কোচবিহারে খাঁ খাঁ করছে চৈত্র সেলের বাজার।—নিজস্ব চিত্র
চৈত্র মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পেরোতে চলছে। অথচ কোচবিহারে এখনও জমেনি চৈত্র সেলের বাজার। জেলা সদর কোচবিহার থেকে মহকুমা সদর দিনহাটা, তুফানগঞ্জ কিংবা মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জ সর্বত্র এক ছবি। ফি বছর যেখানে চৈত্রের শুরু থেকেই গ্রামগঞ্জের ক্রেতাদের ভিড় উপচে পড়ে। ছাড়ের সুযোগে কেনাকাটার হিড়িক দেখা যায়। অথচ এবার প্রায় সুনসান দোকান-বাজার। ব্যবসায়ীদের অনুমান, বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার থেকে নানা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গ্রামগঞ্জের বাসিন্দাদের একাংশ রীতিমতো ব্যস্ত। যাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন, তাঁরাও এই ভোটের আবহে সহজে ঘর থেকে বেরিয়ে দূরে যেতে চাইছেন না। পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে নিয়ে বাজার মুখো হওয়া তো অনেক দূরের কথা।
আর ওই পরিস্থিতিতেই ব্যবসা জমছে না। স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বেগ বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। বাকি দিনগুলিতে ব্যবসা না জমলে লোকসানের আশঙ্কাও বেড়েছে।
কোচবিহার জেলা বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম কুন্ডু বলেন, “এ বার চৈত্র সেলের বাজার এখনও জমেনি। গ্রামগঞ্জের বাসিন্দাদের অনেকেই নির্বাচনের আবহাওয়ায় নানা ভাবে জড়িয়ে থাকায়, শহরের দোকানগুলিতে তেমন ভিড় নেই। তার উপর কয়েকদিন সন্ধ্যার ঝড়বৃষ্টিতে ব্যবসা পণ্ড হয়েছে। চিন্তা বাড়ছে।” দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী বলেন, “আলু, পাটের মতো কৃষিপণ্যের দাম বেশি থাকায় কৃষকদের হাতে পয়সা রয়েছে বলে চৈত্র সেলের বাজারে ভাল ব্যবসার আশা ছিল। অনেক ব্যবসায়ী সেলের জন্য প্রচুর জামাকাপড় নতুন করে অর্ডার করিয়ে আমদানি করেছেন। কিন্তু বাজারে সে ভাবে ক্রেতাই নেই।”
ব্যবসায়ী সংগঠন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেলা সদরের ভবানীগঞ্জ বাজার থেকে নতুন বাজার, দেশবন্ধু মার্কেট, একাধিক শপিং মল, মার্কেট কমপ্লেক্স মিলিয়ে ছোট বড় পাঁচ শতাধিক জামাকাপড়ের দোকান রয়েছে। তুফানগঞ্জ, দিনহাটা, মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জ মহকুমা সদর মিলিয়ে ওই দোকানের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। এ বার কৃষকের হাতে আলু, পাটের ভাল দাম যাওয়ায় সকলেই জমজমাট ব্যবসার আশা করেছিলেন। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন দোকানে পাঁচ থেকে পঞ্চাশ শতাংশ পর্যন্ত দাম ছাড়ের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চৈত্র সেলের ব্যবসা শুরু হয়। কোথাও আবার একটি নির্দিষ্ট পোশাকের সঙ্গে আর একটি পোশাক ‘ফ্রি’ দেওয়া হচ্ছে। ছাড় দেওয়া হচ্ছে জুতোর দোকানেও। কিন্তু কোন দাওয়াইয়েই লাভ হচ্ছে না। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, শহরের ক্রেতাদের বড় অংশ চাকরিজীবী। এখনও মার্চের বেতন না হওয়ায় তাঁদের অনেকে বাজারমুখো হননি। যারা বাজারে আসবেন বলে ভাবছিলেন গত বৃহস্পতিবার থেকে সন্ধ্যার ঝড়বৃষ্টির জেরে তারাও ঝুঁকি নিচ্ছেন না। ভোটের জন্য গ্রামের ক্রেতারাও নেই।
বৃষ্টি ও ভোট উন্মাদনার ওই প্রভাব পড়েছে তুফানগঞ্জের দোলমেলাতেও। ২২ মার্চ মেলা শুরুর পর এক সপ্তাহ পেরোলেও তেমন ভিড় হচ্ছে না। বিকিকিনিও নেই। মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি তুফানগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান অনন্ত বর্মা অবশ্য বলেন, “কয়েক দিন ঝড়বৃষ্টির জন্য মেলা জমেনি। তবে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত মেলা রয়েছে। আশা করছি মেলা জমজমাট হবে।” তুফানগঞ্জেরই অন্দরান ফুলবাড়ি এলাকার এক বাসিন্দা ভবেশ দাস অবশ্য বলেন, “যাব কী করে! রোজ সন্ধ্যায় হয় ভোট প্রচার কিংবা ঘরোয়া মিটিং থাকছে। ঝড়বৃষ্টি না হলেও চৈত্র সেলের বাজার কিংবা মেলা ঘোরার ফুরসত এখন নেই।” অন্য এক বাসিন্দা দেবা বর্মন বলেন, চৈত্র সেলের কেনাকাটা এখনও হয়নি। ভোটের আগে গোলমালের আশঙ্কা থাকায় পরিবারের লোকদের বাজারে পাঠানোর ঝুঁকি নিচ্ছি না। কখন গোলমাল হয় কে জানে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy