ভাঙচুর, জাতীয় সড়ক অবরোধ ও দফায় দফায় বিক্ষোভ। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার প্রকাশিত ফল বাতিল করে নতুন করে তা প্রকাশের দাবিতে পড়ুয়াদের এমনই আন্দোলন কর্মসূচিতে সোমবার উত্তাল হল গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। পড়ুয়াদের দাবি, প্রকাশিত ফলে অনেক ভুল রয়েছে।
সেই দাবি নিয়ে পড়ুয়ারা একবার পরীক্ষা নিয়ামকের ঘরে, কখনও উপাচার্যের ঘরের সামনে গেলেও তাঁদের কাউকেই পাননি। তাতে ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত পড়ুয়াদের আন্দোলন চলে।
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত ২৫টি কলেজে ২১ জুন স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের ও ১০ অগস্ট দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়। তার ফল প্রকাশ হয়েছে ১০৫ দিন পরে। তা নিয়ে এমনিতেই ক্ষোভ ছিল। পাশাপাশি, এ বার অনার্স ও পাশ বিভাগে পাশের হারও কমেছে। অনেক পড়ুয়ার দাবি, যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন এক বিষয়ে অথচ নম্বর দেওয়া হয়েছে অন্য বিষয়ে। যে বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন, সে বিষয়ে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে বলেও দাবি। অভিযোগ, বাংলা আবশ্যিক বিষয়ে বেশিরভাগ কলেজের পড়ুয়াকেই গড়ে ১৭ নম্বর করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি একাধিক বিষয়ে অসংখ্য পড়ুয়াকে শূন্য নম্বর দেওয়া হয়েছে। এমন ‘ভুলে ভরা’ ফলাফল কেন প্রকাশ করা হল, সেই অভিযোগ তুলে গত ২৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক শ্যামাপদ মণ্ডলকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন পড়ুয়ারা। কিন্তু তারপরও সমস্যা না মেটায় এ দিন ফের দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখায় কয়েকশো পড়ুয়া।
এ দিন বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ামকের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পড়ুয়ারা। সে সময় ছাত্রীদের সংখ্যাই ছিল বেশি। নিয়ামককে না পেয়ে তাঁরা চলে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দোতলায় থাকা উপাচার্যের চেম্বারের দিকে। সেখানে গেটে ভিতর দিক থেকে তালা দেওয়া থাকায় তারা করিডরেই বসে বিক্ষোভ দেখায়। বেলা বাড়লে পড়ুয়ার সংখ্যাও বাড়ে। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটের বাইরে দিয়ে যাওয়া ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে যায় যান চলাচল, বেধে যায় ব্যাপক যানজট। যানবাহনের লাইন পড়ে যায় ইংরেজবাজার শহরের প্রাণকেন্দ্র রথবাড়ি ছাড়িয়ে মহানন্দা সেতু পর্যন্ত, অপরদিকে সুস্থানি মোড় পর্যন্ত। পরে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ গিয়ে বেলা দেড়টা নাগাদ অবরোধ তুলে দিলে পড়ুয়ারা ফের প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে উপাচার্যের চেম্বারে ঢোকার করিডরে বসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে।
অভিযোগ, সে সময় একদল পড়ুয়া প্রশাসনিক ভবনে ঢোকার গেটের কাচ ভাঙচুর করে। চেয়ার উল্টে ফেলে। এ সব সত্ত্বেও বিক্ষোভ চলছিল। বিকেলের দিকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি প্রসূন রায় সেখানে এসে পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের ফেরত পাঠান। প্রসূনবাবু বলেন, এদিন সাধারণ পড়ুয়ারা এসে বিক্ষোভ দেখায়। সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্তের নির্দেশে তিনি গিয়ে পড়ুয়াদের সামাল দেন। তাঁর কথায়, ‘‘আন্দোলনে শামিল পড়ুয়াদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভুলেভরা ফলাফল প্রকাশ করে ছাত্রছাত্রীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, অথচ সেই ছাত্রছাত্রীদের কথা শোনার মতো কেউই এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।’’ পরীক্ষা নিয়ামক শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমি কাজে বাইরে রয়েছি। ফল নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে সে ব্যাপারে নয়া উপাচার্য়ের সঙ্গে কথা বলেছি। উপাচার্য বাইরে রয়েছেন, তিনি ফিরলে তা নিয়ে বসা হবে। পড়ুয়াদের বিষয় নিশ্চয়ই দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy