Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

‘অন্তর্ঘাত’ নিয়ে সাবিত্রী-কৃষ্ণেন্দুর তরজা অব্যাহত

লোকসভা ভোটে ‘অন্তর্ঘাত’ নিয়ে মালদহ তৃণমূলের দুই শিবিরে তরজা চলছেই। রবিবার জেলার এক মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী আর এক মন্ত্রী তথা দলের জেলা সভানেত্রী সাবিত্রী মিত্রের স্বামীর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের আবু হাসেম খান বা ডালুবাবুর সঙ্গে গোপন আঁতাতের অভিযোগ তুলেছেন। কেএলও জঙ্গি মালখান সিংহের সঙ্গে সাবিত্রীদেবীর সম্পর্ক রয়েছে বলেও নাম না করে কটাক্ষ করেছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৪ ০৩:০৩
Share: Save:

লোকসভা ভোটে ‘অন্তর্ঘাত’ নিয়ে মালদহ তৃণমূলের দুই শিবিরে তরজা চলছেই।

রবিবার জেলার এক মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী আর এক মন্ত্রী তথা দলের জেলা সভানেত্রী সাবিত্রী মিত্রের স্বামীর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের আবু হাসেম খান বা ডালুবাবুর সঙ্গে গোপন আঁতাতের অভিযোগ তুলেছেন। কেএলও জঙ্গি মালখান সিংহের সঙ্গে সাবিত্রীদেবীর সম্পর্ক রয়েছে বলেও নাম না করে কটাক্ষ করেছেন তিনি। সাবত্রীদেবী সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর পাল্টা দাবি, “দলের প্রার্থীকে হারাতে মালদহে কে কার সঙ্গে কখন কোথায় বৈঠক করেছে, তা দলের রাজ্যে নেতৃত্ব সবই জানেন।” ইতিমধ্যে গোটা ঘটনাটি পৌঁছেছে দক্ষিণ মালদহের তৃণমূল প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেনের কানেও। এ দিন কলকাতা থেকে টেলিফোনে তিনি বলেন, “আমাকে হারাতে এক জন নয়, সবাই ডালুবাবুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।”

নির্বাচনের আগে থেকেই মালদহে সাবিত্রীদেবী এবং কৃষ্ণেন্দুবাবুর দুই গোষ্ঠীর সংঘাত নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব উদ্বিগ্ন ছিল। স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জেলার দুই কেন্দ্রে ভোটের মুখে পাঁচ দিন মালদহে থেকেই প্রচার করে গিয়েছিলেন। সে সময়ে তিনি নিজে এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বারবার দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও দেখা গেল, উত্তর মালদহ কেন্দ্রে তৃণমূলের স্থান তৃতীয়, দক্ষিণ মালদহে তাঁরা পেয়েছেন চতুর্থ স্থান। দু’টি লোকসভা আসন মিলিয়ে মোট ১৪টি বিধানসভার মধ্যে মাত্র তিনটি কেন্দ্র তৃণমূলের হাতে রয়েছে। এ বার লোকসভা ভোটে সেই তিনটি কেন্দ্রেও তৃণমূল প্রার্থীরা পিছিয়ে ছিলেন। তার মধ্যে কৃষ্ণেন্দুবাবুর খাসতালুক ইংরেজবাজারে তৃণমূলের দ্বিগুণ ভোট পেয়েছে বিজেপি। এই পুরসভায় ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। মাত্র বছর খানেক আগেই এই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ইংরেজবাজারের পুরপ্রধান কৃষ্ণেন্দুবাবু কিন্তু জিতেছিলেন ২১ হাজারেরও বেশি ভোটে। সাবিত্রীদেবীর মানিকচক কেন্দ্রেও কংগ্রেসের প্রার্থী তৃণমূল প্রার্থীর চেয়ে ১৪ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়েছে। প্রার্থী মোয়াজ্জেমবাবুর বক্তব্য, “মালদহে রাজনীতি হয় না। ব্যবসা হয়।

আমি জিতি তা কেউ চাননি। আমি জিতলে সবার পর্দা ফাঁস হয়ে যেত।” জেলায় দলের এই গোষ্ঠী কোন্দলের মধ্যেই তোপ দেগেছেন মালদহের তৃণমূলের তৃতীয় শিবিরের নেতা বলে পরিচিত ইংরেজবাজার পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল সরকার। তাঁর দাবি, জেলার দুই মন্ত্রীর সঙ্গেই ডালুরবাবুর ঘনিষ্ঠ পরিচয় রয়েছে। তিনি বলেন, “হারের দায় নিয়ে একে অপরে ঘাড়ে দোষ চাপাতেই দুই মন্ত্রী ওই অভিযোগ তুলছেন। বিষয়টি দলীয় নেতৃত্বের খতিয়ে দেখা দরকার।”

মালদহের এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সম্পর্কে তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি বলেন, “মালদহে কী হচ্ছে, আমার জানা নেই। আমার কাছে দলের কেউ কোনও অভিযোগ করেননি।” একই কথা বলেছেন দলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। বর্ধমানের আসানসোলেও তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনের পরাজয়ের পরে দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা উঠেছে। সেক্ষেত্রেও রাজ্য নেতৃত্ব প্রকাশ্যে সে কথা স্বীকার করেননি। তবে কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটককে ভোটের ফল বেরোনোর দিন রাতেই কলকাতায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল। মালদহের ক্ষেত্রে তেমন কোনও পদক্ষেপও করেনি রাজ্য নেতৃত্ব।

এই অবস্থায় জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী তথা উত্তর মালদহের সাংসদ মৌসম বেনজির নূর বলেন, “যদি সাবিত্রীদেবী, কৃষ্ণেন্দুবাবু কংগ্রেসে ফিরতে চান তাঁদের আমরা স্বাগত জানব।” দুই মন্ত্রী অবশ্য কংগ্রেসের সেই ডাক উড়িয়ে দিয়েছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE