কোর্ট মোড়ে রাস্তা জুড়ে সিটি অটো স্ট্যান্ড। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
দেশবন্ধুপাড়ার বাসিন্দা নানক ভট্টাচার্য বলছিলেন হিলকার্ট রোডে আসতে অটোর জন্য তরাই তারাপদ আদর্শ বিদ্যালয়ের সামনে তাঁকে কোনও কোনও দিন ১ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অথচ কোনও অটোই দাঁড়াতে চায় না। আবার কোনও বাসিন্দার অভিযোগ, অটোগুলি রুট মেনে মোটেই চলে না। বর্ধমান রোড ধরে জলপাইমোড় কিংবা সেবক রোড ধরে ভক্তিনগর থানা মোড় ছাড়ালেই অটোতে ১৩ জন যাত্রী তুলছে। পুলিশের জেনে বুঝেও কিছু করছে না। ইচ্ছে মতো রুটে অটো চালানো, থেকে রুট ভেঙে চালানো, যথেচ্ছ পার্কিং করায় নাজেহাল শহরবাসী।
বছরের পর বছর ধরে সমস্যা নিয়ে নানা জায়গায় প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু কিছুই সুরাহা হয়নি। তার উপর অটোর ভাড়া নিয়ে অভিযোগ তো রয়েইছে। পরিবহণ দফতরের নিয়ম নীতিকেও তারা তোয়াক্কা করতে চান না বলে অভিযোগ। শহরের বাসিন্দাদের সমস্যা নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘শীঘ্রই পরিবহণ আধিকারিকদের নিয়ে সমস্যা মেটাতে বৈঠক করবেন।”
শহরের অটো চলাচল ক্রমেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের অনেকেরই। পরিবহণ দফতরের খাতায় ১২০০ অটো নথিভুক্ত রয়েছে। অথচ বাস্তব বলছে প্রায় ৩ হাজারের মতো অটো চলছে। রুট লেখা থাকলেও গন্তব্য পর্যন্ত চলছে না অনেক অটোই। বাগডোগরা, বা শালুগাড়াগামী অনেক অটোই মাঝপথ থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে শহরের মধ্যেই বেশি চলাচল করছে। তাতে সমস্যা আরও বেড়েছে।
সিটি অটোর কোর্ট মোড়ের তৃণমূল সমর্থিত মালিক সংগঠনের সম্পাদক নির্মল সরকার বলেন, “বারবার জেলা পরিবহণ বোর্ডের সদস্য ও এআরটিওকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তবে যথেচ্ছ পার্কিং নিয়ে কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।” চম্পাসারি রুটে অটো চালক ও মালিক সংগঠনের সম্পাদক উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, “চালকদের বুঝিয়েও লাভ হয়না। যাত্রীদের হয়রানি হলেও কিছু করা যাচ্ছে না। পরিবহণ দফতরকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতে লাভ হচ্ছে না।” বেশ কিছু অটো মালিক অভিযোগ করেন, শহরে বেআইনি তা নিয়ন্ত্রণ না করে মিটার ট্যাক্সি নামানোর চেষ্টা করছে। এতে সমস্যা আরও বাড়বে। এমনকী অনিচ্ছুক ট্যাক্সিচালকদেরও জোর করা হচ্ছে তা নামানোর জন্য।
সাম্প্রতিক অটোর ভাড়া নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। প্রতি রুটের অটো চালকেরাই নিজেদের মর্জি মাফিক ভাড়া ২ টাকা থেকে ৫ টাকা বাড়িয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ। যদিও দার্জিলিং পরিবহণ বোর্ডের সদস্য মদন ভট্টাচার্য বলেন, “অটোর কোনও ভাড়া বাড়েনি। অটো চালকেরা যদি বেশি ভাড়া চান তা অন্যায়। বাসিন্দারা অভিযোগ জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কিন্তু বাসিন্দারা কোথায় অভিযোগ জানাবেন, কতবার জানাবেন, কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে কোনও কিছুই স্পষ্ট নয়। কেন না ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের অনেকেই পরিবহণ দফতরে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু সুরাহা হয়নি। উল্টে পরিবহণ দফতর কোনও ভাড়া বাড়ায়নি বলে আটো চালকদের জানালে তারা মানতে চান না। তা নিয়ে বচসা, বিবাদ লেগেই রয়েছে।
যানজটের জন্যও শহরে অটোর মর্জি মাফিক চলাফেরা যে দায়ী তা নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই। হিলকার্ট রোডে সেবক মোড় লাগোয়া একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে খুশি মতো যাত্রী তুলতে অটোগুলি নিয়ম ছাড়া ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে বলে অভিযোগ। তাতে যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক অটো নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডে না দাঁড়িয়ে মাঝপথে যাত্রী ওঠানামানোর কাজ করেও। পুলিশের সামনে দিনের পর দিন অনিয়ম চললেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যে হয়নি তা স্পষ্ট। এমনকী পুলিশের একাংশের মদতেই অটোর দৌরাত্ম্য বেড়েছে বলে অভিযোগ।
অটো নিয়ে অভিযোগ রয়েছে স্কুল পড়ুয়াদেরও। সদ্য শেষ হওয়া মাধ্যমিকের সময় পরীক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য অটোগুলিকে দফতরের তরফে জানানো হয়েছিল। পরীক্ষার্থীদের নেওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছিল। অথচ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীদের নেওয়ার বিষয়টি প্রধান্য দিতে বলা হলেও তারা ওই ছাত্রছাত্রীদের অটোতে তুলতে অনেক ক্ষেত্রে অনিচ্ছা প্রকাশও করেছে বলে অভিযোগ। তাতে মাধ্যমিকের প্রথম দিন অনেককেই সমস্যা পড়তে হয়েছিল। বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকদের তরফেও তা নিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
সহ প্রতিবেদন: সংগ্রাম সিংহ রায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy