Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

মাকে পাশে নিয়ে লড়াই

রাখী দেবী জানান, দু’বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তাঁর স্বামী নেপালবাবু। গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে নির্মাণ সহায়কের চাকরি করতেন তিনি। সেই থেকে ছেলেদের সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর উপর। দুই ছেলে রাখীদেবীর। কৌশিক আর ডেভিড। ডেভিড নবম শ্রেণির পড়ুয়া।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৭ ০২:৪৪
Share: Save:

কখনও রান্নাঘর, কখনও বারান্দা। মা যখন যে ঘরে থাকতেন সেটাই হয়ে উঠত তার পড়ার ঘর। তাই প়ড়ার টেবিলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছেলের পাশে বসে থাকতে হত মাকে। মা চোখের আড়াল হলেই পড়াশোনা থেকে মন উড়ে যেত। মা বুঝতে পারতেন সব। তাই তো বাড়ি থেকে বের হওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলেন এক রকম। সারাদিন ছেলেকে নিয়েই কেটে যেত তাঁর সময়। মঙ্গলবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরে সেই ছেলেই রাজ্যে অষ্টম স্থান অধিকার করে সাড়া ফেলে দিয়েছে। ছেলের নাম কৌশিক দাস। মা রাখী দাস।

রাখী দেবী জানান, দু’বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তাঁর স্বামী নেপালবাবু। গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে নির্মাণ সহায়কের চাকরি করতেন তিনি। সেই থেকে ছেলেদের সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর উপর। দুই ছেলে রাখীদেবীর। কৌশিক আর ডেভিড। ডেভিড নবম শ্রেণির পড়ুয়া।

রাখী দেবী বলেন, “দুই ছেলেকে নিয়ে আমার সময় কাটে। আমার মা সংসারের কাজে অনেক সাহায্য করেন। আর আমি ছেলেদের মানুষ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আজ ওঁর বাবা নেই। থাকলে কত যে খুশি হতেন।” বলতে বলতে দুই চোখ বেয়ে নামে জলের ধারা। মায়ের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা কৌশিকের চোখেও উপচে নামে জল।

সে জানায়, ২০১৩ সালে যখন সে দশম শ্রেণিতে সেই সময় দুর্ঘটনায় মারা যান তার বাবা। কৌশিকের কথায়, “মা না থাকলে কিছু হত না। মা তো সব সময় গাইড করেন।” তাঁর দিদা কনকরাণী সরকার বলেন, “কী যে ভাল লাগছে আজ বলে বোঝাতে পারব না।”

কোচবিহারের ডোডেয়ারহাটের বাসিন্দা রাখীদেবীরা। স্বামী মারা যাওয়ার পর কিছু টাকাপয়সা পেয়েছিলেন। তা পোস্টঅফিসে রেখেছেন। আর পেনশনের হাজার দশেক টাকাই ভরসা তাঁর। তিনি বলেন, “একটা চাকরি হলে খুব ভাল হত।” এ দিন সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে কোচবিহারের সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় কৌশিক ও তাঁর মাকে শুভেচ্ছা জানান। তাঁদের পাশে থাকারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। কৌশিকের প্রাপ্ত নম্বর ৪৮২। ইংরেজিতে ৯০, বাংলায় ৯৩, পদার্থবিদ্যায় ৯৮, রসায়নে ৯৫, জীবনবিজ্ঞানে ৯৬ এবং অঙ্কে ১০০ নম্বর পেয়েছে কোচবিহার রামভোলা হাইস্কুলের এই ছাত্র।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE