জলপাইগুড়ির নেতাজিপাড়ার ত্রাণ শিবিরে। —নিজস্ব চিত্র।
টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গের তিন জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। প্লাবন দেখা দিয়েছে ফালাকাটা, মাদারিহাট ও ধূপগুড়ি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায়। মূলত, মুজনাই, তোর্সা, বিরকিটি, ডুডুয়ার মতো পাহাড়ি নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় ওই সব এলাকা প্লাবিত হয়। ৩টি ব্লকের প্রায় পয় ৩০ হাজার মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েন। প্রশাসনের তরফে ১০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়। লোকজনকে উদ্ধার করতে কয়েকটি জায়গায় স্পিড বোট নামানো হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যা থেকে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিঙে রাতভর বৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার ভোরেই তিন জেলার সমতলের শতাধিক জনবসতি জলবন্দি হয়ে পড়ে। জলপাইগুড়িতে তিস্তা ও জলঢাকা নদীর অসংরক্ষিত এলাকা ও আলিপুরদুয়ারের কালজানি নদীতে লাল সতর্কতা জারি হয়েছে। ওই দুই নদীর সংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সঙ্কেত জারি হয়েছে। অন্য দিকে, দার্জিলিঙের পাহাড়ে অল্পবিস্তর ধস নামায় যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। তবে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই ধস সরানো হয়। হাসিমারা-কালচিনি এলাকায় রেললাইনে জল জমায় সকাল ৬টা থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল। ফালাকাটার জটেশ্বরের কাছে ভোর থেকে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে জল বইতে থাকায় যান চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে। দুপুরের পরে অবশ্য জল নেমে যায়।
রাতভর বৃষ্টিতে সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি শহর। অভিযোগ, শহরের নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হয়ে পড়ায় বহু ওয়ার্ডে রাস্তা জলের তলায় চলে গিয়েছে। জলের তোড়ে দেওয়াল ভেঙে পড়লে শিলিগুড়ির মহারাজ কলোনিতে জখম হন তিন জন। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সকাল থেকে জলবন্দি পড়ায় শিলিগুড়ির ঝঙ্কার মোড় এলাকায় ৩১ (ডি) জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন বাসিন্দারা। পুলিশ গিয়ে লাঠি চার্জ করে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশের লাঠিতে জখম হয়েছেন তিন জন। উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মুখ্য বাস্তুকার গৌতম দত্ত বলেন, “পাহাড় ও সমতলে টানা বৃষ্টির জন্য প্রতিটি নদীর জলস্তর বেড়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। দুপুরের পর থেকে নদীর জল কমছে। তবুও সেচ দফতরের অফিসার-কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন।”
তোর্সা নদীর জল বাড়ায় ভেসে গিয়েছে পারাপারের ঘাট। বিপজ্জনক ভাবে
অনেকটা জল ভেঙে নৌকায় উঠতে হচ্ছে। কোচবিহার শহর লাগোয়া
ফাঁসির ঘাটে হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।
ফালাকাটা ব্লকের গুয়াবরনগর, ধনীরামপুর, জটেশ্বর, দেওগাঁ ও শালকুমার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকায়। ধূপগুড়ির গাদং এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে পাড় উপচে ঢুকে পড়ছে ডুডুয়া নদীর জল। গভীর রাতে একের পর এক গ্রাম প্লাবিত হয়। রাতেই গ্রাম পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের তরফে জলবন্দিদের উদ্ধারের কাজে নামানো হয়। ফালাকাটা ব্লকের কলি ও তাতাসি-সহ ডুডুয়া নদীর ভাঙনে বহু বিঘা জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। মাদারিহাটের টোটোপাড়া পৌঁছতে যে ৩টি নদী পেরোতে হয়, সেগুলিতে সেতু নেই। ফলে হাউড়ি ও বাংরির জলস্ফীতিতে মাদারিহাটের সঙ্গে টোটোপাড়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এলাকার বাসিন্দা ভক্ত টোটোর কথায়, “বিকেল থেকে জল নামতে শুরু করায় ধীরে ধীরে যাতায়াত স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে রাতে বৃষ্টি হলে ফের জলবন্দি হয়ে পড়ব।”
জলমগ্ন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের পাড়াও। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
মালবাজার, আলিপুরদুয়ার পুরএলাকাতেও বেহাল নিকাশির কারণে জল জমে যায়। মালবাজার শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডেও বেশ কয়েকটি পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়ে। আলিপুরদুয়ারেও পুর এলাকায় জল জমে যায়। কয়েকটি ওয়ার্ডে জলবন্দিদের উদ্ধারের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করে পুলিশ-প্রশাসন। সোমবার বিকেলের পর থেকে নদীর চেহারা নেয় শহরের নিচু এলাকা। পরেশ মিত্র কলোনির জলস্তর ক্রমশ বাড়তে থাকে। করলা নদীর বাঁধানো পাড় উপচে জল ঢুকতে শুরু করে ওই ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে। মহামায়া পাড়া, কংগ্রেস পাড়া, পানপাড়া, অরবিন্দ নগর, ইন্দিরা কলোনি, নিউ টাউন, নেতাজি পাড়া, আনন্দপাড়া, স্টেশন রোড, নিউ সার্কুলার রোড, পাণ্ডাপাড়া জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বিপদ বুঝে নৌকা নামিয়ে শুরু হয় উদ্ধার কাজ। জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি দুই শহরের বাসিন্দাদেরই অভিযোগ, পুরসভা আগাম ব্যবস্থা নেয়নি বলেই এক রাতের বৃষ্টিতে শহরে চলাচল করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। অনেক স্কুলবাস সময়ে পৌঁছতে না পারায় কয়েকটি স্কুল ছুটি দিতে বাধ্য হয়। খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব যে এলাকায় থাকেন, সেই কলেজপাড়া ও লাগোয়া হাকিমপাড়ার অনেক রাস্তা জলের তলায় চলে যায়। জলপাইগুড়ির মহকুমাশাসক সীমা হালদার বলেন, “শহরের নদী লাগোয়া নিচু এলাকায় জল দাঁড়িয়েছে। সেখানে ত্রাণ শিবির খোলা না হলেও শুকনো খাবার বিলির কাজ চলছে।” শিলিগুড়ি মহকুমা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, বর্ষা পরিস্থিতি জন্য কন্ট্রোল রুম রয়েছে। সেখানকার ফোন নম্বর ০৩৫৩-২৪৩০৮০০। পুরসভার সচিব বলেন, “জলমগ্ন হওয়ার খবর পেয়েই বিভিন্ন এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy