Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

এসজেডিএ-র আরও দুর্নীতির নালিশ নিয়ে তদন্তে গড়িমসি

শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে না কেন তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এসজেডিএ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই একাধিক প্রকল্পে অন্তত ৮৪ কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে পুলিশে ৮টি অভিযোগ করা হয়েছে। সেই সব মামলা চলছে। তবে আরও বেশ কিছু প্রকল্প যেগুলির ব্যাপারেও অনিয়মের হদিস মিললেও ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি চলছে বলে অভিযোগ।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৫ ০২:২১
Share: Save:

শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে না কেন তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এসজেডিএ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই একাধিক প্রকল্পে অন্তত ৮৪ কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে পুলিশে ৮টি অভিযোগ করা হয়েছে। সেই সব মামলা চলছে। তবে আরও বেশ কিছু প্রকল্প যেগুলির ব্যাপারেও অনিয়মের হদিস মিললেও ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি চলছে বলে অভিযোগ। এসজেডিএ-এর অন্দরের খঘবর, ত্রিফলা বাতি বসানো থেকে ড্রাইপোর্ট, টি পার্কের কাজ, বিধাননগরে আনারস কেন্দ্র তৈরি, কাওয়াখালি পুনর্বাসন প্রকল্পে জায়গা বা ঘর পাইয়ে দেওয়া নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসজেডিএ’র বর্তমান চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য দাবি করেছেন, “যথাসময়ে সে সব ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এসজেডিএ’র বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দলকে দিয়ে সমস্ত কাজ খতিয়ে দেখা হয়। তাতে ড্রাইপোর্ট, টি পার্কের মতো একাধিক বিষয়ে নানা অসঙ্গতি মিলেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করাও হয়েছে। যেমন টি পার্কে একটি কোল্ড স্টোরেজ তৈরির জন্যই ২০১২-২০১৩ সালে ই-টেন্ডারের পরিবর্তে ই-কোটেশনের মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি টাকার ওই কাজের বরাত দেওয়া হয় একটি সংস্থাকে। ‘অ্যাওয়াডর্’ হিসাবে সংস্থাটিকে কী ভাবে ওই কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। কাজের প্রয়োজনীয় নকশা ছাড়াই কী ভাবে খরচ ধার্য করা হয়েছে তা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন। ওই কাজের জন্য সরঞ্জামের যে দাম দেখানো হয়েছে তা অনেক বেশি। তা সত্ত্বেও কেন ‘অ্যাওয়ার্ড’ হিসাবে কাজ দেওয়া হল তা বুঝতে পারছে না বিশেষজ্ঞরা। মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে কী কাজ হয়েছে তা খতিয়ে না দেখেই যে ভাবে ঠিকাদারকে টাকা দেওয়া হয়েছে তেমনই অভিযোগ রয়েছে এই প্রকল্পেও। কাজের জন্য কোল্ড স্টোরেজের সরঞ্জাম হিসাবে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ‘স্যান্ডুইচ প্যানেল’ কিনতে প্রায় অতিরিক্ত ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করার হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

একই কোম্পানিকে একই ভাবে আরও প্রায় ৪ কোটি টাকার কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে ড্রাইপোর্টে এবং ফুলবাড়ি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনে কোল্ড ওয়্যারহাউজ তৈরি করতে। ওই সংস্থার বিরুদ্ধে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর কাজ নিয়েও অভিযোগ ওঠে। তা ছাড়া সংস্থাটিকে কাওয়াখালির এলাকায় ফাঁকা জায়গায় রাস্তার ধারে প্রচুর পরিমাণে ত্রিফলা বাতি বসানোর কাজের বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। একই সংস্থা কী ভাবে একাধিক কাজের বরাত পেয়েছে তা নিয়েও বিরোধীদের প্রশ্ন রয়েছে। তবে এসজেডিএ’তে চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র (ইলেকট্রিক্যাল)-কে দিয়ে ড্রাইপোর্ট এবং ফুলবাড়ি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনে কোল্ড ওয়্যারহাউজ তৈরির জন্য বিরাট অঙ্কের টাকা ঠিকাদারকে মেটানোর বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বিশেষজ্ঞদের রিপোর্টে। অথচ পুলিশে নির্দিষ্ট ভাবে এই সমস্ত প্রকল্পে নিয়ে এখনও কোনও অভিযোগ করা হয়নি।

বিরোধীদের দাবি, বিধাননগর আনারস কেন্দ্রে কোল্ড ওয়্যারহাউজ তৈরির ক্ষেত্রেও কাজের আগে একাংশ টাকা মিটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে সে সময় অভিযোগ উঠতেই ঠিকাদার সংস্থা তড়িঘড়ি মেশিন কিনে আনে। ওই কাজও অ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। কাওয়াখালি পুনর্বাসন প্রকল্পে এলাকার বাসিন্দা নন বা প্রকল্পের এলাকায় জমি না থাকলেও এমন অনেককে সুযোগ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে তারা।

এমনকী ক্যাগের রিপোর্টেও ওই সমস্ত প্রকল্পের ব্যাপারে দুর্নীতির ইঙ্গিত মিলেছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের তরফে। সে কারণেই ওই রিপোর্ট আলমারিতে তালা চাবি বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে তারা দাবি করেন। সেই রিপোর্ট প্রকাশের দাবি তুলেছেন বিরোধী নেতৃত্ব। সব মিলিয়ে ২০০ কোটি টাকার বেশি অনিয়ম হয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বিরোধী শিবির।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা এসজেডিএ’র বর্তমান চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গত বছর ১৬ মে এসজেডিএ’র তরফেই প্রথম পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দলকে দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখা হয়েছে। দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে জনস্বার্থে মামলা হয়েছে। সেখানে ওই সমস্ত রিপোর্ট সমস্তই জমা করা হয়েছে। কোনও কিছু গোপন করার ব্যাপার নেই। অন্যান্য ব্যাপারে সময় মতোই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” দুর্নীতির অভিযোগের পর তত্‌কালীন চেয়ারম্যান রুদ্রবাবুকে সরিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে ওই পদে বসানো হয়েছে। তার পরেও অন্যান্য দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে কবে মামলা দায়ের হবে সেই প্রশ্নেই দফতরের অন্দরে চলছে নানা কানাঘুষো।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টে যে সমস্ত বিষয়গুলি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা নিয়ে কেন এখন পর্যন্ত পুলিশে কোনও অভিযোগ না জানানোয় শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইতিমধ্যেই মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নিকাশি তৈরি, শহরে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো, জোড়াপানি নদী সংস্কার, বাগডোগরা, মালবাজার এবং ময়নাগুড়িতে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর কাজে অন্তত ৮৪ কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এমনকী টেন্ডার প্রক্রিয়া জাল করে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ নিয়েও তদন্ত চলছে। পুলিশ তত্‌কালীন সিইও গোদালা কিরণ কুমার-সহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE