পরপর দু’টি গন্ডারের রহস্যজনক মৃত্যুর পরে তদন্তে নেমে বন দফতর জানতে পেরেছে রাঙালিবাজনা এলাকায় চোরাশিকারিদের আনাগোনা রয়েছে। কিন্তু সেই চোরাশিকারিদের কারা আশ্রয় দিচ্ছে সে ব্যাপারে স্পষ্ট তথ্য বন দফতরের কাছে ছিল না। পুলিশের হাতে খড়গ চুরির মামলা তুলে দেওয়ার সময়ে বন দফতর রাঙালিবাজনার কথা উল্লেখও করে দেয়। পুলিশ তদন্তে নেমে এলাকায় বহিরাগতদের আনাগোনার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে। তখনই পুলিশ জানতে পারে, রাঙালিবাজনার সরকারি হাসপাতালের চিকিত্সকের কোয়ার্টারে অচেনা লোকজনদের আনাগোনা দেখেছেন বাসিন্দারা। এমনকী, গভীর রাতেও সেখানে বহিরাগতদের দেখা যায় বলে তাঁরা পুলিশকে জানান। সেই মতো পুলিশ অভিযানে নামে। ওই রাতেই তল্লাশি চালিয়ে চিকিত্সক প্রসেনজিত্ রায়কে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর ঘর থেকে নাইন এমএম পিস্তলের ৮টি গুলি মেলে। ওই ঘর থেকে অসমের দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, চিকিত্সক প্রসেনজিত্বাবু জেরার মুখে দাবি করেন, ওই কার্তুজগুলি তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এক জনের কাছ থেকে কেনেন। কয়েকটি কার্তুজ নাকি খুলে তিনি তার ভিতরে কী ধরনের বারুদ ব্যবহার করা হয়, তা দেখেছেন। তদন্তকারী অফিসাররা অবশ্য তাঁর এই যুক্তি মানতে নারাজ। একজন সরকারি চিকিত্সক হয়ে কেন তিনি ৮ টি কার্তুজ কিনলেন এবং কেনই বা আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম তার কাছে পাওয়া গেল, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনও কিছু জানাতে পারেননি বলে অফিসাররা জানান। এমনকী, তাঁর ঘর থেকে ধৃত অসমের দুই বাসিন্দা কী উদ্দেশ্যে তাঁর বাড়িতে যাতায়াত করতেন তা নিয়েও কোনও স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি প্রসেনজিত্বাবু।
পুলিশ জানতে পেরেছে, চার মাস আগে ওই চিকিত্সক রাতে একজন নার্সকে নিয়ে গাড়িতে চেপে বানারহাট থেকে রাঙালিবাজনায় যাওয়ার সময়ে আচমকা কয়েকজন দুষ্কৃতী তাঁর গাড়ি আটকায়। দু’জনকে ভোজালি দিয়ে আঘাত করে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। কয়েকদিন শিলিগুড়িতে চিকিত্সা চলে দু’জনের। তবে ওই দুষ্কৃতীরা কেন তাঁর গাড়ি আটকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করল, সে ঘটনা নিয়ে নতুন করে তদন্ত হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, রাঙালিবাজনা এলাকায় অবশ্য দু’বছরের মধ্যে চিকিত্সক হিসাবে সুনাম অর্জন করেছেন প্রসেনজিত্বাবু। কোনও দরিদ্র রোগীর কাছে ওষুধ কেনার টাকা না থাকলে, নিজে তা অনেক সময় কিনে দিতেন বলে বাসিন্দারা জানান। কয়েকজন বাসিন্দা অবশ্য ওই চিকিত্সকের গতিবিধি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কয়েকজন বাসিন্দা জানান, রাত-বিরেতে কোথাও দাঁতাল হাতি বার হলে বাইক নিয়ে ওই চিকিত্সক বার হতেন। রাতে জলদাপাড়া জঙ্গলে তাঁকে ঘোরাঘুরি করতেও দেখেছেন কয়েকজন বাসিন্দা।
সম্প্রতি অসমের লোকজন তাঁর আবাসনে যাতায়াত শুরু করেছে বলে পুলিশ জানতে পারে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অসমের বাসিন্দা গৌতম পাল এবং উজ্জ্বল ভুঁইয়া তাঁর কোয়ার্টারে পৌঁছনোর পরে পুলিশ কর্তারা খবর পান। গভীর রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া বাহিনী নিয়ে বাড়ি ঘিরে ফেলে তাঁদের গ্রেফতার করেন।
বন দফতরের এক কর্তার কথায়, অসমের কাজিরাঙার চোরাশিকারিরা এখন এ অঞ্চলে ঘোরাফেরা করছে। কিছুদিন ধরে যে ভাবে খড়গ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, দু’টি ক্ষেত্রে তাতে পেশাদার শিকারির হাত রয়েছে বলে সন্দেহ করছে বন দফতর। চিকিত্সক প্রসেনজিত্বাবু অবশ্য খড়গ কাণ্ডে তিনি জড়িত নন বলে জানান। তাঁর দুই সঙ্গীরও দাবি, তাদের ফাঁসানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy