Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
মন্ত্রীর কাছে আর্জি চা শ্রমিকদের

আর প্রতিশ্রুতি নয়, খুলতে হবে বাগান

তৃণমূল সাংসদের আবেদনে সাড়া দিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ডুয়ার্সের বন্ধ বাগান খোলার জন্য চেষ্টার কথা শোনালেন কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। শনিবার ধূপগুড়ি ব্লকে বন্ধ রেডব্যাঙ্ক এবং সুরেন্দ্রনগর চা বাগানে যান মন্ত্রী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে পেয়ে শ্রমিকরা তাঁদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে দ্রুত বাগান খোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন।

বন্ধ রেড ব্যাঙ্ক চা বাগানে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ছবি: রাজকুমার মোদক।

বন্ধ রেড ব্যাঙ্ক চা বাগানে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ছবি: রাজকুমার মোদক।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য
বানারহাট শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৫ ০২:২৭
Share: Save:

তৃণমূল সাংসদের আবেদনে সাড়া দিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ডুয়ার্সের বন্ধ বাগান খোলার জন্য চেষ্টার কথা শোনালেন কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। শনিবার ধূপগুড়ি ব্লকে বন্ধ রেডব্যাঙ্ক এবং সুরেন্দ্রনগর চা বাগানে যান মন্ত্রী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে পেয়ে শ্রমিকরা তাঁদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে দ্রুত বাগান খোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। তাঁদের আর্তি, ‘‘মন্ত্রীরা আসেন। অনেক কথা বলেন। কিন্তু বাগান খোলে না। সেটা যেন এবার না হয়।’’

ওই সময় আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল সাংসদ দশরথ তিরকি মন্ত্রীকে জানান, রাজ্য সরকার বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের রেশনে চাল, দেড় হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু সেটা দিয়ে কিছু হবে না। বাগান না খোলা পর্যন্ত সমস্যা মিটবে না। একা রাজ্যের পক্ষে তা করা সম্ভব হচ্ছে না। এব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। প্রায় এক ঘণ্টা শ্রমিকদের সমস্যার কথা শোনার পরে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আশ্বাসের কথা বলতে পারব না। রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত বাগান খোলার চেষ্টা করব এতটুকু জানাতে পারি।”

এদিন বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ মন্ত্রী ভারতীয় চা পর্ষদের কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে প্রথমে রেড ব্যাঙ্ক বাগানে যান। ছিলেন মহকুমাশাসক সীমা হালদার সহ প্রশাসনের কর্তারা। ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে দফায় দফায় বন্ধ বাগানের জীর্ণ কারখানার চাতালের তলায় শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মন্ত্রী। ইউনিয়নের ভেদাভেদ ভুলে এদিন শ্রমিকরা এক যোগে বাগানের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। তাঁরা জানান, সরকারি চাল মিলছে কিন্তু ভাতের সঙ্গে কি রান্না হবে তার ব্যবস্থা নেই। মা ও শিশুরা ডায়না নদীতে সকাল থেকে পাথর তুলে ১১০ টাকা রোজগার করছে। প্রচুর ছেলে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। ২০১৪ সালের ২১ নভেম্বর রাজ্য সরকার বাগান অধিগ্রহণ করলেও অপুষ্টির সমস্যা কমেনি। অধিগ্রহণের দিন থেকে আজ পর্যন্ত অপুষ্টিজনিত রোগের শিকার হয়ে রেডব্যাঙ্ক বাগানে ৫৩ জন এবং সুরেন্দ্রনগরে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাগানের শ্রমিক শান্তি খেস মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, “সরকারি অনুদানে কতদিন চলব ? জলদি বাগান খোলার ব্যবস্থা করুন। আমরা নিজেরা রোজগার করে খাব।” শ্রমিক পঞ্চমী বাল্মিকী বলেন, “এর আগেও অনেক মন্ত্রী এসেছে। অনেক আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। আপনি অনেক দূর থেকে এসেছেন। দয়া করে ফিরে গিয়ে বাগান চালু করার ব্যবস্থা করবেন।”

শ্রমিকদের কথা শুনে পাশে বসা তৃণমূল সাংসদের কাছে মন্ত্রী জানতে চান সরকারি স্তরে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাংসদ তাঁকে রেশন, পানীয় জল, মেডিক্যাল টিম, ভাতার ব্যবস্থা করার কথা জানান। এর পরে মন্ত্রী শ্রমিকদের সামনে দাঁড়িয়ে জানান, গত জুলাই মাসে সংবাদ মাধ্যম সূত্রে উত্তরবঙ্গের চা বাগানে দুর্দশার বিষয়টি তাঁর নজরে আসে। একটি খবর থেকে তিনি জানতে পারেন এখানে শ্রমিকরা অভাবের তাড়নায় আত্মহত্যা করছে। বিষয়টি নিয়ে সংসদে প্রশ্ন ওঠে। শিল্প বাণিজ্য দফতরের অধীনে ভারতীয় চা পর্ষদ। তাই জবাব দিতে তিনি বাধ্য ছিলেন। মন্ত্রীর কথায়, “ওই সময় রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি লিখে জানতে চাওয়া হয় সত্যি কি বাগানগুলির পরিস্থিতি শোচনীয়? সত্যি কি অনাহার চলছে? সত্যি কি অভাবের তাড়নায় শ্রমিক আত্মহত্যা করছে? রাজ্যের মুখ্য সচিব চিঠির উত্তরে জানান আত্মহত্যার ঘটনা নেই। তবে কিছু বন্ধ বাগান আছে। সেখানে সমস্যা রয়েছে। নতুন মালিক খোঁজা হচ্ছে।” তিনি জানান, এর পর থেকে উত্তরবঙ্গে আসার চেষ্টা শুরু করেন। সাংসদের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, “নতুন মালিক জোগাড় করতে সময় লাগবে। কত সময় লাগবে সেটা এই মুহূর্তে বলতে পারব না।”

প্রায় ৪৫ মিনিট রেড ব্যাঙ্ক বাগানে কাটিয়ে মন্ত্রী চলে যান পাশের বন্ধ বাগান সুরেন্দ্র নগরে। সেখানেও একই ভাবে শ্রমিকরা তাঁর কাছে দ্রুত বাগান খোলার আর্জি জানান। এর পরে তিনি বাগান ছেড়ে বেড়িয়ে যান। আজ, রবিবার তিনি শিলিগুড়িতে চা বণিক সভা, বটলিফ কারখানা মালিক সংগঠন, চা নিলাম কেন্দ্র সহ ১২১ টি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy