Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

দুর্ভোগ অব্যাহত, আরও ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা উত্তরে

বৃষ্টি চলছেই, দুর্ভোগও অব্যাহত। গত কয়েক দিনের থেকে আরও অবনতি হল উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতির। রবিবার সকাল থেকে তিস্তা, তোর্সা নদীতে লাল সর্তকতা জারি হয়েছে। ময়নাগুড়ি এবং মালবাজারে তিস্তার বাঁধের কয়েক মিটার ভেঙে হু হু করে জল ঢুকছে গ্রামে।

এরকই অবস্থা উত্তরবঙ্গে। —নিজস্ব চিত্র।

এরকই অবস্থা উত্তরবঙ্গে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬ ০১:৩৬
Share: Save:

বৃষ্টি চলছেই, দুর্ভোগও অব্যাহত। গত কয়েক দিনের থেকে আরও অবনতি হল উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতির। রবিবার সকাল থেকে তিস্তা, তোর্সা নদীতে লাল সর্তকতা জারি হয়েছে। ময়নাগুড়ি এবং মালবাজারে তিস্তার বাঁধের কয়েক মিটার ভেঙে হু হু করে জল ঢুকছে গ্রামে। দাবি, কোচবিহারের সীমান্ত এলাকায় বাসিন্দাদের গরু ভেসে গিয়েছে বাংলাদেশে। টানা বৃষ্টিতে রেল লাইনের পাশের মাটি ধসে ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে শিলিগুড়িতে। নদীগুলিতে জল বাড়ায় আশঙ্কা বেড়েছে রেল সেতুগুলি নিয়ে। শিলিগুড়িতে ভরা মহানন্দায় স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে গিয়েছেন এক তরুণ। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে ফুলহার নদী। বিভিন্ন জেলায় জল-দুর্গতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় চল্লিশ হাজার। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

আলিপুরদুয়ার

যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে কালজানি নদীর বাঁধ। সে আশঙ্কায় রাত জাগছেন আলিপুরদুয়ারের দক্ষিণ পাটকাপাড়া এলাকার বালুবাড়ির বাসিন্দারা। শিশু কোলে রাত জাগছেন মায়েরা। দুই নদীর উপচে জলবন্দি কয়েকশো পরিবার। জেলা প্রশাসনের তরফে বেশ কিছু পরিবারকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে রবিবার সকালে। জয়গাঁ, শালকুমার হাটের নতুন পাড়া, দক্ষিণ মেন্দাবাড়ি, আলিপুরদুয়ার শহর সংলগ্ন বীরপাড়া এলাকায় জলবন্দি কয়েক হাজার বাসিন্দা। দক্ষিণ পাটকাপাড়ার উত্তর পাকুড়িতলা গ্রামে কালজানি নদীতে প্রায় ২০০ মিটার মাটির বাঁধ রয়েছে। বাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীর জল গ্রামে ঢুকছে। জলে তলিয়ে গিয়েছে কৃষি জমিও। রবিবার দুপুর থেকে ফের জল বাড়তে শুরু করেছে সব নদীতেই। তোর্সার জল আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকের সিসামারা নদী দিয়ে ঢুকে নতুনপাড়া এলাকায় জলবন্দি কয়েকশো পরিবার।

জলপাইগুড়ি

জেলার ৭টি ব্লকের ১২৮টি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের হিসেবেই বন্যা দুর্গতদের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে। সরকারি ভাবে এখনও পর্যন্ত চারটি লঙ্গরখানা খোলা হয়েছে। পাহাড়ে প্রবল বৃষ্টি ও ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ায় নদীগুলির জল বেড়েই চলেছে। এদিন সকালে দোহমনিতে তিস্তা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সতর্কতা জারি হয়েছে। করলার জলে দিনবাজারের একাংশ সহ জলপাইগুড়ি পুর এলাকার কিছু জায়গা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে৷ ধূপগুড়ি, বানারহাট, ময়নাগুড়ি, রাজগঞ্জ, মালবাজারের বেশ কিছু এলাকা এদিন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে৷ ময়নাগুড়ির আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে রয়েছে৷ বার্নিশ ও উত্তর পদমতিতে তিস্তা নদীর ভাঙন অব্যাহত৷ সাহু নদীর জলে ডাবগ্রাম ও বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু এলাকা নতুন করে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে৷ মালবাজার মহকুমার তিন ব্লক নাগরাকাটা , মেটেলি এবং মালবাজার সর্বত্রই বানভাসি অবস্থায় জেরবার হতে হয়েছে কমপক্ষে ২০ হাজার বাসিন্দাকে। নাগরাকাটা ব্লকের শুল্কাপাড়া, আংরাভাষা ১ এবং ২, লুকসান গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ত এবং গ্রামীণ সড়ক মিলিয়ে ১০টিরও বেশি ছোট কালভার্ট জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে। লুকসান, শুল্কাপাড়ায় একশো বিঘারও বেশি কৃষিজমি জলের তলায় যেমন চলে গিয়েছে, তেমনই পাঁচশোরও বেশি পরিবারও জলবন্দি হয়ে পড়েন। মেটেলির ছাওয়াফুলি গ্রামের ৫০ পরিবারকে উদ্ধার করেছে প্রশাসন। মালবাজারের ধরলা নদীর পাড়ে থাকা ক্রান্তি গ্রাম পঞ্চায়েতের ধনতলা বাজারে নদীর জল ঢুকে পড়ে। ধরলার ৫০ মিটার মাটির বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। বিপর্যস্ত ডুয়ার্সের বানারহাট ও বিন্নাগুড়ি। দুই এলাকায় হাতিনালার জল উঠে প্রায় দুই হাজার পরিবার ঘর ছাড়া। দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত কোন ত্রাণ না পেয়ে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। ধূপগুড়ির গধেয়ারকুঠির কুর্শামারি ও বারঘরিয়া গ্রামেও প্লাবিত প্রায় শ’খানেক পরিবার।

কোচবিহার

এমন অবস্থা যে এ দিন সোমবার জেলার সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিন প্রশাসন। কারও গরু ভেসে গিয়েছে বাংলাদেশে। জলের তোড়ে বাড়ি ভেঙে পড়েছে কারও। কেউ আশ্রয়ের খোঁজে নৌকায় চেপে পাড়ি দিয়েছেন খানিকটা উঁচু জায়গায়। কোচবিহারের দিনহাটার বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের প্রায় বারো হাজার মানুষ জলমগ্ন হয়ে পড়েছেন। জারি ধরলা, দরিবসের মতো দুটি গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষ মূল ভূখন্ড থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তাঁদের পারাপারের একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা। নদীতে জল বেড়ে যাওয়ায় তাও বন্ধ হয়েছে গিয়েছে। এখন বিএসএফ ও প্রশাসনের স্পিড বোট ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে একটি নৌকা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শনিবার থেকে এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করলেও প্রশাসনের তরফে কোনও সাহায্য করা হয়নি। এমনকি শুকনো খাবার পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। দিনহাটার মহকুমাশাসক কৃষ্ণাভ ঘোষ বলেন, “শুকনো খাবার, ত্রিপল বিলির কাজ শুরু করা হয়েছে।” ধরলা নদীর জল অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় ভয়াবহ বিপদের মুখে পড়েছেন তাঁরা। বাঁধের কুঠির বাসিন্দা আসরাফুল মিয়াঁ, নুর ইসলা এ দিন দুপুরে নৌকায় জিনিসপত্র চাপিয়ে উঁচু জায়গার খোঁজে বের হন।

মালদহ

মালদহে বিপদসীমা ছাড়াল ফুলহার। রবিবার ফুলহার নদীর জলস্তর বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। আতঙ্কিত হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ার বাসিন্দারা। ফুলহারের জলে প্লাবিত হয়েছে দুটি ব্লকের ১৬টি এলাকা। শনিবার রাত থেকেই ফুলহারের জলে জলবন্দি হয়ে পড়েছেন পঁচিশ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা। ডুবে গিয়েছে খেতের ফসল। প্রবল জলের তোড়ে নদী বাঁধের একাধিক জায়গায় ফাটল তৈরি হচ্ছে। মালদহে দু’দিন বৃষ্টি না হলেও উত্তরবঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাত চলছে। তার প্রভাব পড়েছে ফুলহারেও। উত্তরবঙ্গের একাধিক নদীর জল ফুলহার হয়ে গঙ্গায় মেশে। গঙ্গার জলস্তরও বেড়ে গিয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

warning river rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE