ট্রেনের সঙ্গে হাতির সঙ্ঘাত রুখতে ‘ইনট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম’ (আইডিএস) ব্যবস্থার পরীক্ষার সময় কুনকি হাতির হানায় বেসরকারি সংস্থার কর্মীর মৃত্যুর দায় নিচ্ছে না বন দফতর। বন দফতরের রাজ্যের শীর্ষ কর্তারা শনিবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তের পর তাঁরা নিশ্চিত, ওই ঘটনায় বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিক বা কর্মীদের কোনও ত্রুটি ছিল না। রেলও অবশ্য ঘটনার দায় নিতে নারাজ। এ দিকে,দায় ঠেলাঠেলির মাঝে পড়ে আইডিএস ব্যবস্থার কাজ সময়ে শেষ করা যাবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সূত্রের খবর, ট্রেনের সঙ্গে হাতির সঙ্ঘাত রুখতে আইডিএস ব্যবস্থার পরীক্ষামূলক চালুর কাজে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার বক্সার রাজাভাতখাওয়ার জঙ্গলে মধুগাছতলায় কুনকি হাতির হানায় মৃত্যু হয় সন্দীপ চৌধুরী (৫৭) নামে অবসরপ্রাপ্ত এক কর্নেলের। যিনি আইডিএস ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী হিসাবে কাজ করছিলেন। ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় স্তরে এ নিয়ে রেল ও বন দফতরের কর্তাদের মধ্যে দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়। ঘটনার পর রেল ও বন দফতরের তরফে কেন তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।তবে শনিবার বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের বন আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, ঘটনাটির তদন্ত হচ্ছে। ঘটনার সময় রাজাভাতখাওয়ায় থাকা দু’টি কুনকি হাতির মাহুতদের পাশাপাশি অন্য বনকর্মীদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তাঁদের কথা রেকর্ড করা হচ্ছে।
রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) দেবল রায় এদিন বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে যেটা দেখা যাচ্ছে, তাতে করে সে দিনের ঘটনাকে ঘিরে বন দফতরের কোনও ত্রুটি ছিল না। বন দফতরের থেকে রেল হাতি চেয়েছিল। রেলকে তা দেওয়া হয়েছিল। এবং যে হাতির আক্রমণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, অতীতে তার এমন আচরণের নজির নেই। হয়তো ট্রেনের শব্দে ভয় পেয়ে গিয়ে ওই কুনকি হাতি এমনটা করে থাকতে পারে।”
রাজাভাতখাওয়ার ঘটনার পর আপাতত আইডিএস ব্যবস্থার পরীক্ষা সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেল কর্তারা। সূত্রের খবর, ওই ঘটনার পর অন্তত এই মুহূর্তে রেলকে এমন পরীক্ষার জন্য হাতি দিতে নারাজ বন দফতরও। তা হলে গোটা ব্যবস্থা চালু হবে কী করে?
রেল কর্তারা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের জঙ্গলপথে ৭৪ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে আইডিএস ব্যবস্থার চলছে। আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যে আরও ৯২ কিলামিটার রেল পথে এই ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তাঁদের। একই সময়ের মধ্যে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের মোট ৪৩০ কিলোমিটার জঙ্গল পথেও এই ব্যবস্থা চালু করতে চাইছেন তাঁরা। ফলে সাময়িক ভাবে বন্ধ থাকলেও, দ্রুত প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানান তাঁরা। সে জন্য বনের থেকে ফের হাতি চাওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের এক রেল কর্তা জানিয়েছন।
প্রশ্ন উঠছে, সে দিন ঘটনাস্থলে আদৌ কি পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল? এ নিয়ে অবশ্য মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন রাজ্যের বনকর্তারা। প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) বলেন, “আমরা হাতিদের সঙ্গে লোক দিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে নিরাপত্তার কোনও অভাব ছিল কিনা, সেটা রেল বা পুলিশই বলতে পারবে।” রেলের আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম অমরজিৎ গৌতম বলেন, “সে দিন রাজাভাতখাওয়ায় যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে রেলেরও কোনও দায় নেই। কারণ সেটা নিছক একটা দুর্ঘটনা। আগামী দিনে যাতে সকলে হাতি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখেন, সেটা দেখা হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)