এসজেডিএ-র দুর্নীতির পর এবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠল। গত শুক্রবার বিকালে দফতরের দুই অস্থায়ী কর্মীকে গ্রেফতারের পর ওই ঘটনা সামনে এসেছে। গত বুধবার টেন্ডার পেপার বিলি করা নিয়ে লক্ষাধিক টাকার দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসার পর দফতরের সহ সচিব দীপঙ্কর পিপলাই প্রধাননগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তদের ধরার পরেই ওই ঘটনায় আরও কারও গাফিলতি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে দফতরের মধ্যে। এমনকি, দুই অস্থায়ী কর্মী দিনের পর দিন দুর্নীতি করে গেলেও তা অফিসারদের কী করে নজর এড়িয়ে গেল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘বিষয়টি জানার পর আধিকারিকদের পুলিশে অভিযোগ করতে বলেছি। বর্তমানে ই-টেন্ডার পদ্ধতিতে কাজ হয়। শুরুতে এক দেড় বছর টেন্ডার পেপার দফতর থেকে বিক্রি হত। সে সময় ওই দুই কর্মী টেন্ডার পেপার বিক্রির টাকা জমা করেননি বলে আধিকারিকদের নজরে আসে।’’
মন্ত্রীর দাবি, ‘‘এর সঙ্গে টেন্ডার দুর্নীতি বা দফতরের কোনও প্রকল্পের কাজে আর্থিক দুর্নীতির ব্যাপার নেই। স্বচ্ছতার সঙ্গেই সমস্ত কিছু করা হয়।’’ ঘটনার নিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিতে আজ, সোমবার দফতরে গিয়ে আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও মন্ত্রী জানিয়েছেন। দফতরের তরফেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে দফতর সূত্রের খবর।
গত ২০১৩ সালে এসজেডিএতে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি সামনে আসে। নানা প্রকল্পের কাজ না করিয়েই ঠিকাদারদের মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের উদ্যোগেই বিষয়টি সামনে আসে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধাযের নির্দেশে পুলিশে একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়। সংস্থার একাধিক বাস্তুকার, প্রাক্তন মুখ্য কার্যনিবার্হী আধিকারিক-সহ একাধিক ঠিকাদের গ্রেফতার হন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় শিলিগুড়ির বিধায়ক, রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যকে। নতুন চেয়ারম্যান হন গৌতমবাবুই। মামলাটি এখন আদালতের বিচারাধীন।
এই অবস্থায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে দুর্নীতি অভিযোগ ওঠায় আসরে নেমে পড়েছেন বিরোধীরা। জেলা বিজেপির সভাপতি রথীন বসু মন্ত্রী গৌতমবাবুর পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত বলেই মনে করেন। তিনি বলেন, ‘‘নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার। আর তার জন্য গৌতমবাবুর পদ থেকে সরে দাঁড়ানো দরকার। এসজেডিএ-তে তো তাই হয়েছিল।’’ আবার জেলা কংগ্রেসের সভাপতি তথা বিধায়ক শঙ্কর মালাকার বলেন, ‘‘শুরু থেকেই দুর্নীতি হচ্ছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে। নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই স্পষ্ট হবে।’’ একইভাবে শহরের মেয়র তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘এসজেডিএ দুর্নীতি সামনে আসতেই তো চেয়ারম্যানকে সরানো হয়েছিল। এক্ষেত্রে গৌতমবাবুকে সরবেন কি না তা তো ওঁকেই ঠিক করতে হবে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১১ সালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর চালুর সময় থেকে বছর দেড়েক অভিযুক্ত দুই কর্মী টেন্ডার পেপার বিক্রির টাকা ট্রেজারিতে জমা করেননি বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত ওই দুই কর্মী অলক মিঞ্জ ও রঞ্জন রাউত কিছু নথিপত্র জাল করেছেন সন্দেহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী সুদীপ রায় বসুনিয়া।
ধৃতরা বর্তমানে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে আছেন। সম্প্রতি দফতরের অডিটের সময় গোলমাল নজরে পড়ে। ওই দুই কর্মীকে ডেকে পাঠানো হয়। গত শুক্রবার তারা হিসাব দিতে না পারলে দুইজনকে পুলিশ ধরে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘ওই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কিছু টেন্ডার ফর্ম ও ক্যাশমেমো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’
পুলিশ এবং দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত রঞ্জন ও অলকের বাড়ি জলপাইগুড়িতে। ২০০৬ সাল থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদে লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক হিসাবে ১ বছরের চুক্তির মেয়াদে তারা কাজ করে আসছেন। ২০১১ সালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর চালু হলে তার অধীনে কাজ করছিলেন। নিয়ম মত সমস্ত টাকা ক্যাশিয়ারকে জমা দেওয়ার কথা। তা ছাড়া সার্বিক ভাবে বিষয়টি দেখার কথা ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্সমেন্ট অফিসার (ডিডিও)-এর। সহসচিব দীপঙ্করবাবু ওই দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি অবশ্য এখনই এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy