Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

অভিষেকের সভার আগেই দুই গোষ্ঠীর বচসা মাথাভাঙায়

সারদা কেলেঙ্কারিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা দলের কেউ যুক্ত নন বলে আলিপুরদুয়ারে দাবি করলেন যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মাথাভাঙায় তাঁর সভা শুরুর আগেই প্রকাশ্যে দলের কোন্দল নজরে এল।

মাথাভাঙায় সভা শুরুর আগে মঞ্চে দেখা গিয়েছিল এমনই দৃশ্য। হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

মাথাভাঙায় সভা শুরুর আগে মঞ্চে দেখা গিয়েছিল এমনই দৃশ্য। হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

নমিতেশ ঘোষ ও নিলয় দাস
আলিপুরদুয়ার ও মাথাভাঙা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০২:২৭
Share: Save:

সারদা কেলেঙ্কারিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা দলের কেউ যুক্ত নন বলে আলিপুরদুয়ারে দাবি করলেন যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মাথাভাঙায় তাঁর সভা শুরুর আগেই প্রকাশ্যে দলের কোন্দল নজরে এল।

মঙ্গলবার প্রথম সভা ছিল আলিপুরদুয়ারে। সিবিআই, ইডি বা কেন্দ্রের সমস্ত সংস্থাকে কাজে লাগালেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছুঁতে পারবে না বলে সেখানে চ্যালেঞ্জ দেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে আলিপুরদুয়ার কোর্ট ময়দানে তিনি বলেন, “সাদা ও নীল পাড়ের সামান্য দামের শাড়ি ও হাওয়াই চপ্পল পড়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছেন। টালির ঘরে থেকে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বাংলার ১০ লক্ষ মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করছেন।” ২০১৯ সালে তৃণমূল দেশের ক্ষমতা দখল করবে বলে দাবি করেছেন অভিষেক।

এদিন সভায় ভিড় উপচে পড়ে। ছয়টি ব্লক থেকে প্রচুর ট্রাক বোঝাই করে কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে আসা হয়। সকাল থেকে সমাবেশ সফল করতে সক্রিয় ছিলেন দলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। এদিন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি তাঁর ভাষণে মূলত বিজেপি এবং সংবাদ মাধ্যমকে আক্রমণ করেন। জলপাইগুড়ির সভার মতই এদিন তিনি বিজেপি’র চারজন সাংসদ ও মন্ত্রীর লোকসভা নির্বাচনের আগে এবং পরে সম্পত্তির কী হয়েছে তা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম না করে বলেন, “উনি আগে চা বিক্রি করতেন। এখন দেশকে বিক্রি করছেন। সুদীপ্ত সেন মানুষকে প্রতারিত করে জেলে গিয়েছে। আর যাঁরা ভোট নিয়ে মানুষকে প্রতারিত করছেন, তাঁদের জেলে যাওয়া উচিত্‌।”

মোদীর স্বচ্ছ ভারত অভিযান প্রসঙ্গে বলেন, “যাঁরা ঝাড়ু হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন, তাঁদের অতীত দেখুন। তাঁদের কর্পোরেশনে কাজে নিয়োগ করা উচিত।” এরপরেই তিনি বলেছেন, “বিজেপি যে রাজ্যে ক্ষমতা দখল করেছে, সেখানে দাঙ্গা লাগিয়েছে। এখন বাংলায় দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে। বিজেপি আগুন নিয়ে খেলছে। ওঁদের রাজ্যে নেতার অভাব, তাই দিল্লি থেকে নেতাদের নিয়ে আসা হচ্ছে।”

আলিপুরদুয়ারের পরে কোচবিহারের মাথাভাঙায় সভা করেন অভিষেক। সেখানে সভায় তিনি পৌঁছনোর আগে প্রকাশ্যে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী বচসায় জড়িয়ে পড়ে। সভায় আসা কর্মীরা হুমকি ছুড়ে দেন নেতৃত্বের উদ্দেশে।

মঙ্গলবার মাথাভাঙা মেলার মাঠে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের ডাকে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কর্তৃত্ব নিয়ে দিন কয়েক ধরেই তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং সহ আব্দুল জলিল আহমেদের গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ চলছিল বলে দল সূত্রের খবর। এদিন সকাল থেকেই দুই পক্ষ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাঠে হাজির ছিলেন। রবীন্দ্রনাথবাবু কলকাতায় থাকার কারণে সভায় হাজির ছিলেন না। সভা সাড়ে তিনটেথেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিকাল সাড়ে চারটে পর্যন্ত কেউ মঞ্চে ওঠেননি। দুই পক্ষ দুই দিকে দাঁড়িয়েছিল।

বিকাল সাড়ে চারটের পরে আব্দুল জলিল আহমেদ তাঁর অনুগামীদের নিয়ে মঞ্চে ওঠেন রবীন্দ্রনাথ ঘনিষ্ঠ তৃণমূল যুব সভাপতি শুভজিত্‌ কুণ্ডু তাঁর অনুগামীদের নিয়ে ওঠেন। ওই সময় মঞ্চে যান তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত নজরুল হক। কেন দলের মাথাভাঙা-১ নম্বর ব্লকের সভাপতি মজরুল হোসেন মঞ্চে বসে আছেন সে প্রশ্ন তোলেন নজরুল। তিনি দাবি করেন, “মজরুল চক্রান্ত করে আমাকে খুনের মামলায় ফাঁসিয়েছে। তাই ওঁর মঞ্চে থাকার অধিকার নেই।”

দলীয় সূত্রে খবর, ১ অক্টোবর মাথাভাঙার নয়ারহাটে প্রদীপ বর্মন নামে তৃণমূলের এক কর্মী খুন হন। ওই খুনে অভিযুক্ত নজরুলবাবু। তিনি বলেন, “মজরুল বাম দল থেকে এসে তৃণমূলের বদনাম করছে। তাই তাঁর মঞ্চে থাকার অধিকার নেই।” তৃণমূল সূত্রে খবর, মজরুল হোসেন প্রাক্তন মন্ত্রী হিতেন বর্মনের ঘনিষ্ঠ। তিনি বলেন, “আমাকে হেয় করার জন্য নজরুল হক ওই ঘটনা ঘটিয়েছে। দলীয় নেতৃত্বকে সব জানিয়েছি।” মামলায় অভিযুক্ত নজরুল মঞ্চে থাকলে বিতর্ক হতে পারে, দলের নেতারা তা বলায় তিনি চলে যান। এরপরে মঞ্চ ছাড়েন মজরুলও।

ওই সময় রবীন্দ্রনাথ অনুগামীদের অনেকে অভিযোগ তোলেন, তাঁদের মঞ্চে ডাকা হয়নি। চলতে থাকে হইচই-ধাক্কাধাক্কি। অনুগামীদের নিয়ে সভা ছেড়ে চলে যান রবীন্দ্রনাথ ঘনিষ্ঠ মেখলিগঞ্জ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত সরকার। পরে তৃণমূল নেতা মিহির গোস্বামী বক্তৃতা শুরু করেন। অভিষেকবাবু ঢোকার আগেই মঞ্চ স্বাভাবিক হয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE