Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

গাছ কাটা থেকে রেহাই মিলছে না কুলিকেরও

দুষ্কৃতীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না কুলিক পক্ষিনিবাসও। সারা বছরই সেখানে পিকনিক বা প্রকৃতিপাঠ শিবির চলে। বন দফতরের নজরদারির অভাবে প্রতিদিনই পক্ষিনিবাসের বিভিন্ন এলাকায় গাছ চুরির ঘটনা বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত তিন দশকে রায়গঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দফতর, হাসপাতাল ভবন, বহুতল ও ব্রডগেজ রেললাইন তৈরির জন্য বহু গাছ কাটা হয়েছে।

— ফাইল চিত্র

— ফাইল চিত্র

গৌর আচার্য
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০২
Share: Save:

দুষ্কৃতীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না কুলিক পক্ষিনিবাসও। সারা বছরই সেখানে পিকনিক বা প্রকৃতিপাঠ শিবির চলে। বন দফতরের নজরদারির অভাবে প্রতিদিনই পক্ষিনিবাসের বিভিন্ন এলাকায় গাছ চুরির ঘটনা বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত তিন দশকে রায়গঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দফতর, হাসপাতাল ভবন, বহুতল ও ব্রডগেজ রেললাইন তৈরির জন্য বহু গাছ কাটা হয়েছে। গাছের অভাব ও বাসিন্দারা রায়গঞ্জের কুলিক অভিযোগ, বাসিন্দাদের একাংশ ইতিমধ্যেই পক্ষিনিবাসের বিভিন্ন এলাকার একাধিক গাছ কেটে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, পক্ষিনিবাসের বিভিন্ন এলাকায় বহু গাছের ডালপালা কাটার কাজও সমান তালে চলছে। এমন চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পক্ষিনিবাসের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে বলে আশঙ্কা বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের।

পক্ষিনিবাসের ১৩০ হেক্টর জমিতে প্রায় দুলক্ষ গাছ রয়েছে। তার মধ্যে শিশু, জারুল, সেগুন, শাল, কদম গাছও রয়েছে। প্রতি বছর জুলাই নাগাদ দেশের বিভিন্ন রাজ্য ও বাংলাদেশ থেকে নাইট হেরন, ওপেন বিলস্টক, করমোন্যান্ট-সহ নানা পরিযায়ী পাখি আসে এখানে। বড় বড় গাছে বাসা বেঁধে প্রজননের পর জানুয়ারি মাসে ফিরে যায় তারা। ২০১৪-১৫ সালে পক্ষিনিবাসে প্রায় ৬৯ হাজার পরিযায়ী পাখি এসেছে।

কিন্তু যে ভাবে গাছ, ডালপালা কাটা পড়ছে, তাতে পরিবেশপ্রেমীদের একাংশ উদ্বিগ্ন। তাঁদের বক্তব্য, এমন চলতে থাকলে গাছ কাটা কমতে থাকবে। শহরের প্রবীণ পরিবেশপ্রেমী অরূপ মিত্রের কথায়, “এ ভাবে গাছ কাটা চলতে থাকলে প্রজননের জায়গার অভাবে পক্ষিনিবাসে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমবে। নির্মল আবহওয়াও আর থাকবে না।”

রায়গঞ্জের বিশিষ্ট পরিবেশপ্রেমী সন্দীপ সরকার বলেন, “বন দফতরের নজরদারির অভাবে গত কয়েকবছর ধরে আব্দুলঘাটা এলাকার পক্ষিনিবাসে গাছ চুরির ঘটনা বাড়ছে। ইতিমধ্যেই দুষ্কৃতীরা একাধিক গাছ চুরি করে পালিয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিদিনই গাছের ডালপালা কাটার কাজ চলছে।”

কুলিক থেকে এভাবেই নিয়ে যাওয়া হয় ডালপালা।

রায়গঞ্জের বিভাগীয় বনাধিকারিক দ্বিপর্ণ দত্ত পক্ষিনিবাসের গাছ চুরি ও গাছের ডালপালা কেটে নেওয়ার বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি জানান, প্রতি বছর বন দফতরের তরফে পক্ষিনিবাসে দু’হাজারেরও বেশি গাছ লাগানো হয়। সম্প্রতি পরিযায়ী পাখিদের খাবারের সঙ্কট দূর করতে পেয়ারা, পেঁপে, জামরুল, আম-সহ বিভিন্ন ফলের শতাধিক গাছ লাগানো হয়েছে।”

পরিবেশপ্রেমী সংগঠন হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ার্স অ্যান্ড ট্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কৌশিক ভট্টাচার্য জানান, শহরে গাছের অভাব থাকায় তাঁরা সারা বছরের বিভিন্ন সময়ে পড়ুয়াদের নিয়ে পক্ষিনিবাসে প্রকৃতিপাঠ শিবিরের আয়োজন করেন। ওই শিবিরে পড়ুয়াদের গাছ ও পাখি চেনানো হয়। তাঁর বক্তব্য, “এক দশক আগেও পক্ষিনিবাসে প্রকৃতিপাঠ শিবিরে পড়ুয়ারা নানা গাছে, নানা রকম পাখি দেখতে পেত।” কিন্তু গাছের সংখ্যা কমতে থাকায় পাখিদের আর সেভাবে দেখা যায় না। তিনি জানান, তাঁদের সংগঠনের তরফে প্রতি বছর শহর ও শহর লাগোয়া এলাকায় ১০০টি করে গাছ লাগানো হয়। কিন্তু বাসিন্দারা গাছগুলিকে সেভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় কিছু গাছ মরে গিয়েছে।

পিপল ফর অ্যানিম্যাল-২য়ের রায়গঞ্জ ইউনিটের সম্পাদক অজয় সরকারের অভিযোগ, বন দফতরের নজরদারির অভাবে পর্যটকেরা পক্ষিনিবাসে পিকনিক করার পর যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে চলে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও আগুন জ্বালিয়ে পিকনিকের রান্না হওয়ায় গাছের ক্ষতি হচ্ছে। ফলে পক্ষিনিবাসে দূষণের মাত্রা বাড়ছে। তাঁর দাবি, গত এক দশক আগেও পক্ষিনিবাস থেকে পরিযায়ী পাখিরা চলে যাওয়ার পর সেখানে টিয়া, ময়না, কাকাতুয়া, বাজ, চিল-সহ নানা ধরণের অজানা পাখি দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে একদিকে গাছের অভাব ও অন্যদিকে দূষণের জেরে এখন আর তা দেখা যায় না।

পিপল ফর অ্যানিম্যালের জেলা সম্পাদক গৌতম তান্তিয়া জানান, গরমের সময়ে রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাসের চরে বাসিন্দাদের একাংশ ধান চাষ করেন। ফলে চাষে ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার নদীতে মিশে জল দূষণ ঘটাচ্ছে। সেই দূষিত জলের জেরে পক্ষিনিবাসের গাছের ক্ষতি হচ্ছে। গাছগুলির স্বাভাবিক বৃদ্ধি আটকে গিয়েছে।

(চলবে)

—নিজস্ব চিত্র।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE