Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দুই মহিলাকে সাহায্যের নামে ‘গণধর্ষণ’, ধৃত ২

অভাবের তাড়নায় কাজ খুঁজতে বার হওয়া এক যুবতী ও তাঁর সঙ্গী কিশোরীকে সাহায্যের নাম করে নির্জন এলাকায় নিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ডুয়ার্সের নাগরাকাটা থানার গ্রাসমোড় এবং ভগতপুর চা বাগানের সীমান্তবর্তী এলাকায় গত সোমবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে। মঙ্গলবার রাতে ওই যুবতী নাগরাকাটা থানায় লিখিতভাবে ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালবাজার শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০১:৪৩
Share: Save:

অভাবের তাড়নায় কাজ খুঁজতে বার হওয়া এক যুবতী ও তাঁর সঙ্গী কিশোরীকে সাহায্যের নাম করে নির্জন এলাকায় নিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ডুয়ার্সের নাগরাকাটা থানার গ্রাসমোড় এবং ভগতপুর চা বাগানের সীমান্তবর্তী এলাকায় গত সোমবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে। মঙ্গলবার রাতে ওই যুবতী নাগরাকাটা থানায় লিখিতভাবে ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। সেই সঙ্গে কিশোরী ও যুবতীকে কাজের টোপ দিয়ে দিল্লিতে পাচারের চেষ্টার অভিযোগে এক দম্পতি সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত দম্পতির নাম গীতা লোহার ও নিরঞ্জন লোহার। তাঁদের মদত দেওয়ার অভিযোগে ধরা হয়েছে মিঠুন বড়ুয়া নামে আরও একজনকে। ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে সারণ তোসা নামে এক ব্যক্তিকে। তাঁর ভগ্নীপতি দুখীরাম নট্টও ধর্ষণে অভিযুক্ত। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করতে পারেননি। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে দুই অভিযোগকারিণীকে মালবাজার হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। বুধবার ধৃতদের জলপাইগুড়ি আদালতে হাজির করায় পুলিশ। বিচারক তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। মালবাজারের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক নিমা সেরিং ভুটিয়া বলেন, “ওই চক্রে আরও কেউ জড়িত কি না, দেখা হচ্ছে। সারণ ও দুখীরামের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ এবং বাকিদের বিরুদ্ধে অপহরণ, পাচারের চেষ্টার মামলা রুজু হয়েছে।”

পুলিশ জানায়, ওই কিশোরী এবং যুবতীর বাড়ি ধূপগুড়ি ব্লকের বানারহাট থানার একটি চা বাগানে। দু’জনই তফসিলি উপজাতি ভুক্ত। যুবতীটি নেপালি সম্প্রদায়ের এবং কিশোরীটি আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত। দু’জনেই পড়াশোনা ছেড়ে কাজের সন্ধান করছিলেন। যে চা বাগানে তাঁদের বাড়ি, সেখানকার বাসিন্দা গীতা লোহার মাঝেমধ্যেই দিল্লিতে কাজ করতে যেতেন। তিনি নারী পাচার চক্রের এজেন্ট বলে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে। গীতা দেবী ওই দু’জনকে দিল্লিতে কাজ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দেন। বাড়ির কাউকে না জানিয়ে ওই দু’জন সোমবার বিকালে বানারহাটের বাগান থেকে গীতার সঙ্গে দিল্লি যাওয়ার জন্য রওনা হন। নাগরাকাটা থানার গ্রাসমোড়ের নন্দুমোড়ে নেমে জনৈক মিঠু বড়ুয়ার হেফাজতে তাঁদের রেখে দিয়ে গীতা চলে যান। সন্দেহ হওয়ায় কিশোরী ও যুবতীটি সন্ধ্যার পরে মিঠুর বাড়ি থেকে পালান।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গ্রাস মোড় চা বাগানে ঘোরাঘুরি করতে দেখে এলাকার বাসিন্দা সারণ তোশা রাতে দু’জনকে আশ্রয় দেন। সারণের ভগ্নীপতি দুখীরাম নট্টও ওই বাড়িতে ছিলেন। সব কিছু জানার পর সারণ এবং দুখীরাম দু’জনকে বাড়ি পৌঁছে দেবেন বলে জানান। এলাকা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নাগরকাটা স্টেশনে যাওয়ার কথা বলে তারা বাড়ি থেকে বার হন। এর পরে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ ভরতপুর এবং গ্রাস মোড় এলাকায় অস্ত্র দেখিয়ে ওই দুজনকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ওই যুবতী জানিয়েছেন, ঘটনার পরে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।

রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ওই যুবতী এলাকার এক বাসিন্দার কাছে বিপদের কথা বলে মোবাইল ফোন চেয়ে নিয়ে বাড়িতে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি তখন নেটওয়ার্ক পাননি বলে দাবি করেছেন। তখন মোবাইলে শিলিগুড়িতে মামার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রাতেই পরিবারের লোকজন গিয়ে দু’জনকে বাড়ি নিয়ে যায়।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, গীতা টাকার বিনিময়ে মেয়ে দুটিকে মিঠুর হাতে তুলে দিয়েছিল। তবে তা কত টাকার বিনিময়ে তা পুলিশ ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করছে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ প্রথমে সারণ এবং মিঠুকে গ্রেফতার করে। গীতা এবং নিরঞ্জনকে ধরণীপুর চা বাগানের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ধরা হয়। দুখীরাম পলাতক। মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি বলেন, “চা বাগান বা প্রান্তিক এলাকায় অভাবী পরিবারের মেয়েদের পাচারের চক্রের বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রচার শুরু করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gang rape malbazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE