ভাঙচুর: এই অটোতেই হামলা হয় রায়গঞ্জের পূর্ব কলেজপাড়ায়। ছবি: গৌর আচার্ষ
‘তিন দিন ধরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রেখে লাভ কী হল?’— বুধবার দুপুরে রায়গঞ্জের পূর্ব কলেজপাড়ায় হামলার অভিযোগের পরে এমনই প্রশ্ন উঠছে উত্তর দিনাজপুরে।
নতুন নাগরিকত্ব আইন ঘিরে উত্তাপ ছড়িয়েছে জেলার বিবইন্ন প্রান্তে। এমন পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো রুখতে রবিবার বিকেল থেকে ব্রডব্যান্ড ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল প্রশাসন। প্রথমে ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করা হয় ইন্টারনেট। মঙ্গলবার বিকেল ৪টেয় সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার পরেও আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কার কথা বলে আরও বন্ধের সময় আরও ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বুধবার বিকেলে সেই সময়ও শেষ হয়। জেলাবাসীর একাংশের বক্তব্য, এত কড়াকড়ির পরেও এ দিন পূর্ব কলেজপাড়ায় ঝামেলায় ৬ জন জখম হলেন। তাতে প্রশাসনের ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠল। স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন বিকেলে ইন্টারনেট কিছুক্ষণের জন্য সচল হলেও প্রশাসনের তরফে ফের বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত তা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা বলেন, ‘‘অশান্তি রুখতে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল। তার পরেও এমন ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। সবাইকে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার দিকে নজর দিতে হবে। গুজবে কান দেবেন না।’’
কিন্তু তিন দিন ধরে ইন্টারনেট বন্ধের জেরে জেলার বাসিন্দাদের দুর্ভোগই শুধু বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসায়ী সংগঠনের বক্তব্য, তাতে লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতিও হয়েছে। পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অফ কর্মাসের সম্পাদক জয়ন্ত সোমের মন্তব্য, ‘‘অশান্তি এড়াতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে প্রশাসন। এটা ভাল সিদ্ধান্ত। কিন্তু তিন দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকার পরেও এ দিন ঝামেলা হল। এটা পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যর্থতা। তাঁদের উদ্দেশ্যই তো এতে সফল হল না।’’
এ নিয়ে রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার সুমিত কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘এ দিনের হামলা পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে। গোপনে তার ছক তৈরি করা হয়। পুলিশ তা জানতে পারেনি। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ থাকা জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। এ দিনের ঘটনা বিক্ষিপ্ত।’’
উত্তর দিনাজপুর বাস ও মিনিবাস ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশেনের সম্পাদক প্লাবন প্রামাণিক অবশ্য অভিযোগ করে বলেন, ‘‘পুলিশের যুক্তি সঠিক নয়। গত তিন দিনে আটটি বেসরকারি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। একটি সরকারি বাসে আগুন লাগানো হয়। চালক ও কন্ডাক্টরেরা ভয়ে বাস চালাতে চাইছেন না। যাত্রীরা গন্তব্যে যাওয়ার বাস না পেয়ে পুর-বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বাসমালিকদের উপরে চড়াও হওয়ার চেষ্টা করছেন।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘ইন্টারনেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত তা হলে তো ব্যর্থই হল।’’
রায়গঞ্জের একটি হাইস্কুলের শিক্ষক মৃণালকান্তি সিংহ বলেন, ‘‘ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় গত কয়েক দিন ধরে দুর্ভোগে পড়েছেন জেলাবাসী।’’ তিনি জানান, অনলাইনে এখন অনেক কিছু কাজ করা যায়। বাড়িতে খাবারও আনতে ভরসা কখনও কখনও অনলাইনই। কিন্তু ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় তাতেও অসুবিধা হয়েছে। সমস্যা হয়েছে স্কুল সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য উপরমহলে পাঠানোর ক্ষেত্রেও। তিনি জানান, তার মধ্যে রয়েছে মিড-ডে মিল সংক্রান্ত তথ্যও।
রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী সংগঠনের সভাপতি প্রশান্ত মল্লিক বলেন, ‘‘ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে গত তিন দিন ধরে সিটি স্ক্যান-সহ রোগীদের বিভিন্ন শারিরীক পরীক্ষার সংক্রান্ত রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের অন-লাইনে পাঠানো যাচ্ছে না।’’ তিনি আরও জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন-লাইনে বিভিন্ন ওযুধ কেনার বরাত দিয়ে থাকেন। সেই কাজও গত কয়েক দিন ধরে থমকে রয়েছে।
রায়গঞ্জের সুদর্শনপুর এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার তপন পাল বলেন, ‘‘অনেক সময়ে কেউ কেউ এটিএম কার্ডের মাধ্যমেও তেল কেনেন। অনেকের কাছে নগদ টাকা থাকে না। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় গত কয়েক দিন ধরে কার্ডের মাধ্যমে পেট্রোল, ডিজেল কিনতে
পারছেন না ক্রেতারা। এতে ব্যবসার ক্ষতির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগও হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy