দিনভর অবরোধে নাকাল যাত্রীরা। সোমবার চাঁচলে বাপি মজুমদারের তোলা ছবি।
বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার দাবিতে পাওয়ার স্টেশন বন্ধ করে দিয়ে তিনটি এলাকায় জাতীয় এবং রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলেন চাষিরা। বিক্ষোভকারীদের একাংশের বিরুদ্ধে অটো ভাঙচুর সহ মহিলা যাত্রী, পড়ুয়াদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার অভিযোগে এ বার পাল্টা জাতীয় সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভে নামেন বাসিন্দাদের একাংশ। তার জেরে ১০ ঘন্টা অবরুদ্ধ হয়ে থাকে মালদহগামী ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক ও রতুয়া হয়ে মালদহগামী রাজ্য সড়ক। সোমবার সকাল ৯টা থেকে সড়ক অবরোধ, পাল্টা অবরোধ সহ বিক্ষোভ-ভাঙচুরের ঘটনায় দিনভর তেতে থাকল গোটা এলাকা।
অবরোধ-বিক্ষোভের জেরে এ দিন সকাল থেকেই মালদহের সঙ্গে চাঁচলের যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় চূড়ান্ত নাকাল হয়ে হয় যাত্রীদের। পাশাপাশি পাওয়ার স্টেশন বন্ধ থাকায় চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ায় বিকাল পর্য়ন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে থাকে। বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির কর্তারা ছাড়া এলাকায় যান চাঁচলের মহকুমাশাসক, চাঁচলের এসডিপিও, রতুয়ার বিডিও। পরে পৌঁছন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ। এ দিন থেকে এলাকাগুলির বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার আশ্বাস দেওয়ার পরে বিকেল ৫টায় চাষিরা তাঁদের বিক্ষোভ তুললেও অটো ভাঙচুর ও যাত্রী হেনস্থায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে অবরোধ চলতেই থাকে। পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে প্রায় এক ঘণ্টা বাদে অবরোধ ওঠে।
বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির উত্তর মালদহ ডিভিশনাল ম্যানেজার সুমিত চৌধুরী বলেন, “বোরো ধান চাষের মরসুম হওয়ায় অতিরিক্ত চাপ নিতে না পারায় ওই সমস্যা তৈরি হয়েছে। ওই এলাকায় বিদ্যুৎ বহন ক্ষমতা বাড়াতে এর মধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। লাইনটি এ দিন থেকে সরাসরি সামসি পাওয়ার স্টেশনের সঙ্গে সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে।” মহকুমাশাসক সঞ্জীব দে বলেন, “ভবিষ্যতে এ ভাবে কেউ যাতে আইন নিজেদের হাতে তুলে না নেন তা দুপক্ষকেই বলা হয়েছে।” চাঁচলের এসডিপিও পিনাকী রঞ্জন দাস বলেন, “ভাঙচুর-হেনস্থা করার ঘটনায় লিখিত নালিশ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” গত দুসপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে জল সেচের অভাবে এলাকার বোরো ধান চাষ মার খাচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন চাষিরা। তাঁরা সকাল ৯টা থেকে সামসি ঘাঁসিরাম মোড়ে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক ও রতুয়াগামী রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়। একই সঙ্গে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয় শ্রীপুরেও। তার আগে সামসি পাওয়ার স্টেশনের সবকটি ফিডার তথা বিদ্যুৎ সরবরাহকারী লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
গত শুক্রবারও সামসি বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির দফতরে ভাঙচুর চালান ওই এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। তার পর এ দিন অবরোধ করেন রতুয়ার পিন্ডলতলা, আন্ধারু, বাটনা, শ্রীপুর, বিকলপুর সাহারাতলা, রসুনগঞ্জ সহ ২০ গ্রামের প্রায় হাজার দুয়েক বাসিন্দা। মালদহের সঙ্গে যাতায়াত বন্ধ থাকলেও চাঁচল থেকে অবরোধস্থলের কিছুটা দূরে সামসি পর্য়ন্ত অটো চলছিল। দুপুরে তা জানতে পেরে বিক্ষোভকারী একাংশ সেখানে গিয়ে ৩টি অটোতে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। মহিলা যাত্রীদের টানাহ্যাঁচড়া করে বলে অভিযোগ। আতঙ্কে যাত্রীরা লাগোয়া বাড়িতে ঢুকে পড়লে সেখানেও বিক্ষোভকারীদের একাংশ চড়াও হওয়ার পাশাপাশি স্কুল পড়ুয়াদেরকেও বিক্ষোভকারীদের একাংশ লাঠি নিয়ে তাড়া করে বলে অভিযোগ। এরপরেই ক্ষুব্ধ হয়ে কিছুটা দূরে সামসি দুর্গাবাড়ি মোড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে পাল্টা বিক্ষোভ শুরু করে এলাকার একাংশ বাসিন্দা।
পিন্ডলতলার বাসিন্দা আতাউর রহমান, বান্ধাকুড়ির ইশা আলিরা বলেন, “জমিতে জল সেচের অভাবে এলাকার প্রায় ৫ হাজার বিঘা বোরো ধানের খেত শুকিয়ে যেতে বসেছে। বারবার জানিয়েও ফল না হওয়ায় এদিন পথ অবরোধ করা হয়। কিন্তু চাষিরা অটো ভাঙচুর বা যাত্রীদের হেনস্থা করেনি। অবরোধ-বিক্ষোভে বাইরের লোকজন ঢুকে ওই কাজ করেছে বলে মনে হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy