শিখা ও বীরেশ। নিজস্ব চিত্র
সাদামাঠা মধ্যবিত্ত বাঙালি দাম্পত্য জীবন বৃত্তের এ যেন এক ব্যতিক্রমী ছবি। নিজের ‘কিডনি’ উপহার দিয়ে অসুস্থ স্বামীকে বাঁচিয়ে রাখার নজির যে খুব বেশি নেই। কোচবিহারের বাসিন্দা এক গৃহবধূ শিখা পাল স্বামীর জন্য এমনই এক ব্যাতিক্রমী ভালবাসার উদাহরণ গড়েছেন। নিজের মনের জোরকে সম্বল করে চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রিয় জনের পাশে দাঁড়ান। কোচবিহারের গুঞ্জবাড়ি এলাকার বাসিন্দা শিখাদেবীর কথা এলাকার অনেকের মুখেই বছরভর ঘোরে। ‘ভালবাসা দিবসের’ বিশেষ দিনের মুখে ওই উদাহরণ আরও বেশি করে চর্চা হয়।
অবশ্য এ সব নিয়ে ভাবতে চান না শিখাদেবী। স্বামী বীরেশ পালের পাশে বসে শিখা বলেন, “ওঁর বেঁচে থাকাটাই আমার কাছে সব পাওয়া। দারুণ আনন্দের। অন্য কিছু নয়।” বীরেশবাবু বলেন, “ওঁর প্রতি বিশ্বাস ছিল। ভালবাসা ছিল। আছে, থাকবেও। সেটাই তো সব কিছু।” পারস্পরিক বিশ্বাস, ভরসা আর ভালবাসার ওই জোরেই যেন দু’জনের যেন দুজনের জন্য নিখাদ টান। কিডনি প্রতিস্থাপনের সাতটা বছর পেরিয়েও যা পুরোপুরি এক রকম রয়ে গিয়েছে।
পরিবারের লোকেরা জানান, ২০১২ সালের ২৭ জানুয়ারি দিনটা তবু দু’জনের কাছেই আলাদা। যে দিনটার কথা মনে পড়লে এখনও আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন এই দম্পতি। কলকাতার একটি নার্সিংহোমে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। শিখা দেবী বলছিলেন, “জানেন শুরুতে পরিচিতদের কেউ কেউ বলতেন আগেভাগে একমাত্র মেয়ের বিয়েটা সেরে ফেলতে। আমি মনের জোরকে সম্বল করে বলেছিলাম আগে ওঁকে সুস্থ করে তুলব। সেটাই করেছি। দুজনে দাঁড়িয়ে থেকে অনেক দিন পেরোনর পরে আমাদের একমাত্র মেয়ের বিয়েও দিয়েছি।” অথচ এমন লড়াই, চ্যালেঞ্জের কিন্তু ছিল না পরিবারে। আচমকাই শারীরিক অসুস্থতার চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রথম বীরেশবাবুর দু’টি কিডনি বিকলের কথা জানতে পারেন পরিজনেরা। শুরুতে ‘ডোনার’ জোগারের চেষ্টাও করেন। তাতে অবশ্য শেষপর্যন্ত কাজ হয়নি। কিন্তু স্বামীকে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টার ওই লড়াইয়ে এতটুকুও হাল ছাড়তে চাননি শিখা দেবী।
প্রতিবেশী থেকে পরিচিতরা ওই লড়াইকে কুর্নিশ করেন। এলাকার বাসিন্দা রাজা বৈদ বলেন, “আমরা প্রথমে ওই ঘটনা জানতাম না। এমন আত্মত্যাগের উদাহরণ হোক ভালবাসা দিবসের শপথ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy