আড়াল: নানা হোর্ডিংয়ে ঢাকা পড়ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। নিজস্ব চিত্র।
শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে ছাদে গেলে অনেকের বাড়ি থেকেই দেখা মিলত বরফ মোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘার। বেশিদিন নয়, মাত্র এক দশক আগেকার কথা। কিন্তু আর দেখা যায় না। বেশিরভাগ সময়েই কাঞ্চনজঙ্ঘাকে আড়াল করে দেয় ঢাউস ঢাউস বিজ্ঞাপন। শিলিগুড়ি শহরের হাল এখন এমনই। ধীরে ধীরে নগরায়ন হয়েছে। তাতে সুবিধেও বেড়েছে। তবে আড়াল হয়েছে হিমালয়ের শৃঙ্গটি। মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড়, উড়ালপুল, মাল্লাগুড়ি, চম্পাসারি বা জংশন এলাকা থেকে সোজাসুজিই দেখা যেত কাঞ্চনজঙ্ঘা। তবে এখন সেখান থেকেও কখনও কখনও চোখে পড়ে বড় বড় বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং।
গত কয়েক বছর ধরেই শহরের নির্দিষ্ট কিছু এলাকা হোর্ডিংমুক্ত রাখার আহ্বান করেছে চলেছেন পরিবেশপ্রেমীদের একাংশ। কোনও সময় পুরসভা, প্রশাসন নজর দিলেও বেশিরভাগ সময়ই ওই দাবি উপেক্ষিত থেকে যায় বলে অভিযোগ। সম্প্রতি ঝকঝকে আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে স্পষ্ট দেখা যেতেই এই দাবি আবার উঠতে শুরু করেছে। পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাফের কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘কতবার আমরা পুরসভা, প্রশাসনকে হোর্ডিং নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছি। লাভ হয়নি। পুরোপুরি দৃশ্যদূষণ।’’
পরিবেশপ্রেমী সংগঠন নর্থবেঙ্গল এক্সপ্লোরার্স ক্লাবের সদস্য নবনীশ দত্ত প্রায়ই সাত সকালে সাইকেলে শহরে ঘোরেন। কয়েকদিন আগে উড়ালপুলে উঠেই আঁতকে উঠেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার আপনার প্রিয় কাঞ্চনজঙ্ঘা হোর্ডিং ব্যবসায়ীদের দখলে গিয়েছে বলা চলে। পরিস্থিতির জন্য দায়ী পুরসভা।’’ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তথা ভ্রমণ লেখক গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘হাকিমপাড়ার বাড়ি থেকে সন্ধ্যায় তিনধারিয়া, কার্শিয়াঙের আলোর মালা দেখা যেত। সব অতীত। ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘাটাও এখন বহুতল আর হোর্ডিং গিলে ফেলছে। শহরটা যেন অভিভাবকহীন!’’
লকডাউনের জেরে বাতাসে দূষণ কমেছে। কয়েকদিন আগের বৃষ্টির জন্য ধূলিকণাও কম। বাতাসের গুণগত মান গত বছর ছিল ১৪৯ একক, এ বছর মাত্র ১১৯। সেই জন্য শিলিগুড়ি তো বটেই কোচবিহার, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট থেকে দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার। তবে শিলিগুড়ির বাড়তে থাকা বহুতলের পাশাপাশি হোর্ডিংয়ে বাধা হচ্ছে এই দৃশ্য। বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেকে সরব হয়েছেন।
শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা পুর প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন অশোক ভট্টাচার্য শুধু বলেছেন, ‘‘বিষয়টি আমরা অবশ্যই দেখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy