাম কাটা গেলে অনেক সমস্যা হবে। তাই ভোট দিতে এসেছি।”
বাগানের শ্রমিক সংগঠন নেতাদের খানিকটা উদাসীনই দেখা গিয়েছে। তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন নেতা ভগবান দাস ঠাকুরের কথায়, “লোকসভা নির্বাচনে বাইরের নেতারা চা বাগানে প্রচারে আসেননি। সে ভাবে প্রচারও হয়নি। ভোট না দিলে নাম কাটা যেতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেও অনেকে ভোট দিয়েছেন।” আরএসপি নেতা দশরাম টোপ্পোর কথায়, “এ বার নানা বিধি নিষেধ থাকায় সে ভাবে প্রচার হয়নি। তবুও আমরা মিছিল করেছি। ছোট সভাও হয়েছে। এ বার প্রার্থী বাগানে আসতে পারেননি।” যদিও, শ্রমিকদের একাংশের অভিযোগ, বন্ধ চা বাগানে প্রচারে এলে কবে বাগান খুলবে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া এড়াতে, অনেক নেতাই চা বাগানে প্রচারে আসেননি। যদিও বন্ধ বাগানের কেউ কেউ, ভোটের পরে হাল ফেরার আশাতেও রয়েছেন। বাগানের বাসিন্দা রঞ্জিত মঙ্গর বলেন, “স্ত্রী, সন্তান-সহ চার জনের সংসার। বাগান বন্ধ হওয়ার পরে পরপর দু’বেলা ভরপেট খাবার জোটে না। ভোট দিয়েছি, এ বার অপেক্ষা করে দেখি। যদি আমাদের কপালে ভাল কিছু হয়।”
বৃহস্পতিবার অবশ্য আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রের চার জন প্রার্থীই বাগানে যান। কুমারগ্রাম বাগানে ভোট দিয়ে সঙ্কোশ, নিউল্যান্ডস, রায়ডাক আটিয়াবাড়ি, কালচিনি চুয়াপাড়া-সহ বিভিন্ন বাগানে ঘোরেন তৃণমূল প্রার্থী দশরথ তিরকে। আরএসপির প্রার্থী মনোহর তিরকে সাতালি চা বাগানে ভোট দিয়েছেন। একই ভাবে কংগ্রেসের প্রার্থী জোসেফ মুণ্ডা বানারহাটের বিভিন্ন বাগান বিজেপির বীরেন্দ্র বরা ওরাঁও ডুয়ার্সে বাগানগুলির বুথে ঘুরে ভোট দেখেছেন।
সহ প্রতিবেদন: নারায়ণ দে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy