পুলিশের উপর হামলার ঘটনার পর থেকে রাতের বেলায় পুরুষশূন্য হয়ে যাচ্ছে কালিয়াগঞ্জের সুলতানগঞ্জের কিছু এলাকা। অবৈধ পোস্ত চাষ রুখতে এই গ্রামে অভিযানে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিল পুলিশ।
ওই গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে পোস্ত চাষ চললেও, পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ। হামলার ঘটনার পরে পুলিশের বিরুদ্ধে এবার অতি সক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছে সুলতানগঞ্জের বাসিন্দাদের একাংশ। শনিবার সকালের ঘটনার পরে সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি শুরু করে বলে জানা গিয়েছে। বাড়িতে থাকলে পুলিশ ধরে নেবে আশঙ্কায় পুরুষরা গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে বলে বাসিন্দাদের দাবি। ঘটনার পর থেকে পুলিশ গ্রামে টহলদারি বাড়িয়েছে। বিভিন্ন বাসিন্দাকে ডেকে জেরা করছে বলে জানা গিয়েছে। রাতের বেলায় গ্রামের সব বাড়িতে গিয়েই বিনা কারণে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে বাসিন্দাদের দাবি। ঘটনার পর থেকে বাসিন্দাদের প্রতি পদে পুলিশি হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
যদিও, পুলিশের দাবি, যে বাসিন্দারা হামলা চালিয়েছেন, তাঁদের খোঁজেই তল্লাশি শুরু হয়েছে। এ দিকে, পুলিশের উপরে হামলার ঘটনায় শনিবার রাতে দুই বাসিন্দাকে আটক করেছিল পুলিশ। দু’জনের বিরুদ্ধে খুনের পুরোনো মামলা ছিল বলে জানা গিয়েছে। রবিবার দুপুরে অবশ্য দু’জনকেই ছেড়ে দেয় পুলিশ। ঘটনার পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও, কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গ্রামে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তবে গ্রামবাসীদের হেনস্থা করার অভিযোগ ঠিক নয়। দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রামে টহল দেওয়া হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
শনিবার সকালে গ্রামে পোস্ত চাষ রুখতে পুলিশ অভিযান শুরু করলে বাসিন্দাদের একাংশ হামলা চালায় বলে অভিযোগ। কালিয়াচকের সুলতানগঞ্জে অবৈধ পোস্ত চাষ এবং আফিমের আঠার লেনদেনের খবর পেয়ে পুলিশ হানা দিয়েছিল। সে সময়েই এক এএসআইকে ঘরে আটকে মারধর করে তার সার্ভিস রিভলভার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাও হয় বলে অভিযোগ। র্যাফের এক জওয়ানকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ শূন্যে পাঁচ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। তারপরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বাসিন্দাদের দাবি, বহিরাগতরা এই হামলায় জড়িত থাকলেও, পুলিশ তাঁদের হেনস্থা করছে।
এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই দিন মজুরির কাজ করেন বলে জানা গিয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, পুলিশের ভয়ে যাঁরা গ্রামে রয়েছেন, তাঁরাও দিনের বেলায় বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা রাজিয়া বিবি, মুসলেমা বিবি-রা অভিযোগ করে বলেন, “গ্রামে কিছু বহিরাগতরা পুলিশের উপরে হামলা চালায়। সে সময় আমাদের স্বামীরা বাড়িতে ছিলেন না। তাঁরা দিন মজুরের কাজ করেন। তবে পুলিশ যেভাবে রাত বিরেতে তল্লাশি চালাচ্ছে তাতে ভয়ে তাঁরা পালিয়ে রয়েছেন। অপরাধীদের ধরতে না পেরে নিরীহ মানুষদেরই ধরে নিয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কাতে সকলে ঘর ছাড়া।”
গ্রাম পঞ্চায়েতটি তৃণমূলের দখলে। এলাকার বেশ কিছু পুরুষ রাতের বেলায় পালিয়ে থাকছেন বলে স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূলের প্রধান জামির শেখ। তিনি বলেন, “গ্রামের কিছু মানুষ ভয়ে গ্রাম ছাড়া রয়েছে বলে শুনেছি। শুনেছি পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। পুলিশকে আমরা সাহায্য করব। তবে দুষ্কৃতীদের ধরতে গিয়ে যাতে নিরীহ মানুষেরা হেনস্থা না হন, সেদিকে নজর দিতে হবে পুলিশকে।”
এ দিকে, মদের ঠেকে বহিরাগতরা জড়ো হওয়াতেই এলাকায় অশান্তি হচ্ছে বলে রবিবার অভিযোগ তুললেন কালিয়াচকের সুলতানগঞ্জের বাসিন্দারা। এ দিন দুপুরে গ্রামে তিনটি দোকানে ভাঙচুর চালিয়েছেন একদল বাসিন্দা। তাঁদের অভিযোগ ওই দোকানগুলিতে অবৈধ মদের ঠেক চলত। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে থাকা দোকানগুলিতে ভাঙচুর চালানো হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই দোকানগুলির কারণেই এলাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়ছে। বহিরাগতদের প্ররোচনা এবং প্রলোভনেই গ্রামে অবৈধ পোস্ত চাষ হচ্ছে বলে অভিযোগ।
জেলার মালদহ জেলার কালিয়াচক এবং বৈষ্ণবনগরে বিভিন্ন এলাকায় বেআইনি ভাবে পোস্ত চাষ হচ্ছে বলে অভিযোগ। আবগারি ও জেলা পুলিশের তরফ থেকে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালান হলেও বেআইনি পোস্ত চাষ অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীদের দাবি, অভিযোগ পাওয়ার পরেও পুলিশ অভিযান চালাতে দেরি করে। অভিযানের আগেই পোস্ত গাছের ফল কেটে আঠা বের করে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। সেই আঠা দিয়ে অবৈধ কারবার চলছে বলে অভিযোগ। কালিয়াচকের সুলতানগঞ্জে গত শনিবার পোস্ত ফল কাটা হবে বলে খবর পেয়েই পুলিশ অভিযান চালায়। সে সময় পোস্ত চাষ করছেন এমন কিছু বহিরাগতরা হামলা চালাতে উস্কানি দেয় বলে পুলিশ মনে করছে। গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান জামির শেখ বলেন, “পুলিশের উপরে বহিরাগতরা হামলা চালিয়েছিল। যার ফলে গ্রামের মানুষদের হেনস্থা হতে হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy